ছবি এপি।
প্রায় দেড় মাস শান্তির পরে ফের লাদাখ সীমান্তে চোখে চোখ রেখে ভারত-চিনের সেনা। একটি সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছে যে পরস্পরকে নিশানা করে বসে রয়েছে দু’দেশের ট্যাঙ্কবাহিনী। অন্য দিকে, নজিরবিহীন ভাবেই আজ ভারতের বিরুদ্ধে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে অনুপ্রবেশের অভিযোগে সরব হয়েছে বেজিং। এ যাবৎ আন্তর্জাতিক মহলে চিনের আগ্রাসনের কথাই বলে এসেছে নয়াদিল্লি, এ বার উল্টে ভারতের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলল চিন।
আজ রাতের খবর, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের দিকের চুমার এলাকায় আজ চিনা সেনা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। ভারতীয় সেনা তা প্রতিহত করেছে। সূত্রের দাবি, চিনের চেপুজি ক্যাম্প থেকে ৭-৮টি গাড়ি বেরোতে দেখে ভারতীয় সেনা সতর্ক হয়ে যায়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে সেনা সমাবেশ করে ভারত। সেই তৎপরতা দেখে ক্যাম্পে ফিরে যায় চিনের সেনা।
গত শনিবার রাতে প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে বিনা প্ররোচনায় স্থিতাবস্থা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল চিন। ভারতীয় সেনার তৎপরতায় যা ভেস্তে যায়। ভারতীয় সেনার দাপটে পিছু হটতে বাধ্য হয় চিনের সেনা। প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, লাল ফৌজ গত এপ্রিল-মে মাসে যে জায়গাগুলি দখল করে ঘাঁটি গেড়েছিল, তার কয়েক কিলোমিটার এলাকা ফের কব্জায় নিয়ে আসতে পেরেছে ভারত। সূত্রের মতে, কালা টপের মতো গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ের চূড়া দখল করে নিতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সেনা। ওই উচ্চতা থেকে ভারতীয় সেনার গতিবিধি লক্ষ করার জন্য যে ক্যামেরা ও নজরদারি যন্ত্র বসানো হয়েছিল, তা-ও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ওই চূড়া কব্জায় আসায় উপর থেকে চিনা সেনার উপর এখন নজর রাখতে পারছে ভারতীয় সেনা। যাতে অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে বেজিং।
আরও পড়ুন: খাদ্য সঙ্কট থেকে নজর ঘোরাতেই আগ্রাসী চিন! উঠছে প্রশ্ন
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কালের পরে আজ লাদাখের চুসুলে হওয়া ব্রিগেড কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে দর কষাকষির প্রশ্নে কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। ঠিক যে ভাবে এত দিন ভারতের জমি দখল করে দর কষাকষিতে এগিয়ে থেকেছে চিন। কিন্তু এ যাত্রায় দখল করা এলাকা হাতছাড়া হওয়ায় হতাশা থেকেই চিন কূটনৈতিক সমঝোতার দোহাই দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। সূত্রের মতে, শীত শুরু হওয়ার আগে চিনের সেনা যে ভাবে নতুন করে আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে, কী ভাবে তা প্রতিহত করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী কয়েক দিনের মধ্যে লাদাখে যেতে পারেন বলেই খবর। এ দিকে, লাদাখে ভারতীয় সেনার গতিবিধি দেখে সরব হয়েছে দিল্লিতে নিযুক্ত চিনা দূতাবাস। গত ৩১ অগস্ট রাতে ভারতীয় সেনা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে বলে দাবি করেন চিনের মুখপাত্র জি রং। তিনি জানান, সীমান্ত সমঝোতা ভেঙে ভারতীয় সেনা প্যাংগং লেকের দক্ষিণে রেকিং পাসের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে সীমান্তে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর দাবি, ভারতের ওই গতিবিধির ফলে চিনের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকার শান্তি নষ্ট হয়েছে। চিনের মুখপাত্রের মতে, যে সেনারা অনুপ্রবেশ করেছে, পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আগে তাঁদের প্রত্যাহার করে নিক ভারত।
আরও পড়ুন: ‘গত ৭০ বছরে কারও এক ইঞ্চি জমিও দখল করিনি’, দাবি চিনের
জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লিও। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, শনিবার মধ্যরাতে চিনা সেনার এলাকা দখলের চেষ্টা ভেস্তে দেওয়া হয়। ৩১ অগস্ট, সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে চুসুলে যখন বৈঠক চলছে, সেই সময়ে ফের এলাকা দখলের চেষ্টা করে চিনা সেনা। কিন্তু ভারতীয় সেনা তৎপরতার সঙ্গে স্থিতাবস্থা ভাঙার চেষ্টাকে আটকে দেয়। বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে চিনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। চিনা সেনা ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের আচরণ না করে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy