Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Corona Vaccine

ভোট হলে ভ্যাকসিন নয় কেন, প্রশ্ন

হাতে আর মাত্র মাস ছয়েক সময়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখনও ডুবে দেশ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৭:০৮
Share: Save:

১৩৮ কোটি ৪ হাজার ৩৮৫। একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, এটি এই মুহূর্তে ভারতের জনসংখ্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঘোষণা অনুযায়ী, এর মধ্যে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে (দু’টি ডোজ়ই মিলেছে) মাত্র ৩ কোটির কিছু বেশি মানুষের। এ দিকে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা যদি সত্যি হয়, সামনের শীতের শুরুতেই দেশজুড়ে আছড়ে পড়বে করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ। অর্থাৎ হাতে আর মাত্র মাস ছয়েক সময়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখনও ডুবে দেশ। এ অবস্থায় পরবর্তী ধাক্কা সামলাতে একমাত্র উপায় সময় বেঁধে টিকাকরণ।

প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই বক্তব্য, ১৩৮ কোটির টিকাকরণ সহজ কথা নয়। কিন্তু চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘‘ভোট হলে ভ্যাকসিনেশন নয় কেন! ভোটার তালিকা মিলিয়েই সেরে ফেলা হোক প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ।’’

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী, ১৬ কোটি ৪৯ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৮টি ডোজ় প্রদান হয়েছে। এর মধ্যে দু’টি ডোজ়ই পেয়ে গিয়েছেন ৩ কোটির কিছু বেশি বাসিন্দা। অর্থাৎ ১০ কোটি মতো মানুষ শুধুমাত্র একটি ডোজ় পেয়েছেন। বাকি বিপুল সংখ্যক মানুষকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে লকডাউন, মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি বজায়, জমায়েত নিষিদ্ধ, এমন বেশ কিছু বিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এতে শুধু সাময়িক ভাবে সংক্রমণ কমানো সম্ভব। দেশকে পাকাপাকি ভাবে ভাইরাস-মুক্ত করতে পারে একমাত্র ভ্যাকসিন। কিন্তু এ নিয়ে সরকারের যথেষ্ট উৎসাহের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের।

বেঙ্গালুরুর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘এনফারেন্স’-এর সঙ্গে যুক্ত কোভিড বিশেষজ্ঞ পৃথা ঘোষের মতে, যে ভাবে নির্বাচন কমিশন এই বিপুল জনসংখ্যার দেশে সুষ্ঠু ভাবে ভোট পরিচালনা করেন, সেই একই ভাবে টিকাকরণ সম্ভব। তাঁর

কথায়, ‘‘বিদেশে বহু ক্ষেত্রেই এ ভাবে এলাকা ভাগ করে নিয়ে টিকাকরণ হচ্ছে। এখানেও ভোটার তালিকা মিলিয়ে টিকা দেওয়া হোক। একই রকম ভাবে বুথ তৈরি করা হোক। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যাওয়ার বদলে টিকা নিতে যাবেন।’’ ব্রাজ়িলে যেমন, প্রত্যেক এলাকার জন্য নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। এলাকার বাসিন্দাদের নাম নথিভুক্ত থাকে সেখানে। ভোটার তালিকার বদলে সেই তালিকা মিলিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ হচ্ছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে কখনও ভাবেনি, তা নয়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে অনুরোধ করেন, টিকাকরণের স্বার্থে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেওয়া হোক সরকারকে। নির্বাচন কমিশন সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দেয়নি। তারা জানিয়েছিল, টিকাকরণ হয়ে গেলেই যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ফাইল থেকে বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত তথ্য নষ্ট করে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে সব রকম সাহায্য করতে তৈরি কমিশন।

সাইবার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই শর্ত দিয়েছিল তারা। কিন্তু ডিসেম্বরে যে পরিকল্পনা করেছিল মন্ত্রক, তা যে এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, তা বলাই বাহুল্য। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে টিকাকরণে শৈথিল্যের অভিযোগ জানান তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহও। সুসংহত পদ্ধতিতে রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিষেধক বণ্টনের আর্জি জানান তিনি।

চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘প্রাপ্তবয়স্কদের বেশির ভাগেরই নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে। ওই তালিকা মিলিয়ে টিকা দেওয়া গেলে কেউ বাদ পড়বেন না। এ ছাড়া যাঁদের নাম তালিকায় নেই, সেই সব নাম জুড়ে নিলেই হল। সকলে টিকা না-পেলে হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে না। বিপদ থেকেই যাবে। এর জন্য বিনামূল্যে প্রতিষেধকের পাশাপাশি সময় বেঁধে প্রত্যেককে ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় দেওয়া জরুরি।’’

গত এক বছর ধরে কোভিড প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটার তালিকা মিলিয়ে সকলকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা খুবই ভাল। কিন্তু তার জন্য যথেষ্ট টিকার জোগান চাই। সেটাই তো এখনও করেনি সরকার। বিজ্ঞানের থেকে অন্ধবিশ্বাসের উপরে জোর দেওয়ার জন্যই এই পরিণতি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy