পাকিস্তান সীমান্তের গায়ে বিরাট সামরিক মহড়া শুরু করল ভারত। ‘শত্রুজিৎ’ নামের এই মহড়ায় বিধ্বংসী আঘাত হানার সব রকম অস্ত্র ব্যবহার করছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। মহড়ায় সামিল বিমান বাহিনীও। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কত দ্রুত আঘাত হানতে সক্ষম ভারতীয় সেনা, তা পরখ করে নিতেই এই বিশাল মহড়ার আয়োজন হয়েছে। থর মরুভূমিতে পাকিস্তান সীমান্তের একেবারে গায়েই ভারতের এই সামরিক মহড়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, বলছে ওয়াকিবহাল মহল।
বিশাল ট্যাঙ্ক বাহিনী এবং রকেট লঞ্চার এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মহড়ায় সামিল হয়েছে সেনা। পারমাণবিক, জৈবিক এবং রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ হলে কী ভাবে ভারত তার মোকাবিলা করবে, মহড়া দেওয়া হচ্ছে তারই। লং রেঞ্জ আর্টিলারি বাহিনীকেও থর মরুভূমিতে হাজির করা হয়েছে। অনেক দূর থেকে কী ভাবে বিধ্বংসী গোলাবর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে ভারতীয় বাহিনী, তারই প্রমাণ দেওয়া হচ্ছে। মহড়ায় অংশ নিয়েছে বায়ুসেনা। আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ শুধু নয়, প্যারা-ড্রপিং-এ বায়ুসেনা এখন কতটা দক্ষ তারই প্রদর্শনী চলছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, পাক সীমান্তের একেবারে গায়ে ২০০০-৩০০০ জওয়ানকে প্যারা-ড্রপিং করে নামাচ্ছে বায়ুসেনা।
দেখুন গ্যালারি:
এমনই দাপট ভারতের বিশাল ট্যাঙ্ক বাহিনীর!
ভারতের হাতে থাকা প্রায় ১২ লক্ষের বিশাল সেনাবাহিনীর হাতে বিধ্বংসী এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কমতি নেই। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাই পাকিস্তান বার বার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেয়। ভারতীয় সেনা পাক এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলেই ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন বা ছোট আকারের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাবে পাকিস্তান, বহু বার জানিয়েছে ইসলামাবাদ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক কর্তা এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘পাকিস্তান বোকার মতো ট্যাকটিকাল পরমাণু অস্ত্রের কথা বলছে। ভারত পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে যে নো ফার্স্ট ইউজ পলিসিতে বিশ্বাসী, তার অর্থ পাকিস্তানের কাছে খুব পরিষ্কার হওয়া উচিত। ভারত প্রথমে আঘাত না হানলেও ট্যাকটিকাল (ছোট) বা স্ট্র্যাটেজিক (বড়), যে কোনও ধরনের পরমাণু হামলার সম্মুখীন হলেই ভারত প্রবল এবং কঠোরতম আঘাত হানতে প্রস্তুত।’’
আরও পড়ুন:
বঙ্গোপসাগরে সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ ব্যালিস্টিক মিসাইলের
শত্রুজিৎ-এর সেষ দিনে সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগও থর মরুভূমিতে উপস্থিত থাকবেন। প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারতের তরফে সামরিক প্রস্তুতি কতটা, তা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই পাক সীমান্তের খুব কাছে এই মহড়ার আয়োজন হয়েছে। পাকিস্তান এবং চিন হাত মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে জোট বাঁধার যে বার্তা আন্তর্জাতিক মহলকে দিতে শুরু করেছে, তার মোকাবিলায় যে ভারত সব রকম ভাবে তৈরি, সেই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে। ২০০১ সালে সংসদে জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তান আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ‘অপারেশন পরাক্রম’ নামের সেই অভিযানে বাহিনী এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সীমান্তে পাঠাতে এক মাস সময় লেগে যায়। তার মধ্যে পাকিস্তানও নিজেদের বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য তৈরি করে নেওয়ার সময় পেয়ে যায়। আমেরিকাও অনেকটা সময় পেয়ে যায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে ভারতকে পাকিস্তান আক্রমণ থেকে নিরস্ত করতে। সেই অপারেশন পরাক্রম থেকে শিক্ষা নিয়ে বাহিনী এবং সমর সরঞ্জাম দ্রুত কোথাও পাঠানো এবং খুব অল্প সময়ে আক্রমণের সক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই সক্ষমতারই প্রদর্শনী এখন চলছে থর মরুভূমিতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মাত্র-২-৩ দিনের প্রস্তুতিতেই বড়সড় আক্রমণ চালাতে প্রস্তুত ভারত, খবর সেনা সূত্রে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy