ফাইল চিত্র।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদী বারবার মনমোহন সিংহ সরকারের কাছে সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা ফেরত আনার দাবি তুলতেন। প্রতিশ্রুতি দিতেন ক্ষমতায় এলে সুইস ব্যাঙ্কে জমা কালো টাকা দেশে ফেরত আনারও।
সেই নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারতীয়দের সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত জমা টাকার পরিমাণ সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিল। ২০২০ সালে তা ২০,৭০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ১৩ বছরে সর্বোচ্চ। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তুলনায় কিছুটা কম টাকা জমতে দেখা গিয়েছিল। এ বার ২৮৬% বেড়ে গিয়েছে! সুইৎজ়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা অর্থ কমলেও বন্ড, সিকিউরিটিজ় ও অন্যান্য ভাবে সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ বিপুল ভাবে বেড়েছে। অন্য ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সুইস ব্যাঙ্কে জমা টাকার পরিমাণও বেড়েছে।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের প্রচারে মোদী বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে তিন বছরে বিদেশে গচ্ছিত সমস্ত কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে গরিবদের মধ্যে বিলি করে দেবেন। দাবি ছিল, সে ক্ষেত্রে গরিবদের মাথাপিছু দেওয়া সম্ভব ১৫ লক্ষ টাকা। যদিও পরে বিজেপিরই একাধিক প্রথম সারির নেতা বলেছিলেন, মোদীর ওই প্রতিশ্রুতি ছিল ‘নির্বাচনী জুমলা’!
মোদীর অভিযোগ ছিল, ইউপিএ-সরকারের বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরানোর ‘হিম্মত’ নেই। কারণ কংগ্রেসের লোকেরাই এই ‘পাপ’-এ ডুবে। পুরনো কথা মনে করিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ প্রশ্ন ছুড়েছেন, “তিন বছরের বদলে সাত বছর কেটে গিয়েছে। মোদীজির কি ইচ্ছাশক্তি নেই? নাকি ওই সব অর্থ তাঁর বন্ধুদের?”
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য মনে করাচ্ছেন, সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ মানেই তা কর ফাঁকির কালো টাকা নয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সুইস ব্যাঙ্কের ভারতীয় শাখায় জমা অর্থও রয়েছে। বিভিন্ন ট্রাস্ট, সংস্থাও টাকা রাখে। অতীতে ভারত ও সুইৎজ়ারল্যান্ড, দুই দেশই বলে এসেছে, বিআইএস (ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশন্যাল সেটলমেন্ট)-এর পরিসংখ্যান থেকে আরও ভাল ভাবে বোঝা যায়, ব্যক্তিগত স্তরে ভারতীয়রা কতখানি অর্থ জমা রেখেছেন। সেই পরিসংখ্যানও বলছে, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০-তে ভারতীয়দের জমা অর্থ ৩৯ শতাংশ বেড়েছে।
কংগ্রেসের দাবি, সুইস ব্যাঙ্কে কার, কত কালো টাকা রয়েছে, কেন্দ্র তা জানিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। মোদী সরকার সাত বছরে কী পরিমাণ কালো টাকা বিদেশ থেকে উদ্ধার করেছে, তা-ও খোলসা করা হোক। সুইস ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৬ সালের পর থেকে শুধু ২০১১, ২০১৩ ও ২০১৭ বাদে লাগাতার ভারতীয়দের জমা টাকার অঙ্ক কমেছে। ২০১৮ থেকে ভারত ও সুইৎজ়ারল্যান্ডের মধ্যে কর জমা সংক্রান্ত তথ্য আদানপ্রদান শুরু হয়েছে। তার পরেও কেন টাকা জমানোর প্রবণতা বাড়ছে, এ নিয়ে সরকারি ব্যাখ্যা মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy