Advertisement
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
India-China Clash

লাদাখে জমি দখলের চেষ্টা ব্যর্থ চিনের

ঘটনার পরে আজ লাদাখ সীমান্তে দু’দেশের সেনা অফিসার পর্যায়ে বৈঠক শুরু হয়। 

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৪২
Share: Save:

ফের লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় আগ্রাসী ভূমিকায় চিনা সেনা। তবে এ বার এলাকা দখলের চেষ্টা করতে এসে ব্যর্থ হল তারা। ভারতীয় সেনার দাবি, তারা প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ তীরে একটি উঁচু এলাকা চিনাদের আগেই দখল করে নিয়েছে। তাতে ওই এলাকায় ভারত কৌশলগত সুবিধে পেতে পারে।

গত শনিবার রাতে লাদাখের প্যাংগং হ্রদ সংলগ্ন এলাকায় চিনা সেনা সীমান্তের স্থিতাবস্থা বদলাতে চাইলে ভারতীয় সেনার তৎপরতায় তা ব্যর্থ হয় বলে দাবি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। পাল্টা দাবিতে বেজিং জানিয়েছে, তারা সীমান্তে কোনও আগ্রাসন দেখায়নি। উল্টে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে সীমান্ত পেরোনোর অভিযোগ তুলেছে প্রতিবেশী দেশ। ঘটনার পরে আজ লাদাখ সীমান্তে দু’দেশের সেনা অফিসার পর্যায়ে বৈঠক শুরু হয়।

কিন্তু দু’পক্ষই যে ভাবে আজ থেকে আবার সীমান্তে বিমান মহড়়া শুরু করেছে তা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে মাসখানেক শান্ত থাকার পরে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠার মুখে ভারত-চিন লাদাখ সীমান্ত। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শ্রীনগর-লে হাইওয়ে। উপদ্রুত এলাকায় পাঠানো হয়েছে বাড়তি সেনা। গত মে মাস থেকেই লাদাখে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত জারি রয়েছে। গত ১৫ জুন তা চরমে ওঠে। পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-এর কাছে দু’দেশের সেনার মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়, তাতে মারা যান ভারতের ২০ জন সেনা। তার পর থেকে সীমান্তে শান্তি ফেরাতে সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তা যে বিশেষ ফলপ্রসূ হয়নি তা স্পষ্ট করে দিয়েছে শনিবার রাতের ঘটনা।

প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, শনিবার রাতে প্রায় দেড়শো চিনা সেনার একটি দলের সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। তাদের সঙ্গে ছিল সামরিক সরঞ্জাম। তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, সেটা নয়াদিল্লি সরকারি ভাবে স্পষ্ট না করলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের মতে, চিন সেনার লক্ষ্য ছিল এলাকা দখলই। মূলত সে রাতে প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে এলাকা দখল করে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করাই সম্ভবত লক্ষ্য ছিল চিনা সেনার।

সেনার দাবি, চিন সেনার ওই গতিবিধি আগে থেকেই আঁচ করে ফেলায় এলাকা দখল রুখে দেওয়া গিয়েছে। ১৫ জুনের পরিস্থিতি এড়ানো গিয়েছে। সেনার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চিন একতরফা ভাবে সীমান্তে পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা করেছিল বটে কিন্তু ভারতীয় জওয়ানদের সক্রিয় পদক্ষেপে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। ভারত ওই এলাকায় নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে। এলাকা দখল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কোনও হাতাহাতি হয়নি বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনা।

পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেই আজ সকালেই দিল্লি উড়ে আসেন লাদাখের উপরাজ্যপাল। দেখা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষেণ রেড্ডির সঙ্গে। সূত্রের মতে, লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে আজ সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এ দিকে বিষয়টি সামনে আসতেই লাদাখ সীমান্তে চিন সেনার ধারাবাহিক আগ্রাসন প্রশ্নে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয় কংগ্রেস। কী কারণে সরকার চিন প্রশ্নে নরম নীতি নিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রধান বিরোধী দল। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘প্যাংগং হ্রদ, গোগরা, গালওয়ান উপত্যকা, ডেপসাং, লিপু হ্রদ, নাকু লা, একের পর এক স্থানে আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে চিনা সেনা। আমাদের জওয়ানেরা বীরের মতো লড়ছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কবে চিনকে রক্তচক্ষু দেখাবেন?’’ পাল্টা জবাবে চিনের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘ভারতীয় জওয়ানেরা চিনের একে পর এক আগ্রাসন সাফল্যের সঙ্গে রুখে দিচ্ছেন। তা দেখে কংগ্রেসের কান্না পাচ্ছে কেন?’’

এ যাবৎ চিনের অধিকাংশ সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে প্যাংগং হ্রদের উত্তর প্রান্তে। যে ভাবে শনিবার লেকের দক্ষিণ প্রান্তে চিন সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে তা থেকে সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গোটা প্যাংগং হ্রদকে ঘিরে নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার একটি সার্বিক পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এগোচ্ছে বেজিং। গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক আগ্রাসন সেই সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশমাত্র। নয়াদিল্লির মতে, নিজেদের পরিকল্পনা সফল করতেই আলোচনার তোয়াক্কা না করে স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করে চলেছে চিনা সেনা। যদিও ওই ঘটনার পরেই আজ চুশুলে ব্রিগেড কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকে বসে দু’দেশের সেনা।

এ দিকে ভারতীয় সেনার বিবৃতিকে খারিজ করে চিনের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা জারি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চিনা সেনা কোনও ভাবেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরোয়নি। বিদেশ মন্ত্রক আলোচনার দোহাই দিলেও, সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সরাসরি ভারতকে হুঁশিয়ারি দেয়। অভিযোগ তুলেছে চিন নয়, আসলে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়েছে ভারতীয় সেনা। চিনা সেনার ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কম্যান্ডের মুখপাত্র কর্নেল হাং শিউলি বলেন, ‘‘সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে ভারত সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিক, এমনটাই চিনের তরফে কাম্য। ভারতীয় সেনা দু’দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তি ভেঙে নিয়ম অগ্রাহ্য করে সীমান্ত পেরিয়েছে। তাই ভারতের উচিত অবিলম্বে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া।’’

অন্য বিষয়গুলি:

India-China Clash India China People Liberation Army Indian Army Ladakh Galwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy