ছবি রয়টার্স।
হাতে বড়জোর আর কয়েক মাস। তার মধ্যেই করোনার প্রতিষেধক পেয়ে যাবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন। আর সেটি পাওয়ার পরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় মজুত ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়াটাই কেন্দ্রের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
প্রতিষেধক নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা না-হলেই অকেজো হয়ে যেতে পারে। অনেক রোগের টিকা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শূন্য সেলসিয়াসের চেয়ে ১৫-১৮ ডিগ্রি কম তাপমাত্রায় রাখার দরকার পড়ে। আবার কিছু টিকা মাইনাস ৬০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় রাখতে হয়।
পোলিয়োর মতো টিকাকরণ কর্মসূচির জন্য প্রায় ২৭ হাজার হিমঘর দরকার হয়। প্রায় ২৫ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী ও হাজার ৫০ হিমঘর-সরবরাহ কর্মীকেও মাঠে নামাতে হয়। কিন্তু করোনার প্রতিষেধক যদি শূন্যের থেকে ৬০ ডিগ্রি কম তাপমাত্রায় রাখার দরকার হয়, সে ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার সাহায্য ছাড়া চলবে না। শুধু হিমঘরে মজুত নয়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সড়ক বা বিমানে সেই টিকা পৌঁছে দেওয়াটাও বিরাট চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: এক বছরে ৩৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বেড়েছে মোদীর, কমেছে শাহের
বিষয়টি মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাস্থ্যমন্ত্রী, নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল, মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবন ও সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, যথেষ্ট সংখ্যায় করোনার প্রতিষেধক কেনা, তার পরে সেই বিপুল টিকা মজুত করা এবং ছোট কাচের ভায়ালে ভরে ফেলার প্রযুক্তি এবং শেষে ঠিক মতো দেশের প্রতিটি কোনায় তা পৌঁছে দেওয়া— এই খুঁটিনাটি দিকগুলি মোদী নিজে খতিয়ে দেখেছেন। তিনি আজ সেরো-সার্ভে ও করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর উপরেও জোর দিয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রক করোনা টিকার বিলি-বণ্টনের যে ব্যবস্থা তৈরি করছে, তার উপরে নজর দিতে বলেছেন মোদী।
বিজ্ঞানীদের যুক্তি, করোনার প্রতিষেধক কত তাপমাত্রায় মজুত রাখতে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন আগেই বলেছিলেন, সরকারের লক্ষ্য প্রথম ছয় মাসে ২০ থেকে ২৫ কোটি মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া। সেই অনুযায়ী প্রথম ছয় মাসে গোটা দেশের জনসংখ্যার কতটা অংশকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তার লক্ষ্য ধরে নিয়ে কী পরিমাণ হিমঘর প্রয়োজন হবে, তার হিসেব কষা হচ্ছে।
পোলিয়ো টিকাকরণের জন্য যে ‘ইলেকট্রনিক ভ্যাকসিন ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক’ ব্যবহার হয়, তা করোনার প্রতিষেধক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজেও লাগানো হবে। কিন্তু করোনার টিকার ক্ষেত্রে তার চেয়ে বহ গুণ বেশি হিমঘর এবং সেখান থেকে টিকা নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘কোল্ড চেন’-এর ব্যবস্থা দরকার হবে। তাই সরকারি পরিকাঠামোর সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার পরিকাঠামোগুলিকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে।প্রতিষেধক বিলির জন্য নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলের নেতৃত্বে জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষি-পণ্য বিপণনকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলছে। সুইগি-জ়োম্যাটো-র মতো খাবার সরবরাহকারী সংস্থাগুলির সঙ্গেও কথা হচ্ছে। মূলত, প্রতিটি জেলা ও মহকুমা স্তরে প্রতিষেধক মজুত রাখার মতো হিমঘর কোথায় কী রকম রয়েছে, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। অ্যাপোলো হাসপাতাল গোষ্ঠীর এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারপার্সন শোভনা কামিনেনি আজ ঘোষণা করেছেন, তাঁরা প্রতিদিন ১০ লক্ষ প্রতিষেধক দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি করে ফেলেছেন।
গোটা দেশের মানুষের কাছে করোনার টিকা পৌঁছে দেওয়ার মতো অর্থ মোদী সরকারের রয়েছে কি না, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে। এ দেশে প্রতিষেধক তৈরির কাজে নিযুক্ত পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া-র সিইও আদর পুণাওয়ালা প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রতিষেধক কিনে তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে আগামী এক বছরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ৮০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। তা রয়েছে তো?
আরও পড়ুন: সরকারি খরচ বৃদ্ধির পক্ষে ফের সওয়াল
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্তাদের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী নিজেই ১৫ অগস্ট লাল কেল্লা থেকে বক্তৃতায় বলেছিলেন, প্রতিষেধক বিলির নীল নকশা তৈরি রয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে। নীতি আয়োগের এক কর্তার কথায়, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিমান কার্গো সংস্থার সংগঠনের সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, মাত্র ২৮ শতাংশ সংস্থা এর জন্য তৈরি। বিমানবন্দর ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থাগুলির প্রস্তুতি আরও কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy