গোয়া নিয়ে সরব মমতা ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ায় পৌঁছনোর আগে, সে রাজ্যে রাজনীতির হাওয়া গরম হতে শুরু করল। আজ দুপুরে পানজিমের আজাদ ময়দানে জনতার চার্জশিট প্রকাশের জন্য পুলিশের অনুমতি চেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অভিযোগ তুলে শেষ মুহূর্তে অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। যে আড়ম্বরের সঙ্গে অনুষ্ঠান করতে চাওয়া হয়েছিল, তা সম্ভব না হলেও, আজ ওই ময়দানে দাঁড়িয়েই অবশ্য তৃণমূলের সাংসদ ও নেতারা চার্জশিট প্রকাশ করেছেন।
এই বিষয় নিয়ে আজ সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ি থেকে তিনি বলেছেন, “আমি গোয়ায় যাব। তার আগে আজ আমাদের গোয়ায় পার্টির কাজ শুরু করার দিন ছিল। আগাম অনুমতি থাকলেও অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। আমাদের চারজন সাংসদ ফুটপাতে অনুষ্ঠান করেছেন। আমিও বলছি, আমি বরাবর স্ট্রিট ফাইটার। রাস্তায় থাকি। রাস্তা থেকেই লড়াই করব। চায়ের দোকানে বসে পার্টি করে দেখিয়ে দেব।”
সন্ধেয় বিবৃতি দিয়ে তৃণমূল বলেছে, পানজিমের অনুষ্ঠানটি করার কথা ছিল দুপুর আড়াইটেয়। কিন্তু আইন শৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে পুলিশ শেষ মুহূর্তে এসে সংবাদমাধ্যমকে সরিয়ে দেয়। জানিয়ে দেয়, তারা অনুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছে না। প্রতিবাদে কালো ব্যান্ড এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে মূল মঞ্চের নীচে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে চার্জশিট প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতারা। রাজ্যের কোণঠাসা অর্থনীতি, বেহাল পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে তৃণমূল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সমাজের বিভিন্ন স্তরের নাগরিক, বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। দেখা গিয়েছে, মানুষ ক্ষোভে ফুটছে। এই চার্জশিট তারই প্রতিফলন।’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গোয়ায় বিজেপি-বিরোধী প্রধান দল কংগ্রেসও তো জমি তৈরির চেষ্টা করছে ভোটের আগে। ফলে তৃণমূলের সক্রিয়তায় বিরোধী ভোট ভাগের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে কিনা? সনিয়া গাঁধীর দলের বক্তব্য, মোদী সরকার নাকি কংগ্রেস— তৃণমূলের প্রধান শত্রু কে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না! অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে চুক্তি করে বিরোধী জোট ভাঙার চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর গোয়া যাওয়া নিয়ে অধীরের মন্তব্য, ‘‘যেখানেই কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী, সেখানেই উনি কংগ্রেসকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। এটাই চুক্তি। কারণ, মোদীর জনপ্রিয়তা কমেছে। এখন ওঁর ভয়, বিরোধীদের ভোট আরও বাড়বে। বিরোধীরা একজোট হলে বিপদ। তাই মোদীর রণকৌশল হল, দালাল ধরতে হবে। যাতে বিরোধীদের জোট না হয়।” সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “গোয়ায় তৃণমূলের যত পর্যটনই চলুক, ভিত না থাকলে, তার কোনও প্রভাব পড়বে না।”
‘মিশন গোয়া’ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ২০১৭ সালে রাজ্যবাসী বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগে যে ভাবে কংগ্রেসের দশজন বিধায়ক গেরুয়া শিবিরে চলে গিয়েছে, তাতে গোয়ার মানুষ কংগ্রেসকে নিয়ে হতাশ। সেখানে প্রকৃত কংগ্রেস যদি কেউ থেকে থাকে, সেটা তৃণমূলই।
আজ সকাল থেকেই গোয়ার ময়দানে নেমে পড়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। গোয়ার সৈকতে রহস্যজনক ভাবে মৃত সিদ্দি নাইকের বাড়িতে যান সৌগত রায়, বাবুল সুপ্রিয়, মহুয়া মৈত্ররা। গত অগস্টে উনিশ বছরের তরুণী সিদ্দির জলে ডোবা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে খুন করা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, সিদ্দির বাবা তাঁদের জানিয়েছেন, মেয়ের মৃত্যুর তদন্ত যেমন সঠিক ভাবে হয়নি, তেমনই তাঁকে দিনের পর দিন হেনস্থা করেছে গোয়া পুলিশ। সৌগত রায় বলেন, ‘‘আমরা ওঁদের সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বলেছি। আশ্বাস দিয়েছি, পুলিশের এমন কাজ নিয়ে সংসদে সরব হব। আমরা জানিয়েছি, গোয়ায় যদি তৃণমূলের সরকার হয়, তা হলে ঘটনার তদন্ত নতুন করে হবে।’’ এ দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছনোর আগেই গোয়ায় গুঞ্জন, বলিউডের অভিনেত্রী ও সেখানকার ভূমিকন্যা বর্ষা উসগাঁওকর তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। বর্ষার বাবা অচ্যুত কে এস উসগাঁওকর ছিলেন গোয়ার ডেপুটি স্পিকার। সেখানকার মন্ত্রীও ছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy