গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
অধীর চৌধুরী পরাস্ত হয়েছেন বহরমপুরে। গত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা এ বার নেই। তার ফলেই কি সংসদে কংগ্রেস এবং বাংলার শাসকদল তৃণমূলের কক্ষ সমন্বয় মসৃণ হল? তৃণমূল সাংসদদের একটা বড় অংশ ঘরোয়া আলোচনায় স্পষ্টই বলছেন, অধীরের জন্যই সংসদে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ‘দূরত্ব’ থাকত। এ বার রাহুল গান্ধীই বিরোধী দলনেতা। তাঁর সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কোনও রাজ্যগত বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে অধীরের সংসদে না-থাকার ফলে এক লহমায় এ বার দূরত্ব ঘুচে গিয়েছে।
গত লোকসভায় অধীর ছিলেন কংগ্রেসের দলনেতা। তিনি কী মনে করেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ বলেন, ‘‘আমি জানি না কে কী বলছেন। তবে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে যখন আক্রমণ নেমে এসেছিল, তখন তৃণমূল চুপ করে ছিল। আমি কিন্তু মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। মহুয়াও আমায় ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। আমি যা বলেছি বা করেছি, তা প্রকাশ্যেই। সংসদে নথিভুক্ত রয়েছে।’’
দক্ষিণবঙ্গ থেকে নির্বাচিত তৃণমূলের দীর্ঘ দিনের এক সাংসদ ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, ‘‘অতীতেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেস এবং আমরা একসঙ্গে কক্ষ সমন্বয় করেছি। কিন্তু তাতে আমাদের একটা জড়তা থাকত। তার কারণ ছিলেন অধীর চৌধুরী। এ বার তিনি নেই, সেই জড়তাও নেই।’’ রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, গত মেয়াদে অনেক সময়ে সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অধীরকেও অধিবেশন চলাকালীন তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয় রাখার বাধ্যবাধকতা দেখাতে হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পর ফের তিনি ফিরে গিয়েছিলেন তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-বিরোধিতায়। অধীর-ঘনিষ্ঠ এক কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, ‘‘কক্ষ সমন্বয়ে তো সিপিএমের কেরলের সাংসদও কংগ্রেসের পাশে থাকে, তাই বলে কি তাঁরা রাজ্যে গিয়ে কংগ্রেসের বিরোধিতা করেন না? নাকি সেখানে সিপিএমের বিরোধিতা করে না কংগ্রেস?’’ সংসদের প্রথম দিন দেখা গিয়েছে বিজেপি-বিরোধী দলগুলি সমন্বয় রেখেই চলেছে। একযোগে আক্রমণ শানিয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে।
প্রোটেম স্পিকার বিতর্ক
নতুন লোকসভায় কে স্পিকার হবেন, তা এখনও স্থির হয়নি। আগামী ২৬ জুন হবে স্পিকার নির্বাচন। তার আগে সংসদ পরিচালনা করার জন্য বিজেপি সাংসদ ভর্তৃহরি মহতাবকে প্রোটেম বা অস্থায়ী স্পিকার নির্বাচন করা হয়েছে। সোমবার অধিবেশন শুরুর আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথবাক্য পাঠ্য করেন তিনি। ভর্তৃহরিকে প্রোটেম স্পিকার করা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী, সংসদের সবচেয়ে বর্ষীয়ান সাংসদকেই প্রোটেম স্পিকার করা হয়। সে দিক থেকে দেখতে গেলে এ বারের লোকসভায় সবচেয়ে বর্ষীয়ান সাংসদ কংগ্রেসের সুরেশ কোদিকুন্নিল। তিনি আট বারের সাংসদ। তবে সুরেশকে বাদ দিয়ে ভর্তৃহরিকে প্রোটেম স্পিকার করা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ সুরেশ এই প্রসঙ্গে সংবাদসংস্থাকে বলেন, ‘‘এনডিএ সরকার লোকসভার নিয়ম ভেঙেছে। এখনও পর্যন্ত নিয়ম ছিল, সবচেয়ে বেশি বার জেতা সাংসদকেই প্রোটেম স্পিকার করা। সে দিক থেকে আমি আট বারের সাংসদ, আর ভর্তৃহরি সাত বারের সাংসদ। এনডিএ সরকার আবারও বিরোধী দলকে অপমান করল। তাই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ সর্বসম্মতিক্রমে অধিবেশন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
সংবিধান হাতে বিক্ষোভ
নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা যখন সোমবার সাংসদ হিসাবে শপথ নিচ্ছেন, তখনই সংসদের বাইরে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা। সোমবার অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশনের দিনই সংবিধান বাঁচানোর দাবি তুলে সংসদের গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদদের একাংশ। হাতে সংবিধান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেসের সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপরাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, সৌগত রায়, সমাজবাদী পার্টির ডিম্পল যাদব, ডিএমকে-র কানিমোঝিরা। মোদী যখন সংসদের ভিতর শপথবাক্য পাঠ করতে ওঠেন তখন বেঞ্চে বসে মোদীর উদ্দেশে সংবিধান দেখান রাহুল গান্ধী। পরে সংসদ থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘মোদী এবং বিজেপি সংবিধানকেই শেষ করতে চান। আমাদের সেই সংবিধানকে রক্ষা করার লড়াই করতে হচ্ছে।’’
মোদীর ‘সহমত’ বার্তা
তৃতীয় বার নির্বাচিত হয়ে তিন গুণ দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘সকলের মত নিয়ে সরকার পরিচালনা করা হবে।’’ মোদীর মন্তব্য, নতুন বিশ্বাসের সঙ্গে নতুন উদ্যমে অধিবেশনের কাজ শুরু হবে। সহমতের ভিত্তিতেই কাজ করবে তাঁর সরকার। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাদের নেতৃত্বাধীন জোট ২৯২টি আসন পেলেও বিজেপি একক ভাবে পেয়েছে মাত্র ২৪০টি আসন। এ ছাড়া, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নতুন সরকারে কিছুটা ‘নরমপন্থী’ হতে বাধ্য হয়েছে বলে মত অনেকের।
ধর্মেন্দ্রকে নিট-নেট কটাক্ষ
নিট এবং নেট পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশ। প্রতি দিন নতুন নতুন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। এর মধ্যেই সোমবার সংসদে সাংসদ হিসেবে শপথ নিতে ওঠেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তিনি যখন পোডিয়ামের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন, তখন শোনা যায় বিরোধী সাংসদেরা ‘নিট, নেট, শেম শেম’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। যদিও ধর্মেন্দ্র কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাননি। শপথবাক্য পাঠ করে তিনি নিজের আসনে গিয়ে বসে পড়েন।
বাংলায় শপথ
তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রীরা সোমবার শপথ নিয়েছেন প্রথম দিন। সোমবার সেই তালিকায় ছিলেন বাংলা থেকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া দুই প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এবং শান্তনু ঠাকুর। তাঁরা মাতৃভাষা বাংলাতেই শপথবাক্য পাঠ করেছেন। উল্লেখ্য, বিভিন্ন রাজ্যের সাংসদেরা তাঁদের রাজ্যের ভাষাতে শপথবাক্য পাঠ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy