মোদীর রাজ্যে দ্রৌপদীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফাইল চিত্র।
দেশের পূর্বাঞ্চলে তাঁকে নিয়ে অহরহ আলোচনা। পূর্বের মতো পশ্চিমের রাজনীতিতেও হাজির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মূ। তিনি হাজির গুজরাত বিধানসভা ভোটে। রাষ্ট্রপতি বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারেন না। কিন্তু তাঁকে ঘিরেই অনেক অঙ্ক কষা হচ্ছে গুজরাতের নির্বাচনে।
গত জুন মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবির যখন শরদ পওয়ার, ফারুক আবদুল্লা, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়তে রাজি করাতে না পেরে যশবন্ত সিন্হাকে বেছে নিয়েছিল, তখন সকলকে চমক দিয়ে দ্রৌপদীকে সামনে নিয়ে এসেছিল বিজেপি। তাঁকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে এনে বিজেপি দাবি করেছিল, তাদের উদ্যোগেই ভারত প্রথম কোনও ‘আদিবাসী রাষ্ট্রপতি’ পেল। তারা বলেছিল, আদিবাসী সমাজ থেকে আসা দ্রৌপদীকে বেছে নেওয়া নতুন ভারতের ‘সব কা সাথ-সব কা বিকাশ’ প্রতিশ্রুতির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
‘সাঁওতাল’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দ্রৌপদীর জাতিগত পরিচয় উল্লেখ না করলেও তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে ‘প্রান্তিক’ শব্দটির উল্লেখ করেছিলেন। মোদী টুইট করেছিলেন, দ্রৌপদী প্রান্তিক ও গরিব মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছেন।
ভোটের অঙ্ক তখনই বোঝা গিয়েছিল। আদিবাসী ভোট বিজেপির ঝুলিতে এককাট্টা করতেই দ্রৌপদী-উদ্যোগ। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করার পদক্ষেপ। তবে মোদীর রাজ্য গুজরাতের ক্ষেত্রেও এটা সত্য। কারণ, ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী গুজরাতের প্রায় ১৫ শতাংশ ভোটার আদিবাসী। বরাবরই গুজরাতের আদিবাসী অধ্যুষিত বিধানসভা এলাকাগুলিতে কংগ্রেসের আধিপত্য দেখা গিয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে সেই ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসানো শুরু করেছে বিজেপি। এ বার সেই ‘তৎপরতা’ অনেক বেশি। সেখানেই গুজরাতের ভোটে ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক দ্রৌপদীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা।
গুজরাতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গুজরাতে কংগ্রেসের থেকে আদিবাসী ভোট আদায়ের লড়াই শুরু করেছিল বিজেপি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দল ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল আদিবাসী অধ্যুষিত আসনগুলিতে। কংগ্রেসের প্রাপ্তি কমে হয়ে যায় ৩৮ শতাংশ।
দেশের মোট আদিবাসী জনসংখ্যার ৫ ভাগের ১ ভাগের বাস গুজরাতে। রাজ্যের মোট বাসিন্দার ৭ ভাগের ১ ভাগ আদিবাসী। রাজস্থান ও মহারাষ্ট্র সীমানার কাছাকাছি পূর্ব গুজরাতের জেলাগুলিতে বড় সংখ্যায় ভিল সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন। মূলত গ্রামাঞ্চল ও আধা শহরেই তাঁদের বাস। বড় শহরেও ২ শতাংশ আদিবাসী। রাজ্যে ২৭টি আসন তফসিলি উপজাতির (এসটি) জন্য সংরক্ষিত। তবে ১৮২ আসনের গুজরাত বিধানসভায় ৪৭টি এমন বিধানসভা এলাকা রয়েছে, যেখানে ১০ শতাংশের বেশি ভোটার আদিবাসী। ৪০টি আসনে ২০ শতাংশের বেশি এবং ৩১টি আসনে ৩০ শতাংশের বেশি আদিবাসী ভোটার।
১৯৯৫ সাল থেকে গুজরাতের ক্ষমতায় আছে বিজেপি। টানা ২৭ বছর। শুরুর দিকে দলের বিদ্রোহী নেতা শঙ্কর সিংহ বাঘেলা ও দিলীপ পারিখের জন্য অস্বস্তিতে থাকতে হলেও পরে গুজরাত বিজেপির ‘গড়’ হয়ে ওঠে। জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর পাশাপাশির বিজেপির সেনাপতি হয়ে ওঠেন গুজরাতের নেতা অমিত শাহ। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পরে এখন অমিত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই গুজরাতে বিজেপির উত্থানে বড় ভূমিকা নিয়েছে আদিবাসী ভোট।
আশির দশকে গুজরাতে ৬০ শতাংশ আদিবাসী ভোট ছিল কংগ্রেসের দখলে। বদল আসে নব্বইয়ের দশক থেকে। ১৯৯০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত আসনগুলিতে কংগ্রেসের ভোট কমে ৩৬ শতাংশ হয়ে যায়। তবে পরে কংগ্রেস কিছুটা ক্ষতপূরণও করে। গুজরাতে আড়াই দশক বিজেপি ক্ষমতায় থাকার পরেও আদিবাসী সমাজে কংগ্রেসের ভিত রয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস জয় পায় ১৭টি আদিবাসী আসনে। বিজেপি সেখানে জেতে ৯টি আসনে।
প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের পাশাপাশি গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে আদিবাসী ভোট পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টিও। ফলে লড়াই সহজ নয় বিজেপির কাছে। গুজরাতের আদিবাসী মন পাওয়ার লড়াই চালিয়েই যেতে হবে বিজেপিকে। সেই লড়াইয়েরই অন্যতম ‘অস্ত্র’ দ্রৌপদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy