কন্নন গোপীনাথন
জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার প্রতিবাদে আইএএস ছেড়েছেন। মুখ খুলেছেন সমাজমাধ্যমে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ই-মেলে জানিয়েছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখে পড়তে চলেছেন তিনি। তাতে অবশ্য দমছেন না কন্নন গোপীনাথন। সাংবিধানিক অধিকার, গণতন্ত্র রক্ষা, বাক্স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলি নিয়ে গোটা দেশে ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ভয় পাচ্ছেন না?
ফোনে আনন্দবাজারের প্রশ্ন শুনে মহারাষ্ট্রের ঠাণে থেকে কন্ননের সপাট জবাব, ‘‘চাকরিটাই যখন ছাড়তে পেরেছি, তখন কিসের ভয়! আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি হয়েছে। পদোন্নতি আটকে যাবে বা মাইনে বাড়বে না— এ সব ভয় তো নেই। এখন আমি স্বাধীন মানুষ।’’
আজ, বুধবার কাশ্মীরে অচলাবস্থার ১০০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। গত ২৩ অগস্ট ইস্তফা দেওয়ার সময় দাদরা-নগর হাভেলিতে কর্মরত ছিলেন কন্নন। ইস্তফা অবশ্য গৃহীত হয়নি এখনও। কিন্তু প্রশাসনের অংশ হয়ে কেন মানুষের জন্য কিছু করা গেল না? কন্নন বললেন, ‘‘ইস্তফা দিয়ে মানবাধিকারের কথা বলছি, তাতে আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি হচ্ছে। চাকরি বাঁচিয়ে রেখে মানুষের জন্য কিছু করতে পারতাম?’’
এখন ভাড়াবাড়িতে থাকেন। বাসে-ট্যাক্সিতে যাতায়াত। মানিয়ে নিতে পারছেন ‘প্রাক্তন’ আমলা? কন্নন বলেন, ‘‘পরিবারের অসম্ভব সাহায্য রয়েছে। বিশেষত স্ত্রীর। তাই এক মুহূর্তে চাকরি ছাড়তে পেরেছিলাম। এখন চলছে সঞ্চয়ের টাকায়। তিনটে ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙেছি। জানি, বিকল্প উপার্জনের কথা ভাবতে হবে।’’ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রসিকতার সুরেই বলছেন, বেকার-দশা কাটানো খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু একই সঙ্গে বলছেন, মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের কথা শোনার পরে শুধু নিজের আখের গুছিয়ে থাকাটাও সম্ভব নয়। কন্ননের কথায়, ‘‘এই দেশে বিরুদ্ধ মত গ্রহণের প্রবণতা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ মুক্তির উপায় চান। এ সব দেখেশুনে আমি গণতন্ত্রের তৃণমূল স্তরে নেমে কাজ করতে আকর্ষণ বোধ করছি।’’
৩৩ বছরের কন্ননের বেড়ে ওঠা কেরলের মাটিতে। সেখানকার সংস্কৃতি তাঁর ভাবনা-চিন্তার পরিসরকে ব্যাপ্ত করেছে, এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। তবে বামশাসিত রাজ্যের রাজনীতির প্রভাব নিয়ে বিশেষ ভাবতে চান না। তাঁর স্পষ্ট কথা— ‘‘আমি রাজনীতি করব বলে চাকরি ছাড়িনি।’’ তাই কাশ্মীরের প্রাক্তন আইএএস শাহ ফয়সলের মতো কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে নিজের কথা শোনাতে চান না কন্নন। যেখানে যেখানে সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন, সেই সভাগুলোর আয়োজক কারা— সে সব নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন না। তিনি বলছেন, ‘‘দু’জন মানুষ শুনতে এলেও আমি যাই। আয়োজকদের কাছে শুধু একটাই কথা জানতে চাই, আমার যাতায়াতের ভাড়াটুকু তাঁরা দেবেন কি না!’’
মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে কন্নন কলকাতা আসছেন ১৫ নভেম্বর। বাংলার মানুষকেও তিনি বোঝাতে চান, শরীরের কোনও অংশ কেটে গেলে গোটা দেহেই যন্ত্রণা হয়। তাঁর সাফ কথা— ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করা ঠিক না ভুল, তা নিয়ে আলোচনা হোক। আমার আপত্তি প্রক্রিয়াটা নিয়ে। যে সরকার জীবন আর স্বাধীনতার মধ্যে যে কোনও একটাকে বেছে নিতে বলে, যারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় নিরাপত্তার জন্য মানুষকে গৃহবন্দি করে রাখতে হচ্ছে— সে সরকার অপদার্থ। তার দ্রুত গদি ছেড়ে দেওয়া উচিত।’’
কোনও দিন কাশ্মীরে যাননি কন্নন। কোনও বন্ধুও নেই উপত্যকায়। উপত্যকার তরুণ প্রজন্মের একের পর এক নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, প্রিয়জনের খোঁজ না-পাওয়া মুখগুলো তাঁর ভিতরের প্রতিবাদ বার করে এনেছিল। ফোন রাখার আগে বললেন, ‘‘শুধু কাশ্মীর নয়, যে কোনও জায়গায় মানুষের অধিকার খর্ব হলে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে। বাক্স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার বা গণতন্ত্র রক্ষার উপায়গুলো জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy