নয়াদিল্লি স্টেশনে মহাকুম্ভের পুণ্যার্থীদের ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৮ জনের। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা এবং শিশু। শনিবার রাতে নয়াদিল্লি থেকে ট্রেনে প্রয়াগরাজে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। সেই সময়ে ভিড়ের চাপে দুর্ঘটনা ঘটে। কী ভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হল রাজধানীর রেলস্টেশনে? শনিবার রাত ৮টার পর ঠিক কী কী ঘটেছিল?
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়াগরাজে যাবেন বলে শনিবার রাতে প্রচুর মানুষ নয়াদিল্লি স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন। সেখান থেকে একাধিক ট্রেন হয় প্রয়াগরাজ পর্যন্ত যায়, অথবা প্রয়াগরাজের উপর দিয়ে অন্য গন্তব্যে যায়। সেই ট্রেনগুলির আশায় দাঁড়িয়েছিলেন কয়েকশো মানুষ। অভিযোগ, পর পর দু’টি ট্রেন সঠিক সময়ে স্টেশনে পৌঁছয়নি। ট্রেনগুলির সময় পিছিয়ে গিয়েছিল বেশ খানিকটা। এই দু’টি ট্রেনে যে যাত্রীদের ওঠার কথা ছিল, স্টেশনের ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তাঁরা জড়ো হয়েছিলেন। সময়ে ট্রেন না-আসায় ভিড় বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন:
স্বতন্ত্র সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর-রাজধানী এক্সপ্রেস— এই দু’টি ট্রেনই নয়াদিল্লি স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজের উপর দিয়ে অন্য গন্তব্যে যায়। এ ছাড়া কুম্ভমেলায় যাওয়ার জন্য ওই স্টেশন থেকে তৃতীয় ট্রেন প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস। অভিযোগ, শনিবার রাতে প্রথম দু’টি ট্রেন সময়ে আসেনি। রাত ৮টার পর থেকেই স্টেশনে থিকথিকে ভিড় হয়েছিল। বহু মানুষ অপেক্ষা করছিলেন কুম্ভমেলার ট্রেনের জন্য। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে রাত ১০টা নাগাদ স্টেশনের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোকে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস।
কুম্ভমেলায় যাঁরা যেতে চান, প্রত্যেকেই এই ট্রেনের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু সকলেই বুঝতে পেরেছিলেন, এত মানুষ একটি ট্রেনে উঠতে পারবেন না। সেই কারণেই যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে ট্রেনটিতে উঠতে চেয়েছিলেন। ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের পাশাপাশি ১২ এবং ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকেও মানুষ ছুটে আসেন। ভিড়ের ঠেলায় এই সময়ে অনেকে পড়ে গিয়েছিলেন। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা পড়ে গিয়েছেন, তাঁদের মাড়িয়েই ট্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বাকিরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় স্টেশনে উপস্থিত রেলপুলিশের আধিকারিকদের। ঘটনাস্থলে আসে দমকলও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, স্টেশনে ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম বদলের বিষয়ে একটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যে ট্রেনের আসার কথা, সেটি ১৬-তে আসবে বলে ঘোষণা হয়। দু’দিক থেকে ভিড় প্ল্যাটফর্ম বদলের চেষ্টা করে। তাতেই এই ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া, শনিবার রাতে প্রায় ১৫০০টি জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল নয়াদিল্লি স্টেশনে।
আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্টেশন থেকেই কয়েক জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। শনিবার রাতে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। পরে হাসপাতাল থেকে আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর আসে। পুলিশ এই মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিশ্চিত করেছে। মৃতদের মধ্যে আছেন ১১ মহিলা, চার শিশু এবং তিন জন পুরুষ।
রাতেই এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকালে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। রেলের তরফে এখনও পদপিষ্টের ঘটনা স্বীকার করা হয়নি। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শনিবার রাত সাড়ে ১১টার পর লেখেন, ‘‘নয়াদিল্লি স্টেশনে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রেলপুলিশ এবং দিল্লি পুলিশ সেখানে আছে। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য বিশেষ কয়েকটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ রবিবার সকালে রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, রেলের মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, শনিবারের ঘটনায় যাঁরা গুরুতর জখম, তাঁরা পাবেন আড়াই লক্ষ টাকা। যাঁদের আঘাত সামান্য, তাঁদের এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।