মমল্লপুরমের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী ও শি চিনফিংয়।—ছবি পিটিআই
চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমশ কমিয়ে আনতে মমল্লপুরমের বৈঠক শেষে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেছে দুই দেশ। ঠিক হয়েছে, তা হবে চিনা উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে। কিন্তু তার পরেও বেজিং সেই কথা কতটা রাখবে, তা নিয়ে সন্দেহের মেঘ বিদেশ মন্ত্রকের অন্দরে। ভারতীয় শিল্পমহলের একাংশও মানছে, চিনা সংস্থার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই পড়শি মুলুক তথা বিশ্বের বাজারে অংশিদারিত্ব বাড়াতে আরও অনেকখানি পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। আধুনিকতম প্রযুক্তির হাত ধরা থেকে শুরু করে খরচ ছাঁটাই— এই দীর্ঘ পথে দৌড়তে কেন্দ্রকেও পাশে চাইছে শিল্পমহল।
২০১৮ সালে ভারতের সঙ্গে চিনের বাণিজ্যের পরিমাণ ৯,৫৫৪ কোটি ডলার। কিন্তু চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি (চিনে ভারতীয় পণ্য রফতানির তুলনায় চিনা পণ্য আমদানি কত বেশি) ৫,৩০০ কোটি ডলার। কেন্দ্রের দাবি, এই একপেশে বাণিজ্য নিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বেগ প্রকাশ করার পরেই সামনে এসেছে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওই প্রস্তাব।
কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের একাংশই মানছেন, চিন না-আঁচালে বিশ্বাস নেই। দু’দেশের সম্পর্ক সম্প্রতি যে তলানিতে পৌঁছেছিল, এই বাণিজ্য-বন্দোবস্তের প্রলেপে তা মেরামত হল ঠিকই। কিন্তু তাতে ভর করে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি কতটা কমবে, সে বিষয়ে খুব নিশ্চিত নন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এটি নিঃসন্দেহে আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিন (বাজারের দরজা আরও খুলে দেওয়ার) কথা কতটা রাখবে, তা বলবে সময়ই।’’
অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রণব মুখোপাধ্যায় বলতেন, বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক কিংবা বহু পাক্ষিক আলোচনার মঞ্চে চিন নানা প্রতিশ্রুতি দেয় ঠিকই। কিন্তু অনেক সময়ই সেই কথা তারা রাখে না। বিশেষজ্ঞরাও মনে করাচ্ছেন, বেজিংয়ের এই ‘ধারাবাহিকতা’র কথা। চিনের বিরুদ্ধে বরাবরের অভিযোগ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের বাজারের দরজা খুলতে এখনও দরাজ নয় তারা। বাণিজ্যে ‘অন্যায্য’ সুবিধা পেতে তারা জোগান বাড়িয়ে-কমিয়ে নিজেদের মুদ্রার দাম নিয়ন্ত্রণ করে। অভিযোগ, চড়া হারে কর বসিয়ে কিংবা খারাপ গুণমানের ‘অজুহাতে’ আমদানি রুখে দেওয়ার। মেধাস্বত্ব আইন ঢিলেঢালা ভাবে প্রয়োগের অভিযোগও বেজিংয়ের বিরুদ্ধে লাগাতার তুলেছে আমেরিকা-সহ অনেক দেশ। আর এ সবের ‘উত্তরে’ কখনও চিন বাজারের দরজা হাট করে খোলার প্রতিশ্রুতি দেয়, তো কখনও অস্বীকার করে রফতানির পণ্য সস্তা করতে বিপুল ভর্তুকি জোগানোর অভিযোগ। ফলে এ বারও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেওয়া কথা বেজিং কতটা রাখবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
শিল্পমহলের একাংশ আবার বলছেন, চিনা পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্ব বাজারে দখল বাড়তে শুধু বেজিংয়ের ‘কথা রাখা’র ভরসায় থাকলে চলবে না। তার জন্য গুণমান ঠিক রেখে অনেক কম খরচে উৎপাদনের বন্দোবস্ত হওয়া জরুরি।
ছোট শিল্পের সংগঠন ‘ফিসমে’-র সাধারণ সচিব অনিল ভরদ্বাজের কথায়, ‘‘চিনকে শুধু ‘ভিলেন’ ঠাওরালে হবে না। উল্টে নিশানা করতে হবে তার বিশাল বাজারকে।’’ তাঁর অভিযোগ, এখনও রফতানি বলতে ভারতীয় সংস্থাগুলি মূলত পশ্চিমী দুনিয়ার কথা ভাবে। কিন্তু চিন সমেত নতুন বাজারকে বিশদে চেনা, সেখানকার পছন্দ-অপছন্দ জানার তাগিদ সে ভাবে কোথায়? প্রচলিত বাজারের বাইরের কতগুলি দেশে বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করে এ দেশের সংস্থা? তাঁর মতে, ‘‘প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুঝতে আগে রফতানির পণ্য তৈরির খরচ কমানোর বন্দোবস্ত হওয়া জরুরি। লাল ফিতের ফাঁসে প্রকল্প আটকে থাকা থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহণের বিপুল খরচের মতো কারণে যা বাড়তেই থাকে।’’
কুটির ও ছোট শিল্পের সংগঠন ‘ফ্যাকসি’-র প্রেসিডেন্ট এইচ কে গুহ-র মতে, ‘‘রফতানি বাজারে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে সবার আগে হাত ধরতে হবে আধুনিক প্রযুক্তির। যাতে গুণমানে আপস না-করেও খরচ কমে। সঙ্গে সহজ হতে হবে মূলধন জোগাড়ের রাস্তা। কিছুটা বাড়তি সুবিধা দিতে হবে রফতানিকারীদের।’’ তিনি চান, এই সমস্ত ক্ষেত্রেই শিল্পমহলের পাশে দাঁড়াক কেন্দ্র।
বণিকসভা সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার ঘোষণা স্বাগত। ঋণের দায়, পণ্য পরিবহণের খরচ ইত্যাদি কমিয়ে রফতানির পণ্যকে আরও সস্তা করার কথা বহু দিন ধরেই বলছে শিল্পমহল। প্রত্যন্ত এলাকাতেও ভাল যোগাযোগ এবং সীমান্তে পণ্যের দ্রুত পারাপার তা মসৃণ করতে পারে বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy