Advertisement
E-Paper

ভাঙছে ঐতিহ্যের শিলং ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন বিল্ডিং, শৈশবের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন পুরনো বাঙালিরা

শিলংয়ের বাঙালির স্মৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে পুলিশবাজারের চপলা বুক স্টল আর শিলং ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন বিল্ডিং।

শিলং ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন বিল্ডিং।—নিজস্ব চিত্র।

শিলং ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন বিল্ডিং।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০৬:১৬
Share
Save

খাসি পাহাড়ে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার পাচ্ছে। ইংরাজি স্কুল তৈরি হচ্ছে। কিন্তু খাসিরা ইংরাজিতে মোটেই সড়গড় নন। যতটা সড়গড় বাঙালিরা। তাই পাহাড়িদের পাশে দাঁড়ালেন এক বাঙালি প্রকাশক। বিভূভূষণ চৌধুরী। লিখলেন ও প্রকাশ করলেন প্রথম খাসি-ইংরাজি অভিধান। প্রকাশ করলেন খাসি স্কুলগুলির জন্য একের পর এক পাঠ্যপুস্তক।

১৯৮২-৮৩ সাল। লাবানে তৈরি হয়েছে রাইড লাবান কলেজ। স্বীকৃতির জন্য নেহু কর্তৃপক্ষ আসবে। কিন্তু কলেজের স্বীকৃতি পেতে গ্রন্থাগারে দরকার অন্তত আড়াই হাজার বই! বিপত্তারণ সেই বিভূভূষণ। মেঘালয়ের প্রাক্তন মন্ত্রী মানস চৌধুরী জানাচ্ছিলেন, “আমরা গিয়ে ধরলাম, এখন বইগুলো ধার দিন। পরিদর্শনের পরেই ফেরত দিয়ে দেব। এককথায় রাজি। পরিদর্শনের পরেও সেই বইয়ের সম্ভার তিনি আর ফেরত নেননি।”

“আমার শৈশবের আরও একটা টুকরো খসে পড়ল”- শিলং তথা মেঘালয়ের সবচেয়ে পুরনো বইয়ের দোকান হিসেবে পরিচিত চপলা বুক স্টলে হাতুড়ির ঘা পড়ার খবর পেয়েই এভাবেই টুইটারে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শৈশবের স্মৃতিমেদুর রাজ্যপাল তথাগত রায়। যাঁর শৈশবের অনেকটাই শিলংয়ের লোয়ার জেল রোডে কেটেছে।

শিলংয়ের বাঙালির স্মৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে পুলিশবাজারের চপলা বুক স্টল আর শিলং ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন বিল্ডিং। ১৮৬৪ সালে তৈরি হওয়া পুলিশবাজারে ১৯০১ সালে তৈরি হয়েছিল শিলং ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন বিল্ডিং। উপরতলায় ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ছিল আসাম লাইব্রেরি। ছিল জীবন বিমা ও বট্যানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার দফতর। নীচের তলায় চপলা বুক স্টল এবং প্রকাশন। এখন চপলা ছাড়াও সেখানে আছে একটি হোটেল ও ওষুধ ডিস্ট্রিবিউটার সংস্থা।

শিলংয়ে চৌধুরী পরিবারের পঞ্চম পুরুষ চলছে। বর্তমান মালিক বুদ্ধদেব চৌধুরী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং করে আসার পরে ১৯৭০ সাল থেকে অকৃতদার কাকা বিভূভূষণ চৌধুরীর সঙ্গে চপলার ভার নেন। তারও তিন বছর পরে অসমের রাজধানী শিলং থেকে গুয়াহাটিতে স্থানান্তরিত হয়। তাই রাজ্যপাল, প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে তাবড় ব্যক্তিরা বইয়ের খোঁজে আসতেন চপলাতেই। রবীন্দ্র-শরৎ-বঙ্কিমের বই বা অসমীয়া সাহিত্যিকদের বইয়ের একমাত্র ভাণ্ডার ছিল চপলা। বাড়ির মালিকানাবদলের খবর পেয়েই সিঁদুরে মেঘ দেখে শিলং ব্রাহ্ম সমাজ কমপ্লেক্সে দোকান ভাড়া নিয়ে চপলার বইয়ের সম্ভাব সেখানে সরাতে শুরু করেছেন বুদ্ধদেববাবু।

শিলং ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন বিল্ডিং ভাঙা হচ্ছে জানতে পেরে, রাজ্যপাল তথাগত রায় লেখেন, “আমরা চপলা বুক স্টল হিসেবেই বাড়িটাকে চিনতাম। আস্তে আস্তে ছোটবেলার শিলংয়ের সব চিহ্নই লুপ্ত হচ্ছে!”

মানসবাবু বলেন, এখানকার মানুষের বৌদ্ধিক বিকাশে বিভূভূষণবাবু ও চপলার অবদানের সঠিক মূল্যায়ণ কোনওদিনই হয়নি।

Shillong Banking Corporation Building Shillong

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}