Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
India China

কার্গিল যুদ্ধের ফাঁকে প্যাংগংয়ে রাস্তা বানিয়েছে চিন, বলছেন প্রাক্তন সেনাকর্তা

ফিঙ্গার ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত টহলদারি করতে গিয়ে ভারতীয় সেনাকে বার বার চিনের বাধার মুখে পড়তে হয়।

প্যাংগং লেক বরাবর নিয়ন্ত্রণরেখায় ৪ থেকে ৮ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্ট পর্যন্ত মূল বিবাদের কেন্দ্র।

প্যাংগং লেক বরাবর নিয়ন্ত্রণরেখায় ৪ থেকে ৮ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্ট পর্যন্ত মূল বিবাদের কেন্দ্র।

সংবাদ সংস্থা
লাদাখ শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ১৭:০২
Share: Save:

কার্গিল যুদ্ধের সময় লাদাখে ভারতীয় সেনার নজরদারি কমেছিল। সেই সুযোগ নিয়ে প্যাংগং লেকের চারটি ফিঙ্গার পয়েন্ট নিজেদের বলে ধরে নিয়েছে বেজিং। ওই সময়ই পাকা রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত। সেই সময় থেকেই ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত নিজেদের এলাকা বলেই ধরে নিয়েছে চিনা বাহিনী। তাই ভারতীয় সেনা ৮ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্ট পর্যন্ত টহলদারি করতে গেলেই বাধা দেয় চিনের পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারত প্যাংগং এলাকায় পরিকাঠামো তৈরির কাজ চালাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এস ডিন্নির মতে, ইচ্ছাকৃত ভাবেই বেপরোয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে চিন। ফিঙ্গার ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত বিবাদ ছিলই। পরিকাঠামো তৈরিকে মেনে নিতে পারছে না চিন। সেই কারণেই বাড়ছে বিবাদ, হাতাহাতি, ধস্তাধস্তির মতো ঘটনা, মনে করেন দীর্ঘদিন প্যাংগং এলাকায় দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন সেনাকর্তা এস ডিন্নি।

প্যাংগং এলাকায় রয়েছে এক থেকে ৮ নম্বর পর্যন্ত আটটি ফিঙ্গার পয়েন্ট। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এই পয়েন্টগুলি ১ থেকে ৮ পর্যন্ত নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারত মনে করে, এই ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ পর্যন্তই ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। অন্য দিকে চিনের দাবি, ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত তাদের অধিকার। অর্থাৎ ফিঙ্গার ৮ থেকে ফিঙ্গার ৪ পর্যন্ত পুরো এলাকাই তাদের। আর এখানেই বিবাদের সূত্রপাত। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এস ডিন্নি জানিয়েছেন, চিনা বাহিনীর ছাউনিগুলি রয়েছে শ্রীজাপ এলাকায়, যা ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। ১৯৯৯ সালে ভারত-পাক কার্গিল যুদ্ধের সময় প্যাংগং লেক এলাকায় ভারতের অনেক কম সেনা মোতায়েন ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে ওই সময়ই ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে বেজিং। ফলে তাদের টহলদারিতে কোনও সমস্যা হয় না। অতিরিক্ত সেনাও দ্রুত পৌঁছে যেতে পারে। অন্য দিকে ভারতের সেনা ছাউনিগুলি মূলত ফিঙ্গার পয়েন্ট ২ এবং ৩-এর মধ্যে। ফিঙ্গার ৪-এর এক কিলোমিটার আগে পর্যন্ত পাকা রাস্তা রয়েছে। সেই বিন্দু থেকে ফিঙ্গার ৮ পর্যন্ত হেঁটে টহল দিতে হয়।

আর এই টহলদারি করতে গিয়েই ভারতীয় সেনাকে বার বার চিনের বাধার মুখে পড়তে হয়। এস ডিন্নি বলেন, ওই রাস্তা তৈরির পর থেকেই চিন কার্যত ওই এলাকা তাদের নিজেদের একচ্ছত্র অধিকার বলে ধরে নিয়েছে। সেখানে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারে না তারা। ফিঙ্গার-৮ পর্যন্ত ভারতীয় সেনার টহলদারিও মোটেই ভাল ভাবে নেয় না তারা। তাই টহল দিতে গেলে মাঝে মধ্যেই বাধা দেয়। আবার দু’দেশের চুক্তি অনুযায়ী কোনও পক্ষের সেনা বাধা দিলে, সেই বাধা এড়িয়ে এগনো যায় না। প্রাক্তন সেনাকর্তা ডিন্নির মতে, এত দিন ওই এলাকায় কার্যত একপক্ষের আধিপত্য ছিল।

আরও পড়ুন: ‘এলএসি পেরিয়ে বেজিং যাবার ইচ্ছে? গাড়ি ঘোরান!’

তাহলে এখন সমস্যা বাড়ল কেন? মে মাসের গোড়া থেকে চিন হঠাৎ প্যাংগং এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা সমাবেশ বাড়াতে শুরু করল কেন? এস ডিন্নি জানিয়েছেন, গত ৭-৮ বছর ধরে ওই এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে ভারত। রাস্তা, ব্রিজ তৈরি থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাণ কাজকে মেনে নিতে পারছে না চিন। নয়াদিল্লির এই কাজকর্ম থামাতেই প্যাংগং লেক এলাকায় বিপুল সেনা সমাবেশ করেছিল চিন, এমনটাই মনে করেন এস ডিন্নি। তিনি জানিয়েছেন, আগে যেখানে মাসে দু’-এক দিন দু’পক্ষের সেনার মধ্যে হাতাহাতি বা বাধাদানের মতো ঘটনা ঘটত, এখন সেটাই কার্যত নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: সমাধান অধরা, স্থলে-আকাশে সমানে টক্কর দিতে প্রস্তুতি বাড়াছে ভারত

এই বিবাদ সহজে থামার নয়, মনে করছেন প্রাক্তন এই সেনাকর্তা। তাঁর মতে, প্যাংগং লেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সম্পর্কে দু’দেশের সেনাবাহিনীই ওয়াকিবহাল। কিন্তু চিন ইচ্ছাকৃত ভাবেই ফিঙ্গার-৪ থেকে ফিঙ্গার-৮ পর্যন্ত কার্যত একছত্র বলে ধরে নিয়েছে। চিনা বাহিনী যে চুক্তি বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ধার ধারে না, সেটাও কার্যত তাদের হাবে ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রতি বারই গরমের সময় এই রকম ছোটখাটো ধস্তাধস্তি, হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কারণ সেই সময় দু’পক্ষেই সেনার তৎপরতা বাড়ে। তবে শীতকালে এই উচ্চতায় টহলদারি কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই গন্ডগোলও কম হয়। ফলে শীতের মরসুমের আগে এই বিবাদ থামার নয়,মনে করেন এস ডিন্নি।

অন্য বিষয়গুলি:

India China Pangong Lake India China Galwan Valley
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy