ফাইল চিত্র।
দুই জা’য়ের লড়াই। থামাতে আসরে নামতে হয়েছে শ্বশুর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়াকে।
আপ্পা-মাক্কালা-মোমাক্কালা— যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় বাবা-ছেলে-নাতির দল। এমনিতেই কর্নাটকের রাজনীতিতে পরিবারবাদী দল হিসাবে পরিচিত জেডিএস। কিন্তু দেবগৌড়ার দুই পুত্রবধূ সক্রিয় রাজনীতিতে আসার পর থেকে নিন্দুকেরা জেডিএসের নতুন নামকরণ করেছেন আপ্পা-মাক্কালা-মোমাক্কালা-সোসেইয়ারা-এর (বাবা-ছেলে–নাতি-পুত্রবধূ) দল।
দেবগৌড়ার চার ছেলে। ছোট ছেলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী। কুমারস্বামীর স্ত্রী গত দু’বারের বিধায়ক অনিতা এ বারও রামনগর কেন্দ্র থেকে লড়ার জন্য জেদ ধরেছিলেন। বাদ সাধেন মেজ ছেলের বৌ ভবানী। মেজ রেভান্না নিজে লড়ছেন হোলে নরসিনপুর আসনে। তাঁর এক ছেলে সাংসদ, আর এক ছেলে বিধান পরিষদের সদস্য। তবু দলে কুমারস্বামীর চেয়ে ধারে ও ভারে পিছিয়ে তিনি। তাই বলে ভবানীও অনিতার তুলনায় পিছিয়ে থাকবেন? তিনি জানিয়ে দেন, ‘ছোট’ যদি রামনগর থেকে লড়ে, তা হলে তিনি হাসান কেন্দ্র থেকে লড়বেন। ফাঁপরে পড়ে যায় গোটা পরিবার। দল ছাড়তে শুরু করেন বহু নেতা ও কর্মী।
দুই পুত্রবধূর এই বিবাদ দলকে পথে বসাতে পারে বুঝে মাঠে নামেন শ্বশুরমশাই। দু’জনকেই জানিয়ে দেন, কাউকে টিকিট দেওয়া হবে না। ঠিক হয়, অনিতার কেন্দ্র রামনগর থেকে লড়বেন তাঁদের ছেলে নিখিল। পার্শ্ববর্তী চান্নাপাটনা কেন্দ্র থেকে লড়বেন কুমারস্বামী। অনিতা না লড়ায় নিজের দাবি থেকে সরে আসেন ভবানীও। পরিবর্তে টিকিট দেওয়া হয় দলের পুরনো কর্মী স্বরূপপ্রকাশকে।
পরিবারের সদস্যদের এই প্রকাশ্য চুলোচুলির প্রভাব অবশ্য তাতেও মোছেনি। কংগ্রেসের ‘পরিবারবাদ’ নিয়ে বিজেপির আক্রমণে নাম জুড়ে যাচ্ছে জেডিএস-এরও। হাসান এলাকায় বাস ডিপোয় আলাপ হল কার্তিকেয়র সঙ্গে। পক্বকেশ বৃদ্ধ, জাতিতে ভোক্কালিগা। সমর্থন জেডিএসকে করলেও শীর্ষ নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা করে বললেন, ‘‘যে ভাবে ভাইয়ে-ভাইয়ে লড়াই শুরু হয়েছে, তাতে যত দিন দেবগৌড়া আছেন, দল আছে। উনি চোখ বুজলেই ভাঙন অবধারিত।’’
হাসান, রামনগর কিংবা চান্নাপাটনা এবং বেঙ্গালুরুর শহরতলি ও সংলগ্ন গ্রামীণ এলাকা জেডিএসের গড় বলে পরিচিত। ছেলে ও নাতিদের জেতাতে অশক্ত শরীরে দুপুর রোদে প্রচারে নামছেন দেবগৌড়া। চান্নাপাটনা থেকে গত বারও জিতেছেন কুমারস্বামী। এ বারে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সিপি যোগেশ্বর। প্রাক্তন এই চলচ্চিত্রাভিনেতাও ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের। নির্দল হিসাবে অতীতে তিন বার জিতেছেন। কেনগাল এলাকায় দলীয় দফতরে বসে জেডিএস কর্মী ত্রিপুরান্তকা অবশ্য বললেন, ‘‘কুমারস্বামী গত বার ২১ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন। দুর্নীতিগ্রস্ত বিজেপি সরকার নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ। এ বার ব্যবধান আরও বাড়বে।’’ তবে দলকে রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে রাখতে কংগ্রেস বা বিজেপি, দু’পক্ষের সঙ্গেই হাত মেলাতে প্রস্তুত কুমারস্বামীরা। প্রাক্তন আমলা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক রামচন্দ্রনের মতে, ‘‘ত্রিশঙ্কু বিধানসভা আঁচ করে কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই জেডিএস নেতৃত্বকে তাই ততটা আক্রমণ করছে না। কেবল ভোক্কালিগা এলাকাগুলিতে, যেখানে কংগ্রেস ও জেডিএসের সরাসরি লড়াই, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে।’’ রাজ্যের ২২৪টি আসনের মধ্যে ২১২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে জেডিএস। কিন্তু দলের লক্ষ্য হল, নাগামঙ্গল, রামনগর, হাসান, মান্ডিয়া, মাইসুরু, টুমকুরের মতো ভোক্কালিগা অধ্যুষিত জেলাগুলি থেকে তিন ডজন আসন সংগ্রহ করে ‘কিংমেকার’ হওয়া। তাই ৩০-৩৫টি আসনে জেতার জন্য ঝাঁপিয়েছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy