ছবি রয়টার্স।
লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে চিনের সঙ্গে কমান্ডার পর্যায়ে আজ পঞ্চম দফার বৈঠকে বসল ভারত। সূত্রের খবর, ১১ ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠকে প্যাংগং-সহ পূর্ব লাদাখের একাধিক এলাকা থেকে চিনা সেনার সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ব্যাপারে চাপ বাড়িয়েছে ভারত। চিনা এলাকায় মোলডো-তে এই বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিংহ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ৫ মে-র আগের স্থিতাবস্থা ফেরানোর দাবি ফের তুলেছে ভারত।
আলোচনার মধ্যেই চিনকে নিয়ে নয়া অস্বস্তি শুরু হয়েছে দিল্লির। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পূর্ব লাদাখ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই উত্তরাখণ্ড সংলগ্ন লিপুলেখ পাসে সেনা জমায়েত করতে শুরু করেছে চিন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকায় পিএলএ-র সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে বলে খবর। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসও প্রশ্ন তুলেছে।
সামরিক সূত্রের বক্তব্য, উত্তরাখণ্ডের কাছে ভারত-নেপাল সীমান্তের লিপুলেখ পাসে চিনা সেনার গতিবিধি নজরে আসছে। তারা সেখানে সেনা সাজাচ্ছে। উত্তর সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশেও সীমান্ত বরাবর সেনা মোতায়েন করছে চিন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে লিপুলেখ পাস সাম্প্রতিক অতীতে কূটনৈতিক বিতর্ক এবং আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে সম্পূর্ণ অন্য কারণে। মানস সরোবর যাত্রাপথে অবস্থিত এই এলাকায় ভারতের ৮০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি নিয়ে আপত্তি জানায় নেপালের কে পি ওলি-র সরকার। জুন থেকে অক্টোবর, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দু’পারে উপজাতিদের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য করার জন্যও এই লিপুলেখ পাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিছু দিন আগে ভারতের এই এলাকাটিকে নিজেদের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে কাঠমান্ডু। ভারতের আপত্তিতে কর্ণপাত করেনি তারা।
আরও পড়ুন: বুধবার বাড়ি গিয়েছিলেন অমিত, মোদী কি যাবেন নিভৃতবাসে?
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নেপালের এ ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার সঙ্গে সেখানে সাম্প্রতিক চিনা সেনার সমাবেশের সম্পর্ক থাকতে পারে। সূত্রের বক্তব্য, আজ সামরিক স্তরের আলোচনায় এই বিষয়টি টেবিলে নিয়ে এসেছে নয়াদিল্লি। বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “লিপুলেখ পাসে আমাদের ভূখণ্ডে চিনা আগ্রাসন ঘটছে। দেশের রক্ষায় ভারতীয় সেনা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু চোখে চোখ রেখে যাঁর কথা বলার ছিল, তিনি কোথায়? তিনি কবে চিনকে লাল চোখ দেখাবেন?”
আজকের বৈঠকে আরও একটি বিষয় নিয়ে ভারত তার উদ্বেগ তুলে ধরেছে। ভারতীয় সেনা সূত্রের মতে, লাদাখ সংলগ্ন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সামরিক পরিকাঠামো বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে বেজিং। এক সেনা সূত্রের মতে, “প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি দোদুল্যমান। পিএলএ তাদের সেনা সমাবেশ বজায় রাখছেই, পাশাপাশি পরিকাঠামো বাড়াচ্ছে।’’ চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে, সীমান্ত সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি স্তরে এবং সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে ১৫ জুনের পর থেকে (গালওয়ানে রক্তপাতের পর) দফায় দফায় জট ছাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। বারবারই চিন বলেছে যে, তারা তাদের সেনা পিছিয়ে নিয়েছে এবং সীমান্ত থেকে সেনা সমাবেশ কমিয়ে ফেলেছে। সাউথ ব্লক চিনের এই বক্তব্যকে সরাসরি মিথ্যাচার না বললেও বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র একাধিক সাংবাদিক সম্মেলনে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এখনও এ ব্যাপারে বহু পথ হাঁটা বাকি। চিন এখনও কথা রাখেনি। এখন লিপুলেখ পাসে নতুন করে চিনের সেনা সমাবেশ ভারতের অস্বস্তিকে নিঃসন্দেহে অনেকটাই বাড়িয়ে দিল।
আরও পড়ুন: শাহের করোনা, রামমন্দিরের ভূমিপূজার কী হবে!
সরকারি সূত্রের খবর, ভারত ইতিমধ্যেই আমেরিকা, রাশিয়া, এবং ইউরোপের কিছু দেশের দূতাবাসকে জানিয়েছে, অধিক উচ্চতায় শীতকালীন সময়ে ব্যবহার করার জন্য তাঁবু, পোশাক উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে রাখতে, যাতে জরুরিভিত্তিতে অধিক সংখ্যায় কিনে নেওয়া যায়। কারণ কত দিন পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে শিবির গড়ে থাকতে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই শীতের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এক সেনা কর্তার মতে, “গালওয়ানে যা ঘটল, তার পরে পিএলএ বা চিনা নেতৃত্বকে আর বিশ্বাস করা যায় না। যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে, আগামী বছর প্যাংগং লেকের উত্তরপ্রান্তে আবার তারা ঢুকে আসতে পারে। আমাদের সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy