চোখের জলে: আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা কৃষকের। বুধবার সিংঘু সীমানায়। পিটিআই
আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নক্ষত্রদের সঙ্গে কার্যত টুইট-প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ ভারত সরকার এবং ভারতীয় নক্ষত্রমহলের একাংশ। রিহানা, গ্রেটা থুনবার্গ, মিয়া খলিফারা সরব হতেই মোদী সরকারের সুরে সুর মেলালেন লতা মঙ্গেশকর, সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহালিরা।
ভারতের কৃষক আন্দোলনের সপক্ষে মঙ্গলবার পপ তারকা রিহানা টুইট করতেই আন্তর্জাতিক মহলে নড়াচড়া শুরু হয়ে যায়। অস্বস্তি ঢাকতে সরাসরি জাতীয়তাবাদের অস্ত্রে শান দিয়ে পাল্টা প্রচারে সুর চড়ায় ভারত সরকার। আন্তর্জাতিক জনমতকে ‘ভারত-বিরোধী’ বলে দেগে দিয়ে সরকারের তরফে চালু করে দেওয়া হয় #ইন্ডিয়াএগেনস্টপ্রোপাগান্ডা হ্যাশট্যাগ। সরকার এবং শাসক দলের পাশাপাশি ক্রীড়া, সঙ্গীত এবং অভিনয় জগতের তাবড় তারকারাও লাগাতার দেশের ঐক্যের কথা বলে টুইট করতে থাকেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংগঠিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে সরকার পুরো বিষয়টাকে দেশপ্রেমের মোড়ক দিতে মরিয়া। সেই সঙ্গে ভারতীয় সেলিব্রিটিরা যে সরকারের পাশেই আছেন, সেই বার্তাটাও ঘরে-বাইরে তুলে ধরতে উদ্যোগী।
এ দিন প্রথমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে বলেন, ‘কোনও প্রচারেই ভারতের ঐক্য নষ্ট হওয়ার নয়।’ পাশাপাশি কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করায় কড়া বার্তা দেওয়া হয় টুইটারকে। ফলে বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে এ বার কার্যত সরাসরি দ্বন্দ্ব বেধে গিয়েছে ভারত সরকার এবং টুইটার কর্তৃপক্ষের।
কৃষক আন্দোলনের পক্ষে সরব, এমন আড়াইশোর বেশি টুইটার হ্যান্ডল এবং একটি হ্যাশট্যাগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য সম্প্রতি টুইটার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিল ভারত সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের সেই নির্দেশ মেনে সোমবার সকালে অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ করেও দেওয়া হয়। তবে সে দিন রাতেই ফের চালু হয়ে যায় সেগুলি। টুইটার কর্তৃপক্ষ জানান, ওই সব হ্যান্ডল থেকে যে সমস্ত তথ্য পরিবেশিত হয়েছে, তা ‘সংবাদগোত্রীয়’ এবং তাঁদের বিবেচনায় ‘বাকস্বাধীনতার’ অঙ্গ। জবাবে বুধবার টুইটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে বার্তা দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। পাঠানো হয়েছে ১৮ পাতার নোটিস। সরকার পক্ষের দাবি, ওই সব টুইটার হ্যান্ডল এবং #মোদীপ্ল্যানিংফার্মারজেনোসাইড হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করা হচ্ছে এবং ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে হিংসায় উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।
এ দিকে কৃষকদের সমর্থনে মঙ্গলবারই পপ তারকা রিহানার টুইটকে কেন্দ্র করে নেট দুনিয়া কার্যত দু’ভাগ হয়ে যায়। কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দিল্লিতে ইন্টারনেট বন্ধের খবরের লিঙ্ক শেয়ার করে রিহানা। লিখেছিলেন, ‘আমরা কেন এই বিষয় নিয়ে কথা বলছি না?’
এর পরেই কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে টুইট করেন সুইডেনের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, আমেরিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত পপ তারকা জে শিন, ডক্টর জিউস, মিয়া খলিফা-সহ হলিউড তারকাদের অনেকেই। বিষয়টিকে প্রচারের আলোর আনার কথা বলেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বোনঝি মীনা হ্যারিস-সহ ব্রিটেনের একাধিক এমপি। লেবার এমপি ক্লডিয়া ওয়েব লেখেন, এ বিষয়ে ব্রিটেন সরকারের বিবৃতি দাবি করে আবেদনপত্রে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। অতএব বিষয়টি তাঁরা এ বার পার্লামেন্টে তুলবেন। আজও স্বাক্ষরকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন তিনি।
দেশের মাটিতে আগেই কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন স্বরা ভাস্কর, তাপসী পন্নু, রিচা চাড্ডা, সোনু সুদ। আজ রিহানার প্রশংসায় ইউটিউবে নতুন গান পোস্ট করেন গায়ক-অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জ। অন্য দিকে বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানায়, রিহানাদের মন্তব্য ‘উস্কানিমূলক’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দুম করে কোনও মন্তব্য করার আগে ভাল করে তথ্য যাচাই করার জন্য অনুরোধ করছি আমরা। কৃষি আইন নিয়ে দেশের কৃষকদের একটা ক্ষুদ্র অংশের আপত্তি রয়েছে। আলোচনা করে বিষয়টি মেটাতে সচেষ্ট সরকার। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কৃষকদের প্রতিবাদের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে তাঁদের পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করছে।’ বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র আবার এর মধ্যে টেনে এনেছেন রাহুল গাঁধীর নামও। তাঁর দাবি, ‘‘রাহুল বিদেশে গিয়ে যত সব দেশ-বিরোধীদের সঙ্গে দেখা করেন...সে রিহানাই হোক বা মিয়া খলিফা। এ সবই ভারতকে হেয় করে দেখানো প্রচার। এরা সব দেশদ্রোহী।’’
গত কাল রাতেই রিহানাকে ‘বোকা তুমি থামো’ বলে সম্ভাষণ জানিয়ে গলা তুলেছিলেন কঙ্গনা রানাউত। আজ মুখ খোলেন লতা, সচিন, বিরাটের সঙ্গে অনিল কুম্বলে, সাইনা নেহাওয়াল, অক্ষয়কুমার, অজয় দেবগণ, কৈলাস খের, সুনীল শেট্টি, কর্ণ জোহররা। বিরাট লেখেন, ‘‘এই মতভেদের সময়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কৃষকরা দেশের সম্পদ। একটা সমাধান নিশ্চয় বেরোবে।’’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সচিন, কুম্বলেদের টুইট রি-টুইট করেন। বিদেশ মন্ত্রকের টুইট শেয়ার করে অক্ষয় বলেন, ‘কৃষকরা দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের সমস্যা মেটাতে সরকার যে চেষ্টা করছে, তা স্পষ্ট। শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy