প্রতীকী ছবি।
মধ্যরাতের নির্দেশ ঘিরে দিনভর বিভ্রান্তি!
গত কাল মাঝরাতে কেন্দ্র জানায়, আজ সকাল থেকে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ‘শপস অ্যান্ড এস্টাব্লিশমেন্ট’ আইনে রেজিস্ট্রিকৃত সব ধরনের দোকান চালু করা যাবে। রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স, মার্কেট কমপ্লেক্স, পুরসভা বা পুরনিগমের আওতার বাইরে থাকা দোকানগুলিকে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। পুরসভা বা পুরনিগম এলাকায় পাড়ার দোকান, একক দোকান মালিকরা বিক্রিবাটা শুরু করতে পারবেন। তবে মাল্টি-ব্র্যান্ড এবং সিঙ্গল ব্র্যান্ড মলগুলি এই ছাড়ের আওতার বাইরে। সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে, মাস্ক পরা বা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো লকডাউন বিধিগুলি মেনে কাজ করতে হবে।
কিন্তু সেই নির্দেশে হটস্পট ও গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকায় (কন্টেনমেন্ট জ়োন) কী কী ধরনের দোকান খোলা থাকবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ না-থাকায় একাধিক সংক্রমিত এলাকায় শনিবার সকালেই অনেক দোকান খুলে যায়। এর পরেই তড়িঘড়ি একের পর এক সংশোধনী জারি করা শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু তার পরেও দিনের শেষে বিভ্রান্তি রয়েই গিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
বিরোধীদের প্রশ্ন, লকডাউন প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা করতে যেখানে আগামী সোমবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসতে চলেছেন, সেখানে মাঝরাতে কেন এমন নির্দেশ জারি করা হল! তা-ও আবার জটিল ভাষায়, বিস্তর ধোঁয়াশা রেখে! লকডাউনে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি যখন রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত, তখন দোকান খোলার সিদ্ধান্ত দেশকে জানিয়ে কেন্দ্র একাই কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এমন অভিযোগও উঠেছে। অন্য দিকে, মধ্যরাতের নির্দেশে হটস্পট এলাকার কোনও উল্লেখ না-থাকাটাকে বড় মাপের ত্রুটি হিসেবেই দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।
সংশোধিত নির্দেশিকায় ছাড়
• গ্রামীণ এলাকায় সব দোকান। তবে শপিং মল বন্ধ থাকবে।
• শহরে পাড়ার দোকান, একক ভাবে থাকা দোকান, আবাসনের ভিতরে থাকা দোকান খোলা যাবে। কিন্তু বাজার, শপিং মল বা মার্কেট কমপ্লেক্সের দোকান খোলা যাবে না।
• লকডাউনের নিয়ম মেনে চলতে হবে। এক সঙ্গে দোকানে ভিড় করা চলবে না। দোকানেও কাজের জন্য ফি দিন মোট কর্মীর অর্ধেক থাকবেন। ক্রেতা ও বিক্রেতার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
ছাড় নেই
• হটস্পট বা গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকায় দোকান খোলা যাবে না।
• বন্ধ থাকবে মদের দোকান, রেস্তরাঁ, সেলুন, শপিং মল, সিনেমা হল, সুইমিং পুল, পানশালা প্রেক্ষাগৃহ, জিম।
• নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু ছাড়া আর কিছুই কেনা যাবে না অনলাইনে/ ই-কমার্স সাইটে।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ বৃদ্ধির হার কমেছে, আশায় কেন্দ্র
আরও পড়ুন: বাণিজ্য করিডর খোলার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রথীন রায় বলেন, ‘‘সরকার ভাবনাচিন্তা না করে বিভ্রান্তিকর এমন একটি নির্দেশ জারি করেছে যা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। অর্থনীতির কোন ব্যাখ্যায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা স্পষ্ট নয়।’’ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের মতে, রাজ্যের ক্ষমতায় কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করছে।
কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি)-এর সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খান্ডেলওয়ালও জানান, কেন্দ্রের নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগবে। তবেই দোকান খোলা যাবে। কেন্দ্রের নির্দেশে সে কথার উল্লেখ না-থাকায় সংশয় তৈরি হয়। বস্তুত, দিল্লি, অসম ও রাজস্থানের মতো একাধিক রাজ্য এখনই দোকান খোলার অনুমতি দিতে রাজি নয়।
পশ্চিমবঙ্গে শনিবার সকালে কিছু দোকান খুললেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। দোকান খোলার নির্দেশের স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য— উভয়ের কাছে আর্জি জানিয়েছে রাজ্যের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সুশীল পোদ্দার বলেন, ‘‘অনেক বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়। কোন দোকান খোলা যাবে বা কত ক্ষণ খোলা যাবে, স্পষ্ট নির্দেশ না-থাকলে বিভ্রান্তি হতে পারে। আবার মিউনিসিপ্যালিটি
এলাকায় ওই নির্দেশ কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। তা হলে কি কলকাতা পুরসভার মতো কর্পোরেশন বা পুর এলাকাতেও দোকান খোলা যাবে?’’
করোনা-সংক্রমণের তীব্রতার নিরিখে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর— এই চার জেলাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কন্টেনমেন্ট এলাকার আওতায় রয়েছে এই জেলাগুলির বহু এলাকা। রাজ্য প্রশাসনের তরফে কেউ মুখ না-খুললেও মনে করা হচ্ছে, দোকান-বাজার খোলা নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির জন্য প্রযোজ্য নয়।
সুশীলবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘শুধু দোকান খোলা থাকলেই তো হবে না। ছোট-মাঝারি দোকানগুলিতে সাধারণত কয়েক দিনের স্টক থাকে। দোকান খোলার পরে সেগুলি ফুরিয়ে গেলে ফের তা জোগানের কী হবে?’’
অন্য দিকে, বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, সরকারের লক্ষ্যই হল ধাপে ধাপে স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে এগোনো। সে জন্য গত ২০ এপ্রিল থেকে গ্রামীণ এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে আর্থিক কর্মকাণ্ডে সায় দেওয়া হয়। প্রথম ধাপে শ্রমিক-মজদুরের পরে এ বার সরকারের লক্ষ্য ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা। তাই গ্রাম ও শহরে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘এতে সামান্য হলেও কিছু তো ব্যবসা হবে।’’ রাজনীতিকদের অনেকে বলেছেন, এক মাসের উপরে ব্যবসা বন্ধ থাকায় বিজেপির মূল ভোটব্যাঙ্ক বৈশ্য সমাজ ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে চাপ রয়েছে একেবারে শীর্ষ স্তরে। তাই বৈশ্য সমাজকে বার্তা দিতেই গত কালের সিদ্ধান্ত। ছোট দোকানদারদের স্বার্থে আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে অনলাইন সংস্থাগুলির মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয় এমন সামগ্রী বিক্রি।
যদিও কংগ্রেসের অভিযোগ, অতীতে নোটবাতিল থেকে জিএসটি, নরেন্দ্র মোদী সরকার যখনই বড় কোনও ঘোষণা করেছে, তার পিছনে যথেষ্ট প্রস্তুতির অভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে। এ বারও তাড়াহুড়ো করে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে ভিন্ রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের কথা ভাবা হয়নি। আর এখন দোকান খোলার প্রশ্নে অযথা তাড়াহুড়ো আসল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করেছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy