পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
নীতি আয়োগের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাইক বন্ধ করার দাবির মধ্যে দিয়ে ‘বিপথে চালিত’ করা হচ্ছে। এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের তরফে ওই দাবির ‘সত্যতা যাচাই করে দেখেছে’ প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি)। তাদের দাবি, মমতা বৈঠকে নিজের কথা বলার সময় পেয়েছিলেন। ‘সময় শেষ’ বলে ঘড়িতে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে সতর্ক করতে কোনও ঘণ্টা পর্যন্ত বাজানো হয়নি।
দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে নীতি আয়োগের যে বৈঠক চলছে, শনিবার তা থেকে ওয়াক আউট করেছেন মমতা। বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে একমাত্র তিনিই বৈঠকটিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মমতা। সংবাদমাধ্যমকে জানান, তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে বলতেই দেওয়া হয়নি। বলার জন্য মাত্র পাঁচ মিনিট দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই কারণেই এই বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেছেন তিনি। তবে মমতার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে পিআইবি। তারা জানিয়েছে, এই দাবির মাধ্যমে জনমানসকে ‘ভুল পথে চালিত’ করা হচ্ছে।
মমতার বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা সকলে তাঁর কথা শুনেছি। প্রত্য়েক মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সামনের টেবিলে সেই সময় দেখাও যাচ্ছিল। উনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ওঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে সমান সময় দেওয়া হয়েছিল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এমন অসত্য দাবি করছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক। ওঁর সত্যিটা বলা উচিত।’’
নীতি আয়োগের বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘চন্দ্রবাবু নায়ডুকে ২০ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে। অসম, গোয়া, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রীকে ১০ থেকে ১২ মিনিট বলতে দেওয়া হয়েছে। আর আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।’’
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাত জন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে নীতি আয়োগের এই বৈঠক বয়কট করেছিলেন। একমাত্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শনিবার সকালে বৈঠকে যোগ দেন। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। বিরোধী দলের একমাত্র প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁকে পাঁচ মিনিটের বেশি বলতে দেওয়া হল না, কেন তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হল, প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।
এই দাবির প্রেক্ষিতে পিআইবির তরফে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে মমতার বক্তব্যের ভিডিয়োর উপরে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘বিভ্রান্তিকর’। ওই ভিডিয়োর সঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠক চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে বিপথে চালিত করা হচ্ছে। ঘড়িতে দেখানো হয়েছিল, ওঁর বলার সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কোনও ঘণ্টাও বাজানো হয়নি।’’
বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা জানান, তাঁর আরও কিছু কথা বলার ছিল বৈঠকে। তিনি সেখানে বিরোধীদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। বিরোধীদের তরফে একমাত্র তিনিই যে বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাতে কেন্দ্রের খুশি হওয়ার কথা। কেন তাঁকে পাঁচ মিনিটের বেশি বলতে দেওয়া হল না, তা নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরেই ক্ষোভ উগরে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
পাঁচ মিনিট ধরে বৈঠকে কী বলেছেন মমতা? তা-ও জানান বৈঠক থেকে বেরিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলেছি আপনাদের (কেন্দ্রীয় সরকার) কোনও রাজ্য সরকারের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়। আমি আরও কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে মাত্র পাঁচ মিনিট বলতে দেওয়া হল। আমার আগের লোকেরা ১০-২০ মিনিট কথা বলেছিলেন। এটা অপমানজনক। আর কোনও নীতি আয়োগের বৈঠকে আমি থাকব না।’’
উল্লেখ্য, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মাইক বন্ধ করার অভিযোগ এই প্রথম নয়। অতীতে সংসদে একাধিক বার তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। এ বার অনুরূপ অভিযোগ করেছেন মমতাও। বিজেপি যদিও তাঁর এই অভিযোগকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে দাবি করেছে। পদ্ম নেতৃত্বের মতে, শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দর থেকেই এই ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মমতা। তিনি তখনই বলেছিলেন, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছি। কিছু ক্ষণ থাকব। বলতে দিলে বলব। না হলে প্রতিবাদ করব। বাংলার হয়ে কথা বলব।’’ মমতার এই মন্তব্য তুলে ধরে শনিবারের ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলছেন কেন্দ্রের শাসকদলের অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy