ভূগর্ভে জলের ভাঁড়ার তো নাগাড়ে কমছেই। উপরন্তু মাটির তলায়-উপরে যেটুকু সঞ্চয় রয়েছে, তা-ও যাচ্ছে বিষিয়ে। সোমবার ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’ টুইটে একটি হিসেব প্রকাশ করে জানিয়েছে, ভারত তার ইতিহাসে সর্বাধিক জলসঙ্কটে ভুগছে। বিশ্বে পরিস্রুত জল থেকে বঞ্চিতদের অধিকাংশই ভারতীয়।
পরিবেশবিদদের হিসেবে, এ দেশে পরিস্রুত জল থেকে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা ১৬ কোটিরও বেশি! জলবিজ্ঞানী অরুণাভ মজুমদারের মতে, স্বাধীনতার সময় দেশের মানুষের গড়ে মাথাপিছু যে-পরিমাণ জল জুটত, এখন তার থেকে ১% কম জল জোটে। সমীক্ষা বলছে, জলের জোগানে ভারতের থেকে এগিয়ে আছে নাইজিরিয়া-ইথিয়োপিয়াও। পরিবেশবিদেরা বলছেন, মোদী সরকারের আমলে গ্রামাঞ্চলে মাথাপিছু দিনে ৪০ লিটার পরিস্রুত জল দেওয়ার জন্য জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্প চালু হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সাল পর্যন্ত গ্রামের মাত্র ১৮% বাসিন্দাকে সেই প্রকল্পের সুবিধা দিতে পেরেছে সরকার।
এ দিন পোলান্ডে বিশ্বের জলবায়ু বদল নিয়ে আন্তর্জাতিক বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকের আলোচ্য-তালিকায় জলসঙ্কট না-থাকলেও জলবায়ু বদলের প্রভাব পড়বে জলের উপরেও। এ দিন ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের টুইটের উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব মাধবন নায়ার রাজীবন তাঁর টুইটারে লিখেছেন, বছরে দু’টি বর্ষা (দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু)-র মরসুমের পরেও দেশে জলসঙ্কট চরমে উঠছে!
নাই জল নাই কোথায় কত* • ভারত ১৯.৩৩ • ইথিয়োপিয়া ৭.১৭ • নাইজিরিয়া ৭.০৫ • চিন ৬.৮২ • কঙ্গো ৫.৫৫ • ইন্দোনেশিয়া ৩.২০ • তানজানিয়া ৩.১৬ • উগান্ডা ২.৮২ • পাকিস্তান ২.৫৬ • কেনিয়া ২.২৭ *মোট জলবঞ্চিতের মধ্যে শতাংশের হিসেব
পরিবেশবিদেরা জলসঙ্কটের জন্য নদীনালায় বর্জ্য ফেলে দূষিত করা ও ভূগর্ভস্থ জলের নির্বিচার ব্যবহারকে দায়ী করছেন। জলবিজ্ঞানীরা বলছেন, সেচে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল তোলায় জলস্তর নামছে, ভূগর্ভে বাড়ছে আর্সেনিক-ফ্লুয়োরাই়়ডের বিপদ। কেন্দ্রীয় ভূ-জল পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য শ্যামাপ্রসাদ সিংহরায় বলেন, ‘‘প্রায় ২৫টি রাজ্যে ভূগর্ভের জলে কমবেশি ফ্লুয়োরাইড পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ ভারতে ভূগর্ভে জল এমনিতেই কম, তাই সমস্যা আরও বেশি।’’
পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, গঙ্গা, যমুনার মতো বড় এবং বিভিন্ন ছোট নদীতেও দূষণ বাড়ছে। ফলে অনেক জায়গায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে প়়ড়েছে সেই জল। রোগ ছড়াচ্ছে দূষিত জল। পরিস্রুত জলের অভাব প্রভাব ফেলছে দেশের অর্থনীতি এবং ‘গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট’ (জি়ডিপি) বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের উপরেও। পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার অন্যতম বিশেষজ্ঞ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, দূষিত জল থেকে রোগ ছড়ালে চিকিৎসার খরচ বাড়ে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে নব প্রজন্মের বুদ্ধিমত্তার উপরে। অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অর্থনীতিবিদ নীলাঞ্জন ঘোষের মতে, জলদূষণ এবং পরিস্রুত জলের সঙ্কট মূলত গরিব ও শ্রমিক শ্রেণিকে বিপদে ফেলে। ধাক্কা খায় দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন প্রক্রিয়াও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy