উত্তরপ্রদেশের গ্রাম থেকে আট মাস আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল কিশোরী। এত দিন পর আচমকা সমাজমাধ্যমে থেকে তাকে খুঁজে পেল পরিবার! কিশোরীর আট মাস ব্যাপী ‘নরকযন্ত্রণা’র অবসান ঘটল অবশেষে। পুলিশের জালে ধরা পড়লেন তার হেনস্থাকারীরা। অভিযোগ, শেষ বার কিশোরীকে কেনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে। তাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে সাড়ে তিন লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন এক যুবক। হবু স্ত্রীর সঙ্গে ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করতেই পুলিশ কিশোরীর হদিস পায়। গ্রেফতার করা হয় ওই যুবককে।
উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরীর বাসিন্দা ১৭ বছরের ওই কিশোরী। আট মাস আগে কোচিং থেকে ফেরার পথে পাশের গ্রামের এক যুবক তাকে অপহরণ করেন বলে অভিযোগ। কিশোরীকে একাধিক বার ধর্ষণ করা হয়। তার পর কয়েক লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় অন্য এক জনের কাছে। এ ভাবে পর পর পাঁচ জনের হাত ঘুরে রাজস্থানে পৌঁছয় নির্যাতিতা। সেখানে তার ভাগ্য ফেরে। রাজস্থানের এক যুবক তাকে বিয়ে করতে চেয়ে ‘কিনে’ নেন বলে অভিযোগ। হবু স্ত্রীর সঙ্গে একগুচ্ছ ছবি তুলে তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। সেই ছবি চোখে পড়ে ৬৫০ কিলোমিটার দূরে মৈনপুরীর গ্রামের লোকজনের। উদ্ধার করা হয় কিশোরীকে।
আরও পড়ুন:
পুলিশ জানিয়েছে, রাজস্থানের অজমেরে এক যুবকের কাছ থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। যুবকের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁদের পুত্রের জন্য উপযুক্ত পাত্রীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না কিছুতেই। কমবয়সি পাত্রী চাইছিলেন তাঁরা। সেই সময়ে নীরজ নামের যুবকের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয় এবং কিশোরীর খোঁজ পান। টাকা দিয়ে তাঁরা বধূ কিনেছেন বলে পুলিশকে জানান। তাঁদের পুত্রের পাশাপাশি সেই নীরজকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
পরে পুলিশ ওই কিশোরীর বয়ান রেকর্ড করেছে। সে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশকে জানিয়েছে, নীরজ তাঁকে অপহরণ করে। মৈনপুরী থেকে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় এটাওয়াতে। সেখানে জোর করে মাদক সেবন করিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পর রবি এবং ববি নামের দুই যুবক কিশোরীকে কিনে নেন। সে চলে যায় আগরায়। কিশোরী বলে, ‘‘বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি ভুল লোকের হাতে পড়েছি। চারপাশ যেন নরক হয়ে উঠেছিল। ওই দু’জন তার পর আমাকে অজমেরে এক মহিলার কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন আর এক জনের কাছে। সেখানে জোর করে আমার বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।’’
মৈনপুরীতে পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছে কিশোরী। সে জানিয়েছে, এই পরিস্থিতির হাত থেকে কোনও দিন সে মুক্তি পাবে বলে ভাবতে পারেনি। জীবনের আশাও ছেড়ে দিয়েছিল। মৈনপুরী থানার এসপি (গ্রামীণ) অনিল কুমার জানান, এই ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা অনুযায়ী, অপহরণ, ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা এবং শিশু পাচারের মামলা রুজু করা হয়েছে। পকসো আইনেও মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যা দুই।