(বাঁ দিকে) বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ এবং কাশী বিশ্বনাথ মন্দির। — ফাইল চিত্র।
আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি জ্ঞানবাপীর তহখানায় আরতি ও পূজাপাঠের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ শুরু করল মুসলিমপক্ষ। ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’-র তরফে শুক্রবার এলাকার সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীদের দোকান এবং অন্যান্য ব্যবসাক্ষেত্র বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। অশান্তির সম্ভাবনা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনী।
মসজিদ কমিটির সম্পাদক মৌলানা আবদুল বতিন নোয়ামি শুক্রবার বলেন, ‘‘মুসলিম সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেই প্রতিবাদ জানাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’’ প্রসঙ্গত, বারাণসী আদালতের নির্দেশ মেনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার থেকেই ‘ব্যাস কা তহখানা’-য় শুরু হয়ে গিয়েছে আরতি এবং পুজোপাঠ। শুক্রবার সকালে বিপুল ভক্ত সমাগম হয় জ্ঞানবাপী লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বরে। তবে সাধারণ ভক্তদের দূর থেকেই দর্শনপর্ব সারতে হয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দৈনিক পাঁচ দফা আরতি-পূজাপাঠ হবে জ্ঞানবাপীর তহখানায়। ভোর সাড়ে ৩টেতে ‘মঙ্গলা’, দুপুর ১২টায় ‘ভোগ’, বিকেল ৪টেতে ‘অপরাহ্ন’, সন্ধ্যা ৭টায় ‘সায়াহ্নকাল’ এবং রাত সাড়ে ১০টায় ‘শয়ন’। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জ্ঞানবাপী লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরোহিতই আরতি ও পূজার্চনা করেছেন বৃহস্পতিবার। দু’টি তহখানার মধ্যে একটিতেই (দক্ষিণপ্রান্তের ‘ব্যাস কা তহখানা’) হিন্দু ভক্তদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে বারাণসী জেলা আদালত। জ্ঞানবাপী মসজিদ লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের বিখ্যাত নন্দীমূর্তির মাত্র ২০ ফুট দূরেই রয়েছে ‘ব্যাস কা তহখানা’। তার লাগোয়া আরও একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষেও দেব-দেবীদের মূর্তি রয়েছে বলে দাবি হিন্দু পক্ষের। যদিও সেখানে পুজোপাঠের অনুমতি দেয়নি বারাণসী জেলা আদালত। এখনও অনুমতি দেওয়া হয়নি পাশের ‘সিল’ করা ওজুখানায় ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র।
বুধবার বারাণসীর জ্ঞানবাপী ‘সিল’ করা একটি তহখানায় হিন্দু ভক্তদের পুজো করার অনুমতি দিয়েছিল বারাণসীর জেলা আদালত। বৃহস্পতিবার জেলা বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেসের সেই নির্দেশকে বৃহস্পতিবার ইলাহাবাদ হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’। তার আগে, বুধবার রাতে জরুরি বৈঠকের পরেই মামলার দ্রুত শুনানির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
মসজিদ চত্বরের দক্ষিণ অংশের ‘ব্যাস কা তহখানা’-য় আরতি এবং পুজোয় আপত্তি জানিয়ে মসজিদ কমিটির তরফে বৃহস্পতিবার হাই কোর্টকে বলা হয়েছে, ১৯৩৭ সালে জ্ঞানবাপী সংক্রান্ত বিবাদের রায় মুসলিমদের পক্ষেই গিয়েছিল, তাই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-কে দিয়ে নতুন করে সমীক্ষা করা করানো যায় না। ২০২২ সালে বারাণসী আদালতের নির্দেশে করা ‘অ্যাডভোকেট কমিশনার’-এর রিপোর্টকেও বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মুসলিম পক্ষের দাবি। এই মামলার দ্রুত শুনানি চেয়ে বুধবার সুপ্রিম কোর্টেও একটি পৃথক আবেদন জানিয়েছে তারা
ইলাহাবাদ হাই কোর্টে মসজিদ কমিটির তরফে দাবি জানানো হয়েছে, ১৯৯৩ সালের আগে জ্ঞানবাপী চত্বরের কোথাও পূজার্চনা বা আরতির কোনও প্রমাণ হিন্দুপক্ষ দিতে পারেনি। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা নামে পরিচিত) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন তারই প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে ‘অ্যাডভোকেট কমিশনার’-এর তত্ত্বাবধানে মসজিদের অন্দরের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। সেই রিপোর্ট জমাও পড়েছিল আদালতে। কিন্তু সে সংক্রান্ত নির্দেশ ঘোষণার আগেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বারাণসী জেলা আদালতে জ্ঞানবাপী মামলা স্থানান্তরিত হয়। এর পরে জেলা আদালতের নির্দেশে এএসআই ভার পায় বৈজ্ঞানীক সমীক্ষার। তারই ভিত্তিতে বুধবার ‘ব্যাস কা তহখানা’-য় আরতি ও পূজার অনুমতি দেন বিচারপতি বিশ্বেস।
হিন্দু পক্ষের দাবি, ‘ব্যাস কা তহখানা’ দীর্ঘ দিন ধরে ‘ব্যাস’ পুরোহিত বংশের দখলে ছিল। তাঁরা এক সময় ওখানে বসবাসও করতেন। শৈলেন্দ্রকুমার পাঠক ব্যাস নামে ওই বংশের পুরোহিত আদালতে জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালের গোড়া পর্যন্ত তাঁরা ওখানে পুজো করেছেন। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে উত্তেজনা ঠেকাতে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিংহ যাদবের সরকার তা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন পুরোহিত ছিলেন সোমনাথ ব্যাস। শৈলেন্দ্র সোমনাথের উত্তরাধিকারী হিসাবে আবার পুজো করার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy