Advertisement
E-Paper

মোদী-মোহিত গুজরাতে সর্বকালীন নজির গড়ল বিজেপি, তবে হিমাচল গেল ‘হাত’-এর মুঠোয়

‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ গড়ার পথে হোঁচট খেল বিজেপি। গুজরাতে জয়ের ইতিহাস গড়লেও হিমাচলে ক্ষমতাচ্যূত হল নরেন্দ্র মোদীর দল। ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানের পর দেশের তৃতীয় রাজ্য গেল ‘হাত’-এর দখলে।

গুজরাতে বিপুল ব্যবধানে জয়ের সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল বিজেপি।

গুজরাতে বিপুল ব্যবধানে জয়ের সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল বিজেপি। ছবি: পিটিআই।

সায়ন ত্রিপাঠী

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:০৮
Share
Save

‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’ গড়ার পথে হোঁচট খেল বিজেপি। ২৭ বছরের ‘জমে থাকা অসন্তোষ’ আর ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া’র দাবি হেলায় উড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতে নতুন রেকর্ড গড়ে ক্ষমতায় ফিরল তারা। কিন্তু বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার হিমাচল প্রদেশে ‘রাজ’ বদলানোর ঐতিহ্য মেনেই ৫ বছর পরে পদ্ম-শিবিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে কুর্সি ফিরে পেল কংগ্রেস।

১৮২ আসনের গুজরাত বিধানসভায় এ বার বিজেপির আসন ১৫৬ ছুঁতে চলেছে। ভেঙে গিয়েছে ১৯৮৫-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ১৪৯টি আসনে জেতার রেকর্ড। ১৯৬০ সালে বম্বে রাজ্য ভেঙে তৈরি হওয়া ওই রাজ্যে কখনওই এমন বিপুল ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়নি। বিজেপির প্রায় সাড়ে ৫২ শতাংশ ভোটের ‘জবাবে’ তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি (আপ)-র ঝুলিতে মাত্র ২৭.৩ ও ১২.৯ শতাংশ ভোট।

হিমাচলে জয়ের পর কংগ্রেস সমর্থকদের উল্লাস শিমলায়।

হিমাচলে জয়ের পর কংগ্রেস সমর্থকদের উল্লাস শিমলায়। ছবি: পিটিআই।

গুজরাতে বিজেপির রেকর্ড জয়ের নেপথ্যে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের ‘ভূমিকা’ দেখেছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ। কিন্তু ভোটের ফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, কংগ্রেস এবং আপের ভোট ‘এক বাক্সে’ পড়লেও বিজেপির টানা সপ্তম বারের জয় আটকাত না। বড় জোর সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাতে কিছু আসন বিজেপির হাতছাড়া হত। বস্তুত, মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বেও মহাত্মা গান্দীর রাজ্যে এমন ‘নিরঙ্কুশ’ হয়নি গেরুয়া শিবির।

এর আগে ২০০২ সালে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার আবহে বিধানসভা ভোটে ১২৭টি আসনে জেতাই সবচেয়ে ভাল ফল ছিল বিজেপির। তার পর থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রতি ভোটেই পদ্ম-শিবিরের আসন ধারাবাহিক ভাবে কমেছে। কিন্তু এ বার দেখা গেল উলটপুরাণ। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে গুজরাতের অধিকাংশ আসনেই বিপুল ভোটে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থীরা। গড়ে প্রায় ৪০ হাজার! ১ লক্ষের বেশি ভোটে জেতা প্রার্থীর সংখ্যা ৮। মুখ্য়মন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল আমদাবাদের ঘাটলোদিয়া কেন্দ্রে জিতেছেন ২ লক্ষের বেশি ব্যবধানে। যে ব্যবধান লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য!

দল
প্রাপ্ত আসন
সরকারে দরকার৯২
মোট আসন১৮২
বিজেপি ১৫৬
কংগ্রেস ১৭
আপ
অন্যান্য

অথচ ৫ বছর আগে ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটেও বিজেপির সঙ্গে কড়া টক্কর দিয়েছিল কংগ্রেস। ১৮২ আসনের বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ৭৭ জন ‘হাত’ চিহ্নের প্রার্থী। ৯৯টি আসনে জিতে কোনওক্রমে সরকার গড়েছিল বিজেপি। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ওই রাজ্যে ৪৪ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছিল। অন্য দিকে, বিজেপির ভোট ৪৯ শতাংশ ছিল। টানা আড়াই দশক ক্ষমতায় থাকার পরে প্রায় ৪ শতাংশ ভোটবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

সে সময় ভোটের আগে জিএসটি এবং নোটবন্দি নিয়ে ব্যবসায়ী মহলের ক্ষোভ, সংরক্ষণের দাবিতে পাটীদার গোষ্ঠীর আন্দোলনে বিকায়দায় পড়েছিল বিজেপি। এ বার কোনও প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার আঁচই ছিল না গুজরাতে। সব ক’টি বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই বিজেপির বিপুল জয়ের ইঙ্গিত ছিল। তা মিলে গিয়েছে পুরোপুরি। গত বারের তুলনায় ভোটের হার কম হওয়ায় বিরোধীদের তরফে ‘সরকারপন্থী নিরাসক্ত ভোটারদের’ বুথমুখী না হওয়ার যে ‘তত্ত্ব’ সামনে আনা হয়েছিল, তা-ও ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

দল
প্রাপ্ত আসন
সরকারে দরকার৩৫
মোট আসন৬৮
কংগ্রেস ৪০
বিজেপি ২৫
আপ ০০
অন্যান্য

কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে, গত ৫ বছরে ১৯ বিধায়ক-সহ একাধিক নেতার দলত্যাগ এবং বিজেপিতে যোগদানের ঘটনায় অনেক ভোটারই মুখ ফিরিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে শেষ বার গুজরাতে বিধানসভা ভোটে জেতা কংগ্রেস যে আদৌ বিজেপিকে হারাতে পারে সেই ভরসাটুকুও করতে পারেননি তাঁরা। আর বিজেপির পাশাপাশি এই মানসিকতার ‘ফল’ পেয়েছে আপও। প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালের ওই বিধানসভা ভোটে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাধবসিন সোলাঙ্কির ‘খাম’ (ক্ষত্রিয়, হরিজন, আদিবাসী, মুসলিম) সমীকরণে ভর করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল কংগ্রেস। এ বার ভোটের ‘ধরন’ বলছে, ক্ষত্রিয়, হরিজন, আদিবাসীদের (তফিসিলি জনজাতি) পাশাপাশি পটেল এবং অনগ্রসর (ওবিসি) ভোটের বড় অংশও গিয়েছে মোদী-শাহের পক্ষে। তা ছাড়া গতবার কংগ্রেসের পক্ষে যাওয়া জনজাতি সমর্থনে থাবা বসিয়েছে আপও।

মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই মোদী স্থানীয় স্তরে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার মোকাবিলায় একাধিক বিধায়কের টিকিট ছাঁটাইয়ের কৌশল নিয়েছিলেন। এ বারেও তার ব্যত্যয় হয়নি। ২০১৭-য় জয়ী প্রায় ৪০ জনকে মনোনয়ন দেয়নি বিজেপি। সেই তালিকায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী, উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেল এবং সৌরভ পটেল, ভূপেন্দ্র চূড়াসমার মতো হেভিওয়েট প্রাক্তন মন্ত্রীরা ছিলেন। দলের অন্দরে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে রূপাণী-নিতিনদের দিয়ে আগাম ভোটে না-লড়ার কথাও ঘোষণা করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এর পাশাপাশি দুই রাজ্যেই টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়া নেতাদের পত্রপাঠ বহিষ্কার করা হয় দু’রাজ্যেই।

বিজেপির রেকর্ড জয় এবং কংগ্রেসের ভরাডুবির পাশাপাশি গুজরাতের এ বারের ভোটে আপের উত্থানের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। ২০১৭ সালে প্রথম বার গুজরাতের বিধানসভা ভোটে লড়তে নেমে ২৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল আপ। সব ক’টিতেই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। ভোট পেয়েছিল সাকুল্যে ২৯,৫০৯টি (০.১ শতাংশ)। পাটিগণিতের হিসাব বলছে, এ বার কেজরীর দলের ভোট বেড়েছে ১২ শতাংশেরও বেশি। দিল্লি এবং পঞ্জাব বিধানসভায় জয়ের পরে গুজরাতে এই ভোটপ্রাপ্তির ফলে আপ জাতীয় দলের মর্যাদা পেতে চলেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতার পালাবদলের ‘রেওয়াজ’ রুখে দিয়েছিল বিজেপি। এ বার একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস ছিল, হিমালয় ঘেরা পড়শি রাজ্যেও সেই ‘জাদু’ দেখাবে তারা। বস্তুত, গত ৩৭ বছরে কোনও দল পর পর দু’বার জিতে ক্ষমতায় আসতে পারেনি হিমাচলে। এ বারের ভোটে সেই রেকর্ড ভাঙতে মরিয়া স্লোগান তুলেছিল ‘রাজ নহি রেওয়াজ বদলো’ (ক্ষমতার বদল নয়, প্রথা বদল করো)। ভোটের ফল বলছে সেই স্লোগান কাজ করেনি দলের সভাপতি নড্ডার রাজ্যে।

হিমাচলের ৬৮টি আসনের মধ্যে ৪০টিতে জিতে ৫ বছর পরে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে কংগ্রেস। বিজেপি ২৫টিতে জয় পেয়েছে। ৩টিতে জিতেছে নির্দলেরা। তবে আসনের ফারাক অনেকটা হলেও দু’দলের ভোটের পার্থক্য ১ শতাংশেরও কম! কংগ্রেসের ৪৩.৯ শতাংশ ভোটের জবাবে বিজেপির প্রাপ্তি ৪৩ শতাংশ। বহু আসনেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে মাত্র কয়েকশো ভোটের ব্যবধানে।

২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে ৪৪টিতে জিতেছিল বিজেপি। পেয়েছিল ৪৮.১ শতাংশ ভোট। ৪১.৭ শতাংশ ভোট পাওয়া কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছিল ২১টি বিধানসভা আসন। সিপিএম ১টি এবং নির্দল প্রার্থীরা ২টি বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছিলেন সে সময়। গত বারের তুলানায় মাত্র ২ শতাংশ ভোট বাড়িয়েই দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে প্রায় দ্বিগুণ আসন পেয়ে গিয়েছে ‘হাত’। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, নয়া পেনশন প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ, আপেলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, সারের অপ্রতুলতার মতো সমস্যার পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীরা এ বার বিজেপি সরকারের পতনের জন্য ‘ভূমিকা’ নিয়েছেন বলে ভোটের ফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণের ইঙ্গিত।

১৯৫৬ সালে পঞ্জাব ভেঙে তৈরি হয়েছিল হিমাচল। গত ফেব্রুয়ারিতে পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরে এ বার কেজরীওয়ালের দল হিমাচলেও লড়তে নেমেছিল। কিন্তু ঝাড়ু প্রার্থীরা সাকুল্যে ভোট পেয়েছেন ১ শতাংশের সামান্য বেশি। এই হার বাড়লে হিমাচল এ বার ৩৬ বছরের রেওয়াজ ভেঙে দিত বলেই ভোট পণ্ডিতদের অনেকে মনে করছেন।

Gujarat Assembly Election 2022 Himachal Pradesh Assembly Election 2022 Himachal Pradesh Assembly Election BJP Congress Narenda Modi Gujarat himachal pradesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।