(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি। মাঝপথেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার এই অভিযোগ তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও কেন্দ্র তাঁর দাবি নস্যাৎ করে জানিয়েছে এমন কিছুই হয়নি। কিন্তু বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র একাধিক নেতা একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। কংগ্রেস, আপ, জেএমএম প্রায় সকলেই ‘বৈষম্যে’র কথা বলেছে।
শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে নীতি আয়োগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাত জন মুখ্যমন্ত্রী সেই বৈঠক আগে থেকে বয়কট করলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তবে সেই বৈঠকের মাঝপথেই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় মমতাকে। বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘চন্দ্রবাবু নায়ডুকে ২০ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে। অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের ১০ থেকে ২০ মিনিট বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।’’ যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো (পিআইবি)-র তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, মাইক বন্ধের অভিযোগটি ‘বিপথে চালিত করা’।
মমতার দাবি, পরে কেন্দ্রের পাল্টা যুক্তি— সব মিলিয়ে শনিবার দুপুর থেকেই উত্তপ্ত জাতীয় রাজনীতি। বিজেপি যখন পিএবির দাবিকে সামনে রেখে মমতার কথা ‘অসত্য’ বলে সরব হচ্ছে, তখন বিরোধীরা একজোট হয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াল। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ নীতি আয়োগ বৈঠককে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
রমেশ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্টে লেখেন, ‘‘এই বৈঠকে কখনই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এটি কখনই উন্মুক্ত গণতন্ত্রের পরিপূরক হতে পারে না। প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যা আচরণ করা হল, তা গ্রহণযোগ্য নয়।’’ শুধু জয়রাম নন, কংগ্রেস সাংসদ রাজীব শুক্ল, কংগ্রেস মুখপাত্র সচিন রাওয়াতরাও একই সুরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ আবার সংসদে রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার সময় ‘মাইক বন্ধ’ করে দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
কংগ্রেস ছাড়াও ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের মধ্যে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও বিজেপির নিন্দা করেছেন। তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এক জন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কি এমন আচরণ করা যায়?’’ ডিএমকে প্রধানের সংযোজন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে, বিরোধী দলগুলি আমাদের গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের চুপ করিয়ে রাখতে গিয়ে শত্রুর মতো আচরণ করা ঠিক নয়।’’
ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-র তরফে নীতি আয়োগের বৈঠকে ‘বৈষম্য’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন একটি বৈধ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন, তখনই তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। আপনি যদি কাউকে আমন্ত্রণ করে এ ভাবে অপমান করেন, তবে কে যাবে? প্রত্যেকেরই আত্মসম্মান আছে।’’
আম আদমি পার্টি (আপ)-ও শনিবারের ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘বাজেটে রাজ্যগুলির সঙ্গে ভেদাভেদ করা হয়েছে। তা নিয়ে সংসদে যখন প্রতিবাদ করা হয়েছিল, তখন তৃণমূলও সেই প্রতিবাদে ছিল। এমন পরিস্থিতিতে উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বৈঠকে গিয়ে সত্যের মুখোমুখি হতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে উনি যা বলেছেন তা একদমই ঠিক।’’
যদিও মমতার দাবিকে ‘অসত্য’ বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা সকলে তাঁর কথা শুনেছি। প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সামনের টেবিলে সেই সময় দেখাও যাচ্ছিল। প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে সমান সময় দেওয়া হয়েছিল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এমন অসত্য দাবি করছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক। ওঁর সত্যিটা বলা উচিত।’’
বিজেপি নেতা পীযূষ গয়াল জানান, ওই বৈঠকে সকলকে বলার জন্য পাঁচ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়েছিল। এটি একটি ‘অটোমেটিক মোডে’ ছিল। যদিও কিসের ‘অটোমেটিক মোড’ তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। পীযূষ পাঁচ মিনিটের কথা বললেও হিমন্ত বিশ্বশর্মা দাবি করেছেন যে, বৈঠকে বলার জন্য সকলকে সাত মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। তিনি সাড়ে সাত মিনিট বলেছেন। বৈঠক শেষে মমতা অবশ্য দাবি করেছিলেন , তাঁকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy