নতুন পথে ভারত ও পাকিস্তান। যাবতীয় টানাপড়েনের মধ্যেই এখন কূটনৈতিক আলোচনার পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসছে দু’দেশ। সন্ত্রাস এবং দ্বিপাক্ষিক অন্য আলোচনাকে আলাদা স্তরে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। নরেন্দ্র মোদী এবং নওয়াজ শরিফের সম্মতিতেই এই নতুন কৌশল।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রশ্নে এই কৌশলকে এক আমূল বদল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। কেননা, ‘পুরনো গতানুগতিক রেওয়াজ’ থেকে বেরিয়ে এসে দু’দেশই ফলপ্রসূ ভাবে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে— এমনটাই দাবি করছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে শুধু মাত্র সন্ত্রাস প্রসঙ্গে কথা হবে। দ্বিতীয় স্তরটি পাশাপাশি এগোবে বিদেশসচিব পর্যায়ে। সেখানে জম্মু-কাশ্মীর, স্যর ক্রিক, বাণিজ্য-সহ থাকবে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়।
কূটনীতির বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মনমোহন সরকারের সময় মিশরের শর্ম অল শেখে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই ধরনের একটি প্রয়াস হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জেরে সাহস করে এই বিষয়ে খুব বেশি এগোনো যায়নি। প্রণব মুখোপাধ্যায় বিদেশমন্ত্রী থাকার সময়েও একটি ‘মেকানিজম’ তৈরি করার চেষ্টা হয়, কিন্তু সেটিও কার্যকরী হয়নি। কূটনীতিকদের অনেকেরই বক্তব্য, ভবিষ্যতে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে এই মডেল মোদী সরকার কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়, তা দক্ষিণ এশিয়ার ভূকৌশলগত রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনের পাশে মোদী ও শরিফের আলোচনায় এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পঠানকোট কাণ্ডের পরে শান্তি আলোচনা যাতে ভেস্তে না যায়, সে জন্য এই মডেলটিতে সিলমোহর লাগানো হয়েছে। তবে আপাতত বিদেশসচিব পর্যায়ের আলোচনা স্থগিত রাখার কারণ হিসেবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছিলেন, ‘‘পঠানকোট কাণ্ডের ছায়ার মধ্যে দু’দেশের সামগ্রিক আলোচনা হলে তাতে আখেরে লাভের থেকে লোকসানই হবে বেশি।’’ এ বিষয়ে একমত ইসলামাবাদও।
পঠানকোটের তদন্তে শরিফ একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’ গঠন করেছিলেন। সূত্রের খবর, সিট তদন্তের জন্য এখনই ভারতে আসছে না। স্থির হয়েছে, ভারত আগে নিজের তদন্ত শেষ করবে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ) তদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জমা দেওয়ার পরেই ভারতে আসবে পাক গোয়েন্দা দল। তাদের হাতে তদন্তের যাবতীয় তথ্য তুলে দেবে ভারত। তথ্যকে নিজেদের তদন্তের কাজে লাগাবে ইসলামাবাদ।
এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে, তদন্ত আরও খানিকটা এগোনোর পর দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা একটি বৈঠকে নিজেদের তথ্য আদানপ্রদান করবেন। সেটি যে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঢাক পিটিয়ে করা হবে, এমনটা নয়। যে ভাবে ব্যাঙ্ককে দু’দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠকে বসার পরে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়েছিল, সে ভাবেই এই বৈঠকটি হওয়ার সম্ভাবনা। তার পরে বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবেই হবে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘সন্ত্রাস নিয়ে আগেই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়ে গেলে, অন্য বিষয়গুলি নিয়ে বিদেশসচিবরা খোলামনে আলোচনা করতে পারবেন।’’
নভেম্বরে পাকিস্তানে বসছে সার্ক সম্মেলন। তার আগেই ভারতের সঙ্গে এক দফা আস্থাবর্ধক আলোচনা সেরে নিতে চায় ইসলামাবাদ। বিদেশসচিব পর্যের প্রথম বৈঠকটিতেই তা অবশ্য সম্ভব নয়। কারণ, সাউথ ব্লকের কর্তাদের মতে, প্রথম বৈঠকটি হবে আস্থাবর্ধক আলোচনার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি স্থির করার জন্য। তাই নভেম্বরের মধ্যে নতুন মডেলে আলোচনা কত দ্রুত এগোয়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy