বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই।
ইজ়রায়েল-ইরান সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের চেহারা নিলে ভারতের উপর তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আজ বেঙ্গালুরুতে একটি আলোচনাচক্রে জয়শঙ্কর বলেন, “যদি উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘাত আরও বাড়ে, তা হলে পশ্চিম এশিয়া থেকে আমদানিকৃত অশোধিত তেলের দাম এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে। আমদানির খরচ, জাহাজের খরচ, বিমার খরচ, জ্বালানির খরচ সমস্তই বাড়বে।” তবে একই সঙ্গে তিনি এও দাবি করেছেন এই সংঘাতের কোনও প্রভাব আসন্ন লোকসভা ভোটে পড়বে না।
আপাতত ইরানে আটক ইজ়রায়েলের জাহাজ থেকে ১৭ জন ভারতীয়কে মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা ভারতের কাছে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। তার পাশাপাশি এই সম্ভাব্য যুদ্ধকে রুখতে সাউথ ব্লক সক্রিয় পদক্ষেপ শুরু করেছে। জয়শঙ্কর নিজে কথা বলেছেন ইজ়রায়েল এবং ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে।
আসন্ন নির্বাচনে এই মূল্যবৃদ্ধি কোনও প্রভাব ফেলবে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে জয়শঙ্করের জবাব, “নির্বাচনের একেবারে কাছে চলে এসেছি আমরা। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ভোট শেষ। আমার মনে হয় না এর কোনও ফল পড়বে ভোটে।” তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, ইরান-ইজ়রায়েল সঙ্কট ভবিষ্যতে বিজেপির তথা দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থ-রাজনৈতিক বৃত্তে ছায়াপাত করতে পারে। বিজেপির ভোটের ইস্তাহারে এবং প্রচারে ভারত-পশ্চিম এশিয়া-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডরের কথা বলা হয়েছে। নয়াদিল্লির জি২০ সম্মেলনের পর থেকেই একে মোদী সরকারের বড় জয় হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে শাসক দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু ঘটনা হল ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই এই প্রকল্পের সম্ভাবনা অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল। পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে তা অদূর ভবিষ্যতে নিতান্তই অবাস্তব বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধের সম্ভাবনায় বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা ভারতের শেয়ার বাজারেও। উপসাগরীয় এলাকায় প্রায় ১ কোটি অনাবাসী ভারতীয় বসবাস করেন। বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ভারতে আসে সেখান থেকেই। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতা তৈরি হলে, একটা বড় চাপ ভারত সরকারের উপর আসতে পারে। রাশিয়া থেকে সস্তায় অশোধিত তেল আমদানি করলেও উপসাগরীয় অঞ্চল এখনও তেল এবং গ্যাস আমদানিতে ভারতের বৃহত্তম উৎস। ফলে তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা ভারতের বাজারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ভোটের মুখে ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে পক্ষ অবলম্বন করাও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রশ্নে যথেষ্ট জটিল। আসন্ন লোকসভা ভোটে লখনউ, মুর্শিদাবাদ, ভোপাল, হায়দরাবাদের মতো এলাকায় শিয়া তাস খেলার কৌশল নিয়েছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। কিছু দিন আগেই বিদেশমন্ত্রী তেহরানে ঘুরে এসেছেন সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে। মোদী আবু ধাবিতে হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমদাবাদে রোড শো করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনও পদক্ষেপ করা বিজেপি সরকারের কাছে প্রবল অস্বস্তির। ইতিমধ্যেই লখনউয়ের শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠেছে ইরানের ‘সাহসী ভূমিকার’ প্রশংসা করে। উত্তরপ্রদেশের রাজধানীর শিয়া অধ্যুষিত বাণিজ্যমহল বলছে, ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের রুখে দাঁড়ানোর ঘটনায় গোটা সম্প্রদায় গর্ব বোধ করছে। তাঁদের বক্তব্য, এই একটি ইসলামি রাষ্ট্রই প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলের ‘বর্বরতা’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আরবের ৫৪টি দেশ এখনও মুখ বুজে রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy