রেখা বর্মা।
মেয়েটি শুধু ধর্ষিত নয়, নাবালিকাও বটে। অথচ নদিয়ায় মৃত সেই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে তার নামটাই বলে দিলেন বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ রেখা বর্মা।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। মেয়েটির নাম বলে দেওয়া হয়েছে! আমরা ইতিমধ্যে শো-কজ় করে চিঠি পাঠিয়েছি।” তাঁর আক্ষেপ, এর আগে মৃত নাবালিকার মায়ের ছবি দিয়ে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছিল বিজেপির ওয়েবসাইটে। সেই ক্ষেত্রেও শো-কজ় নোটিস দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “পকসো আইনে যে এগুলো করা যায় না, সেই ধারণাটুকুও সম্ভবত ওদের নেই।”
নদিয়ার এই ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য দলেরই একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গড়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিল বিজেপি। শুক্রবার ওই কমিটির চার সদস্য গ্রামে গিয়ে মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। রেখা ছাড়াও তামিলনাড়ুর বিজেপি বিধায়ক ভানাথি শ্রীনিবাসন, তামিল অভিনেত্রী খুশবু সুন্দর এবং ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী ওই দলে ছিলেন।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ধর্ষিতার নাম-পরিচয় কখনই বলা যায় না। বিজেপি কী করেছে, তা তারাই বলতে পারবে।’’ বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করতে গিয়ে গোড়াতেই ধর্ষিতার নাম বলে বসেন রেখা। এ দিন সম্মেলনের পরে রেখাকে তা স্মরণ করিয়ে দিলে একটু চুপ করে থেকে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” শুধু রেখা নন, প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। তাঁদের দাবি, আইনত যে ধর্ষিতার নাম প্রকাশ্যে বলা যায় না, তা তাঁরা সম্যক অবহিত। এ ক্ষেত্রে রেখা ভুল করে মুখ ফস্কে নামটি বলে ফেলেছেন।
অর্থনীতির অধ্যাপিকা তথা নারী অধিকার রক্ষা কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেন, "যা শুনেছি, তা হয়ে থাকলে অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। গুয়াহাটিতে একটি মেয়েকে বিবস্ত্র করে অপমানের ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশনের এক সদস্যা তাঁর নাম নিয়েছিলেন। পরে তিনি পদত্যাগ করেন।"
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেসের শিক্ষিকা তথা সমাজকর্মী রুচিরা গোস্বামী বলেন, “জীবিত বা মৃত কখনওই ধর্ষিতর নাম ব্যবহার করা যায় না। নাবালিকার ক্ষেত্রে তো নয়ই। কাঠুয়ার ঘটনায় মেয়েটির নাম লিখে বহু সংবাদমাধ্যম সুপ্রিম কোর্টের শাস্তি পেয়েছিল। এমন একটি মেয়ের নামটুকু গোপন রাখা ঘটনার প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট যে কারও প্রথম পাঠ। আমরা আজও নির্ভয়া বলে থাকি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটির নাম জানাজানি হওয়া তাঁর পরিবারের জন্য সামাজিক ভাবে অপদস্ত হওয়ার দরজা খুলে দেয়, সেই দায়িত্ব কে নেবে? তা ছাড়া, নাম বা মেয়েটির বিষয়ে বাড়তি তথ্য জানাজানি হলে পরিবারটিকে ভয় দেখানো বা প্রভাবিত করার অপচেষ্টা আরও বাড়তে পারে!’’
বৃহস্পতিবারই এই গ্রামে এসে প্রাক্তন আইপিএস তথা বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ দাবি করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মৃতার পরিচয় কার্যত প্রকাশ করে দিয়েছেন, অতএব তাঁর বিরুদ্ধে পকসো (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) আইনে মামলা হওয়া উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy