ছবি: সংগৃহীত।
হাথরসে দলিত তরুণীকে ধর্ষণ, খুনের ঘটনাকে ‘বিরল, ভয়ঙ্কর ও মর্মান্তিক’ বলে আখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই ঘটনায় সাক্ষীদের ও মৃতার পরিবারের নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং মৃতার পরিবার কোনও আইনজীবীর ব্যবস্থা করতে পেরেছে কি না, তা জানাতে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, হাথরসের ঘটনার তদন্ত যাতে ঠিক ভাবে হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। যোগী আদিত্যনাথের সরকার অবশ্য তাদের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আজ সুপ্রিম কোর্টেও হাজির করেছে।
প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে, বিচারপতি এ এস বোপান্না ও বিচারপতি ভি রামা সুব্রহ্মণ্যমের বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলায় আর্জি জানানো হয়, হাথরসের ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া উত্তরপ্রদেশের বাইরে স্থানান্তরিত করা হোক। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের জন্যও বলা হয়। হাথরসের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের তলবও করা হয়েছে। শীর্ষ আদালত আজ মামলা স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে সব পক্ষের মতামত জানতে চেয়েছে।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আজ সুপ্রিম কোর্টে উত্তরপ্রদেশ সরকারের হয়ে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেন, হাথরসের ঘটনার তদন্ত শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে সিবিআইকে দিয়ে করানো যেতে পারে। বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটের তদন্তেও রাজ্য সরকারের আপত্তি নেই। আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ মৃতার পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জি জানান। কোর্টে তিনি বলেন, মৃতার পরিবার সিবিআই তদন্ত চাইছে না, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিটের তদন্ত চাইছে তারা। এই সময়েই বিচারপতিরা তাঁর কাছে জানতে চান, এ কথা বলার ক্ষেত্রে তাঁর এক্তিয়ার কি? ইন্দিরার উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘তবুও আমরা আপনার কথা শুনছি। কারণ, এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। আর মামলাটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’’ আইনজীবী কীর্তি সিংহ ১০০ জন মহিলা আইনজীবীর হয়ে আর্জি জানান, শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে তদন্ত হোক। আর এক আইনজীবী প্রদীপকুমার যাদব বলেন, সমাজের মহিলাদের হয়ে সওয়াল করছেন তিনি। এই সময়ে প্রধান বিচারপতি বোবডের মন্তব্য, ‘‘বোঝার চেষ্টা করুন, আমরা কোনও ভাবেই হাথরসের ঘটনা থেকে নজর ঘুরিয়ে নিচ্ছি না। এটা ভয়ঙ্কর ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন হল, একই ধরনের কত যুক্তি আমরা শুনতে পারি?’’
আরও পড়ুন: ধার করার দায় ঠেললেও সংঘাত এড়াচ্ছে কেন্দ্র
যোগী সরকারের হয়ে শীর্ষ আদালতে সলিসিটর জেনারেল অভিযোগ করেন, হাথরসের ঘটনা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নানা ধরনের কথাবার্তা ছড়ানো হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। তাঁর যুক্তি, সিবিআই তদন্ত হলে এ সব আটকানো যাবে। যোগী সরকার সুপ্রিম কোর্টে যে হলফনামা পেশ করেছে, তাতেও বলা হয়েছে, হাথরসের ঘটনা নিয়ে তদন্তের প্রক্রিয়া এগোলেও সরকারকে বদনাম করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া, এক শ্রেণির সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। সমাজে জাতপাত ও ধর্ম নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টিই এর লক্ষ্য। তাৎপর্যের বিষয় হল, যোগী সরকার তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে যখন সিবিআই তদন্ত চাইছে, সেই সঙ্গে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকেও সেই তদন্তের আওতায় নিয়ে নিয়ে আসতে চাইছে। রাজ্য সরকারের পেশ করা হলফনামায় সে কথাই বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ধর্ষণে বাধা, গায়ে আগুন কিশোরীর
রাতে পরিবারের সম্মতি ছাড়া লুকিয়ে ধর্ষিতা তরুণীর দেহ পোড়ানো নিয়ে দেশ জুড়ে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে হলফনামায় বলা হয়েছে, ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে তরুণীর মৃত্যুর পরে ধর্না দেওয়া হয়। সে দিনই হাথরস জেলা প্রশাসনের কাছে গোয়েন্দা সংস্থার থেকে খবর আসে, পরের দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে হাথরসে পৌঁছতে পারেন। ঘটনাটিকে জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা আগেই শুরু হয়েছিল। ৩০ তারিখ হাথরসে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে হিংসা ছড়াতে পারে, এমন রিপোর্ট আসায় ‘অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে’ মৃতার পরিবারকে রাজি করিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বরের রাতেই তরুণীদের দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তবে সেই রাতের ভিডিয়ো কিংবা পরের দিন দেশের সংবাদপত্রগুলির রিপোর্ট অবশ্য ভিন্ন ছবিই তুলে ধরেছিল। অভিযোগ এসেছিল পরিবারের থেকেই। সে কথা এড়িয়েছে যোগী সরকার। হলফনামায় বলা হয়েছে, গণধর্ষণের অভিযোগ আসায় আলিগড়ের জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ তরুণীকে পরীক্ষা করেছে। তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy