Highest Paid Lawyer of Supreme Court Ram Jethmalani laid a Colourful Life dgtl
Ram Jethmalani
দুঁদে আইনজীবী, দুই স্ত্রীকে নিয়ে সংসার, জেঠমলানীর বর্ণময় জীবন যেন বলিউডি ফিল্ম
শেষ দিন অবধি দুই স্ত্রীকে নিয়েই অটুট ছিল সংসার। দুই পক্ষের স্ত্রীদের থেকে মোট চার সন্তান তাঁর। প্রথম স্ত্রী দুর্গার তিন জন সন্তান। রানি, শোভা এবং মহেশ। দ্বিতীয় স্ত্রী রত্নার একমাত্র ছেলে, জনক।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
ডাবল প্রোমোশন পেয়ে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছিলেন তেরো বছর বয়সে। সতেরো বছর বয়সে বম্বে ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এলএলবি ডিগ্রি। তখন নিয়ম ছিল, একুশ বছর বয়সের আগে আইনজীবী হওয়া যাবে না। শুধু এই মেধাবীর জন্য নিয়মের ব্যতিক্রম হয়েছিল। তিনি রাম জেঠমলানী।
০২১৬
জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। সাবেক বম্বে প্রেসিডেন্সির সিন্ধ প্রদেশে। বাবা বুলচন্দ গুরমুখদাস জেঠমলানী এবং মায়ের নাম পার্বতী বুলচন্দ। জেঠমলানী পড়তেন করাচির এস সি সহানি আইন কলেজে। তখন সিন্ধ প্রদেশে বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় এই কলেজ ছিল বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। বাবার মতের বিপরীতে গিয়েই আইন পড়া তাঁর।
০৩১৬
১৮ বছর বয়সে আত্মপ্রকাশ পেশাদার আইনজীবী হিসেবে। ওই বয়সেই প্রথম বিয়ে। সনাতন ভারতীয় রীতিতে বিয়ে করেছিলেন পরিবারের পছন্দের পাত্রী দুর্গাকে। প্রথম বিয়ের ছ’বছর পরে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের ঠিক আগে দ্বিতীয় বিয়ে। এ বার পাত্রী নিজের পছন্দের। ঘর বাঁধলেন আইনজীবী রত্না সহানির সঙ্গে।
০৪১৬
শেষ দিন অবধি দুই স্ত্রীকে নিয়েই অটুট ছিল সংসার। দুই পক্ষের স্ত্রীদের থেকে মোট চার সন্তান তাঁর। প্রথম স্ত্রী দুর্গার তিন জন সন্তান। রানি, শোভা এবং মহেশ। দ্বিতীয় স্ত্রী রত্নার একমাত্র ছেলে, জনক।
০৫১৬
আইনচর্চা করলেও জেঠমলানীর জীবন ছিল বর্ণময়। ২০১৫ সালে শোরগোল ফেলেছিল কিশোর কুমারের স্ত্রী লীনা চন্দ্রভরকরকে চুম্বনরত অবস্থায় তাঁর ছবি।
০৬১৬
তারও আগে অভিনেতা ধর্মেন্দ্রকে চুম্বনরত অবস্থায় জেঠমলানীর ছবি ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে।
০৭১৬
দেশভাগের আগেই সিন্ধ প্রদেশে মামলা লড়েছিলেন তিনি। করাচিতে শুরু করেছিলেন ল’ ফার্ম। কিন্তু উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য করাচি ছাড়তে বাধ্য হন। পকেটে মাত্র এক পয়সা নিয়ে চলে এসেছিলেন ওয়াঘার এ পারে। তৎকালীন বম্বে শহরে শুরু করেছিলেন একেবারে শূন্য থেকে। পরবর্তী জীবনে হয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত আইনজীবী।
০৮১৬
উদ্বাস্তু জেঠমলানীর বম্বেতে প্রথম মামলা ছিল শরণার্থীদের জন্যই। সে সময়ে সদ্য চালু হওয়া বম্বে রিফিউজিস অ্যাক্ট ছিল শরণার্থীদের প্রতি অমানবিক। এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এবং জয়ী হয়েছিলেন রাম জেঠমলানী।
০৯১৬
এক দশক পরে তিনি খবরের শিরোনামে আসেন নানাবতী মামলায়। ছয়ের দশকের শেষে চোরাচালান সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে মামলা লড়ায় তাঁর নাম হয়েছিল ‘স্মাগলার্স ল’ ইয়ার’।
১০১৬
হাই প্রোফাইল ডিফেন্স মামলায় ছিলেন বলিষ্ঠ নাম। অসংখ্য বার অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করেছেন আদালতে। হর্ষদ মেটা, কেতন পারেখ, ডেইডি অ্যাঙ্গাস, হাওয়ালা কাণ্ডে অভিযুক্ত এল কে আডবাণী, জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত মনু শর্মা, আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন হাজি মস্তান— সবার হয়ে সওয়াল করেছেন তিনি।
১১১৬
ইন্দিরা ও রাজীব গাঁধীর হত্যাকাণ্ডেও অভিযুক্তদের আইনজীবী হিসেবে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তালিকা আরও দীর্ঘ। টু জি স্পেকট্রাম কাণ্ডে কানিমোজি, আর্থিক তছরূপে জগনমোহন রেড্ডি, খনি মামলায় ইয়েদুরাপ্পা, সোহরাবুদ্দিন মামলায় অমিত শাহ-র আইনজীবী ছিলেন জেঠমলানী।
১২১৬
বাবা রামদেব, আশারাম বাপু, লালুপ্রসাদ যাদব, সুব্রত রায়, জয়ললিতা, অরবিন্দ কেজরীবাল— জীবনের বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্ত হয়ে রাম জেঠমলানীর শরণ নিয়েছিলেন এঁরা।
১৩১৬
১৯৭৫-’৭৭ সালে তিনি ছিলেন বার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান। ইন্দিরা গাঁধীর সমালোচনা করায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরে দেশ জুড়ে এর বিরুদ্ধে আইনজীবী মহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় তা নাকচ হয়ে যায়। এই বিতর্কের মধ্যেই জেঠমলানী কানাডা চলে যান। দেশে ফেরেন দশ মাস পরে, জরুরি অবস্থা উঠে যাওয়ার পরে।
১৪১৬
সাতের দশকের শেষ থেকে শুরু পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক জীবন। বিজেপি-র টিকিটে জয়ী হয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম লোকসভার সদস্য হন। ১৯৯৬ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে আইনমন্ত্রী হন। ১৯৯৮ সালে দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের। এর পর ১৯৯৯ সালে ফের আইনমন্ত্রী। তার আগে ১৯৯৫ সালে নিজের দল তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সে যাত্রা বেশি দীর্ঘ হয়নি।
১৫১৬
২০০৪ সালে নির্দল প্রর্থী হিসেবে লখনউ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে। কিন্তু পরাজিত হন। আবার ২০১০ সালে বিজেপি-র টিকিটে রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার সদস্য হন। দলবিরোধী মন্তব্যের জেরে তিনি বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত হন ২০১২ সালে।
১৬১৬
২০১৭ সালে দীর্ঘ কেরিয়ার থেকে অবসর ঘোষণা করেন এই বর্ণময় চরিত্র। এ বার চলে গেলেন জীবনের মঞ্চ থেকে। ৯৬ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগে। ২০১৯-এর ৮ সেপ্টেম্বর। রেখে যাওয়া ব্যাটন তুলে নিয়েছেন তাঁর ছেলে মহেশ এবং মেয়ে রানি। ২০১২ সালে মারা যান রানি জেঠমলানী।