শিমলা গ্রামীণ কেন্দ্র থেকে জয়ী কংগ্রেস নেতা বিক্রমাদিত্য সিংহ। ছবি: পিটিআই।
একার জোরে শেষ জয় এসেছিল ৪ বছর আগে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে। এ বার হিমাচল প্রদেশ জয়ের সেই পুরনো স্বাদ ফিরিয়ে দিলেও স্বস্তিতে নেই কংগ্রেস। সে রাজ্যের নির্বাচনে জয়ের পরেই মাথাচাড়া দিয়েছে একাধিক নেতার মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি। এই পরিস্থিতিতে নবনির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করতে শিমলায় পৌঁছলেন এআইসিসির তিন পর্যবেক্ষক— ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল, হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা এবং রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব শুক্ল।
কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুক্রবারে বিধায়কদের বৈঠকে পরিষদীয় নেতা নির্বাচনের সম্ভবনা কম। বরং সর্বসম্মত ভাবে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হতে পারে সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের হাতে। হুডা শুক্রবার সেই ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাব।’’
এরই মধ্যে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের ছেলে তথা নবনির্বাচিত বিধায়ক বিক্রমাদিত্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই বার মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার নই।’’ তবে বিক্রমাদিত্য সরে দাঁড়ালেও তাঁর মা প্রতিভা ইতিমধ্যেই ‘বীরভদ্র পরিবারের চাহিদা’র কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। মান্ডির সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী প্রতিভাই ছিলেন এ বার হিমাচলে কংগ্রেসের প্রচারের মুখ।প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান সুখবিন্দর সিংহ সুখু এবং বিদায়ী বিরোধী দলনেতা মুকেশ অগ্নিহোত্রীও রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে। তাঁরা দু’জনেই বিধানসভা ভোটে জিতে এসেছেন। জিতেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের আরও আর এক প্রভাবশালী প্রাক্তন সভাপতি, কুলদীপ রাঠৌরও।
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জাতপাতের অঙ্ক মিলিয়ে ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ জনগোষ্ঠী থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী মনোনীত করতে পারে কংগ্রেস। ঠাকুর জনগোষ্ঠীর প্রতিভা, সুখু, বা কুলদীপ মুখ্যমন্ত্রী হলে ব্রাহ্মণ মুকেশ উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। মুকেশ মুখ্যমন্ত্রী হলে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে কোনও ঠাকুর নেতাকে।
গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতার পালাবদলের ‘রেওয়াজ’ রুখে দিয়েছিল বিজেপি। এ বার একাধিক বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস ছিল, পড়শি রাজ্য হিমাচলেও সেই ‘জাদু’ দেখাবে তারা। বস্তুত, গত ৩৭ বছরে কোনও দল পর পর দু’বার জিতে ক্ষমতায় আসতে পারেনি হিমাচলে। এ বারের ভোটে সেই রেকর্ড ভাঙতে মরিয়া স্লোগান তুলেছিল বিজেপি, ‘রাজ নহি রেওয়াজ বদলো’ (ক্ষমতার বদল নয়, প্রথা বদল করো)। ভোটের ফল বলছে সেই স্লোগান কাজ করেনি দলের সভাপতি নড্ডার রাজ্যে।
হিমাচলের ৬৮টি আসনের মধ্যে ৪০টিতে জিতে ৫ বছর পরে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে কংগ্রেস। বিজেপি ২৫টিতে জয় পেয়েছে। ৩টিতে জিতেছে নির্দলেরা। তবে আসনের ফারাক ১৫ হলেও দু’দলের ভোটের পার্থক্য ১ শতাংশেরও কম! কংগ্রেসের ৪৩.৯ শতাংশ ভোটের জবাবে বিজেপির প্রাপ্তি ৪৩ শতাংশ। বহু আসনেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে মাত্র কয়েকশো ভোটের ব্যবধানে।
২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে ৪৪টিতে জিতেছিল বিজেপি। পেয়েছিল ৪৮.১ শতাংশ ভোট। ৪১.৭ শতাংশ ভোট পাওয়া কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছিল ২১টি বিধানসভা আসন। সিপিএম ১টি এবং নির্দল প্রার্থীরা ২টি বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিলেন সে সময়। গত বারের তুলানায় মাত্র ২ শতাংশ ভোট বাড়িয়েই দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে প্রায় দ্বিগুণ আসন পেয়ে গিয়েছে ‘হাত’। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, নয়া পেনশন প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ, আপেলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, সারের অপ্রতুলতার মতো সমস্যার পাশাপাশি, বিদ্রোহী প্রার্থীরা এ বার বিজেপি সরকারের পতনের জন্য ‘ভূমিকা’ নিয়েছেন বলে ভোটের ফলের বিশ্লেষণে ইঙ্গিত।
১৯৫৬ সালে পঞ্জাব ভেঙে তৈরি হয়েছিল হিমাচল। গত ফেব্রুয়ারিতে পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরে এ বার কেজরীওয়ালের দল হিমাচলেও লড়তে নেমেছিল। কিন্তু ‘ঝাড়ু’ প্রার্থীরা সাকুল্যে ভোট পেয়েছেন ১ শতাংশের সামান্য বেশি। এই হার বাড়লে হিমাচল এ বার ৩৬ বছরের রেওয়াজ ভেঙে দিত বলেই ভোট পণ্ডিতদের অনেকে মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy