ছবি এএফপি।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। ‘পরীক্ষা পে চর্চা’র মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে উদ্বিগ্ন মায়ের প্রশ্ন ছিল, “ছেলে সারাক্ষণ মোবাইল-গেমে বুঁদ। কী করণীয়?” এক মুখ হেসে নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা জিজ্ঞাসা, “পাবজি হ্যায় কেয়া?” বুধবার সেই পাবজি-সহ ১১৮টি অ্যাপকে (মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন) নিষিদ্ধ ঘোষণা করল কেন্দ্র। যার অধিকাংশের সঙ্গেই সম্পর্ক চিনের। ফলে, লাদাখে চিনা সেনার আস্ফালনের জবাব দিতে দিল্লি আরও এক বার মোবাইলের পর্দায় তাদের দখল কমানোর পথে হাঁটল বলে ধারণা অনেকের।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ ধারায় ওই ১১৮টি অ্যাপকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, ভারতের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিল তারা। বিঘ্নিত হচ্ছিল গ্রাহকদের তথ্য-সুরক্ষা। মন্ত্রকের দাবি, বিভিন্ন সূত্রে জমা পড়া অভিযোগে স্পষ্ট, এ দেশের গ্রাহকদের থেকে নেওয়া তথ্য (ডেটা) ওই অ্যাপগুলি বেআইনি ভাবে জমা করছিল ভিন্ দেশের সার্ভারে। যা থেকে সম্ভাবনা দেশের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়ার। পাবজি ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে আলি-পে, এপিইউএস টার্বো ক্লিনার, বাইডু, ক্যাম কার্ড, সুপার ক্লিন, ফোটো গ্যালারি অ্যান্ড অ্যালবাম, লুডো অল স্টার ইত্যাদি।
জুনে লাদাখ সীমান্তে চিনা সেনার আগ্রাসনের সময়ে এই ‘তথ্য সরানোর’ অভিযোগেই টিকটক-সহ ৫৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল মোদী সরকার। তখনও বলা হয়েছিল, ভারতের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে তারা। এর পরে জুলাইয়ে ফের ৪৭টি অ্যাপ বাতিলের পথে হেঁটেছিল কেন্দ্র। বাতিলের ঘোষণায় দিল্লি কোনও বারই চিন-সহ কোনও দেশের নাম বলেনি। কিন্তু আগের দু’বার এবং এ দফার ১১৮টি অ্যাপের তালিকাতেও চিনা অ্যাপেরই ছড়াছড়ি।
আরও পড়ুন: লাদাখে এলাকা দখল ঘিরে জল্পনা, সেনা-সজ্জায় বদল, পাল্টা তৎপর চিনও
সদ্য নিষিদ্ধ হওয়া অ্যাপগুলির সদর পড়শি মুলুকে, নয়তো সেখানে মোটা লগ্নি রয়েছে চিনা সংস্থার। যেমন, টিকটক, ইউসি ব্রাউজার, উই চ্যাটের মালিকানা যথাক্রমে বাইটড্যান্স, আলিবাবা এবং টেনসেন্টের কব্জায়। তিনটিই প্রথম সারির চিনা তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিক। এ বারের তালিকাতেও বেশির ভাগ নাম তেমনই। যেমন, পাবজির মালিকানা দক্ষিণ কোরীয় ভিডিয়ো গেম সংস্থা ব্লুহোলের হাতে। কিন্তু সেখানে বিপুল বিনিয়োগ এবং দাপুটে অংশীদারি আছে টেনসেন্টের। পেমেন্ট অ্যাপ আলি পে-র মালিকানা আলিবাবার।
অনেকে বলছেন, পাবজি, লুডো অল স্টারের মতো মোবাইল গেমের নেশায় যাবতীয় তথ্য দিয়ে দিতে পিছপা হন না অনেক ব্যবহারকারী। বাইডুর মতো সার্চ ইঞ্জিনে ধরা থাকে ব্যবহারকারীর যাবতীয় খুঁটিনাটি। ক্যাম-কার্ড মূলত বিজনেস কার্ড স্ক্যানিংয়ের অ্যাপ হওয়ায় বহু জনের ফোন, ই-মেল পেতে পারে। তেমনই কার্যত পুরো মোবাইল ঘেঁটে দেখার ‘স্বাধীনতা’ পায় সুপার ক্লিনের মতো ফোন-মেমরি পরিষ্কারের অ্যাপ। তাই চিনের সঙ্গে সম্পর্ক বিষিয়ে যাওয়ার পরে এই সমস্ত অ্যাপে গ্রাহকের তথ্য বাইরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নয় কেন্দ্র।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গুগল, অ্যাপলের মতো যে সমস্ত সংস্থার ভাঁড়ার থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা হয়, তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে ভারতে নতুন করে এই সমস্ত অ্যাপ ডাউনলোডের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। আর মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলিকে বলা হবে তাদের জন্য ইন্টারনেট না-জোগাতে।
প্রথম দফায় অ্যাপ বাতিলের ঘোষণা করার পর থেকেই তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ডাক দিয়েছেন উদ্ভাবনী অ্যাপ তৈরির। এ দিনও ভারত-মার্কিন কৌশলগত সহযোগিতা মঞ্চ আয়োজিত ভিডিয়ো-সাক্ষাৎকারে ১১৮টি অ্যাপ বাতিলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে দাবি করেছেন, “এই দেশে সব থেকে বেশি অ্যাপ ডাউনলোড হয়। সময় এসেছে এখান থেকে সবচেয়ে বেশি অ্যাপ আপলোডের।”
মন্ত্রী এ কথা বললেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় তুফান উঠেছে রসিকতার। কোথাও দেখা যাচ্ছে, পাবজি বন্ধ হওয়ায় ঢোল বাজিয়ে নাচছেন বাবা-মা। যদি এ বার ছেলে-মেয়ের পড়াশোনায় মন বসে! কোথাও জনপ্রিয় সিনেমার দৃশ্যে নায়িকার বাবার মুখে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই মোবাইল-গেমের প্রসঙ্গ। যেন তিনি কৃতজ্ঞ চিত্তে বলছেন, ‘যাক বাবা, শেষমেশ এই দিন এল।’ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, চিনের সঙ্গে অর্থনীতির টক্করে আর পেরে ওঠা যাচ্ছে না বলেই কি এই মোবাইল গেমের লড়াই? কোথাও কটাক্ষ, ‘বেচারা পাবজি। খেসারত দিল লাদাখ আর তলিয়ে যাওয়া জিডিপির!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy