Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Uttarkashi Tunnel Rescue Operation

‘মুড়ি-এলাচ খেয়ে মনে হল কেউ এসে বাঁচাবে’! সুড়ঙ্গের ভিতরের আশা-আতঙ্কের অভিজ্ঞতা শোনালেন শ্রমিক

উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে যে ৪১ জন আটকে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন জমরা ওঁরাও। তিনি শোনালেন সুড়ঙ্গের ভিতরে থাকার সময় তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।

উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে উদ্ধারকাজের ছবি।

উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গে উদ্ধারকাজের ছবি। ছবি: পিটিআই ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
উত্তরকাশী শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২২
Share: Save:

অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে সু়ড়ঙ্গ। ভরসা বলতে ছিল সুড়ঙ্গে কাজ করার জন্য লাগানো বৈদ্যুতিক বাতি। দিন-রাতের হিসাব বুঝতে বুঝতে সেই সুড়ঙ্গেই ১৭ দিন কাটিয়ে দিয়েছেন ৪১ জন শ্রমিক। বেরিয়ে আসবেন, এই আশা নিয়ে চালিয়ে গিয়েছিলেন বেঁচে থাকার লড়াই। সেই যুদ্ধে তাঁরা জিতেওছেন। আটকে পড়ার ১৭ দিনের মাথায়, মঙ্গলবার উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসেছেন ওই ৪১ জন। কিন্তু অন্ধকার সুড়ঙ্গে কী ভাবে সময় কেটেছিল তাঁদের? কী ভাবেই চালিয়ে গিয়েছিলেন লড়াই? সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে অভিজ্ঞতা শোনালেন এক শ্রমিক।

ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলা থেকে শ্রমিক হিসাবে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সি জমরা ওঁরাও। ধস নামার কারণে বাকি শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর সঙ্গে কথা বলার সময় জমরা জানান, ১২ নভেম্বর ভোরে সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় একটা বিকট শব্দ শুনতে পান তাঁরা। তাঁদের চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ। জমরার কথায়, “আমরা প্রাণ বাঁচাতে পড়িমরি করে দৌড়েছিলাম। লাভ হয়নি। কেউ বেরোতে পারিনি। সকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটকে পড়েছি। সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। খুব খিদে পেয়েছিল। ভয় গ্রাস করছিল। সাহায্যের জন্য প্রার্থনা শুরু করি। কিন্তু আশা ছাড়িনি।”

জমরা জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর টানা ২৪ ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হয়েছিল তাঁদের। তার পর খাবার পাঠায় প্রশাসন। প্রথম বার খাবার হিসাবে এসেছিল মুড়ি এবং এলাচ। সেই খাবার খেয়েই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছিলেন বলে জানান জমরা। তিনি বলেন, “২৪ ঘণ্টা পর যখন আমরা প্রথম খাবার খেলাম, তখন উপলব্ধি হল যে বেঁচে আছি। আমরা বুঝতে পারি যে কেউ ঠিক আমাদের কাছে পৌঁছবে। আমাদের উদ্ধার করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। আমদের আশা আরও বাড়ে।’’

জমরা আরও জানিয়েছেন, কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে সময় পার করতে মোবাইলের গেমই ছিল তাঁদের ভরসা। মোবাইলে লুডো খেলে অনেকটা সময় পার হয়েছে তাঁদের। বাইরে থেকে চার্জার পাঠিয়ে দেওয়ায় ফোন চার্জ করতে অসুবিধা হয়নি। তবে নেটওয়ার্ক না থাকায়, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মোবাইলে গেম খেলা ছাড়া একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলে এবং মনোবল বাড়িয়েও সুড়ঙ্গের মধ্যে তাঁরা সময় কাটিয়েছিলেন বলে জমরা জানিয়েছেন।

উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে যে ৪১ জন আটকে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন জমরা। জমরা জানিয়েছেন, স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে মাসে ১৮ হাজার টাকার জন্য তিনি ওই সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন। ১৭ দিন পর মঙ্গলবার খোলা আকাশে নিশ্বাস নেওয়ার পর জমরা বলেন, ‘‘আমি ভাল আছি। আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখেছিলাম এবং ঈশ্বর আমাদের শক্তি দিয়েছেন। এটাও বিশ্বাস রেখেছিলাম যে, যে হেতু ৪১ জন আটকে রয়েছি, তাই কেউ ঠিক আমাদের উদ্ধার করবে। স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছিলাম। যাঁরা ১৭ দিন ধরে লাগাতার পরিশ্রম করে আমাদের উদ্ধার করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।”

জমরা এ-ও জানিয়েছেন যে, তিনি শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। যদিও তিনি আর সুড়ঙ্গের কাজে হাত দেবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত বাড়িতে পৌঁছে নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy