মোদী ও পুতিন। ফাইল চিত্র।
ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্বের সেই পুরনো দিন এখন অতীত। রাজ কপূরের নামে রুশ শিশুদের নামও রাখা হয় না এখন। কিন্তু পুরনো বন্ধুত্বকে নতুন করে কিছুটা ঝালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে মস্কো এবং নয়াদিল্লি দু’তরফেই। ভ্লাদিভস্তকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের সদ্যসমাপ্ত বৈঠকের পরে এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক যথেষ্ট সফল হয়েছে বলে দাবি করছে বিদেশ মন্ত্রক। রাশিয়াকে ১০০ কোটি ডলারের ‘লাইন অব ক্রেডিট’ দেওয়া শুধু নয়, জাহাজ তৈরি থেকে মহাকাশ গবেষণা, শক্তি ও প্রতিরক্ষা— বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতাকে ঝালাই করে নেওয়া হয়েছে দীর্ঘ যৌথ বিবৃতিতে। ভারতের উৎপাদন শিল্পকে চাঙ্গা করতে রাশিয়া এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে যন্ত্রাংশ তৈরির বিষয়েও একমত হয়েছে দু’দেশ।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, মোদীর দ্বিতীয় ইনিংসে পুতিনের সঙ্গে এই বৈঠকের তাৎপর্যকে শুধু মাত্র খাতায়-কলমে প্রাপ্তি দিয়ে মাপলে হবে না। সার্বিক ভূকৌশলগত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এর গুরুত্ব বিচার করা দরকার। ডোকলাম কাণ্ডের পরে অনেক চেষ্টা করে চিনের সঙ্গে সম্পর্কে যে স্বাভাবিকতা আনা গিয়েছিল, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করার পরে তা ফের প্রশ্নের মুখে। পশ্চিমের
বেশির ভাগ দেশ কাশ্মীর-বিতর্কে ভারতের পাশে দাঁড়ালেও বারবার উপত্যকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অস্বস্তিকর প্রশ্নও তুলেছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্ব কিছুটা ফেরা ভারতের জন্য সুবাতাস নিয়ে এসেছে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে পুতিনকে ‘এক পরম বন্ধু’ বলে উল্লেখও করেছেন।
বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, ‘‘এটা ঠিকই যে, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ভারত এবং রাশিয়ার যে সম্পর্ক ছিল, আজকের নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় তা হওয়া সম্ভব নয়। সে সময়ের তুলনায় ভারতের সঙ্গে আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে অনেকগুণ। তৈরি হয়েছে কৌশলগত অংশীদারিত্ব। অন্য দিকে রাশিয়াও পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। চিনের সঙ্গে সমঝোতা করেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু তবুও আজকের এই অনিশ্চিত বিশ্বে দু’দেশই বুঝছে যে, নতুন-পুরনো সমস্ত রাস্তাই খোলা রাখা উচিত।’’
দু’দেশের মধ্যে আস্থা বাড়ার আরও একটি কারণ, আমেরিকার চাপে নতি স্বীকার করে রাশিয়া থেকে এস-৪০০-এর মতো যুদ্ধাস্ত্র কেনা এখনও বন্ধ করেনি নয়াদিল্লি। ওয়াশিংটনের নাকের ডগা দিয়েই রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমঝোতার কথাও ঘোষণা হয়েছে মোদীর চলতি সফরে। পরিবর্তে মস্কোও নয়াদিল্লিকে বার্তা দিয়েছে যে, ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থের দিকটিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, চিনের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষ বন্ধুত্ব রাশিয়ার তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু গোটা ইউরেশিয়া অঞ্চলে চিনের বাড়বাড়ন্ত চিন্তায় ফেলেছে মস্কোকে। আঞ্চলিক ভারসাম্যের নীতি মেনে তাই তারা নয়াদিল্লিকেও এখন দাঁড়িপাল্লার অন্য দিকে বসাতে চাইছে।
এই গোটা সমীকরণকে সফল করার জন্য প্রয়োজন ছিল নতুন করে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক ভিত। ভ্লাদিভস্তক সেই মঞ্চই তৈরি করে দিল বলে দাবি করছে সাউথ ব্লক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy