শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন মোদী এবং শাহই। ফাইল চিত্র।
গুজরাতে সব ইতিহাস ভেঙে দিয়েছে বিজেপি। এমনই এক ইতিহাস তৈরি করে ২০০২ সালে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সে বার বিজেপি জিতেছিল ১২৭ আসনে। সেই রেকর্ডকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়ে এ বার আরও বড় জয়। ঘাটলোড়িয়া আসন থেকে বড় ব্যবধানে জিতেছেন পাতিদার সমাজের ভূপেন্দ্রভাই। কিন্তু তিনিই কি আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন? বিজেপিতে এটা সব সময় নিশ্চিত করে বলা না গেলেও এ বার মনে হয় আর নতুন মুখ খুঁজবেন না মোদীরা। বড় জয় পেলে এমনটা যে হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন মোদীর সেনাপতি অমিত শাহও। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা মিললে ভূপেন্দ্রই হবেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপিতে, বিশেষ করে গুজরাতে, মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারটা বড়ই অনিশ্চিত। সংগঠনের পাশাপাশি জাতপাতের অঙ্কে বার বার বদলে যায় সরকারে মুখ। কেশুভাই ১৯৯৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু ৭ মাসের মাথায় তাঁকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় সুরেশ মেটাকে। এর পরে গুজরাতে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। একশো একুশ জন বিধায়ক থাকলেও বিদ্রোহের চাপে মুখ্যমন্ত্রী বদলেছে বারবার। ৫ বছরে কেশুভাই ও সুরেশ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শঙ্করসিংহ বাঘেলা এবং দিলীপ পারিখ। শেষ ২ জন বিজেপি ছেড়ে রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টি গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। দুই সরকারের মাঝে ২৭ দিন রাষ্ট্রপতি শাসনও ছিল রাজ্যে।
তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ১৯৯৮ সাল থেকে। ১১৭ আসন পেয়েছিল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কেশুভাই। তবে তিনিও ৫ বছর টিকতে পারেননি। সাড়ে তিন বছর পার হতে না হতেই তাঁকে সরিয়ে ২০০১ সালের অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় মোদীকে। ২০০২ সালে ১২৭ আসন নিয়ে ফেরে বিজেপি। ফের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মোদী। কিন্তু ৫ বছর মোদী-শাসনের পরে বিজেপি ফিরে যায় কেশুভাইয়ের সময়ে। ২০০৭ সালে ১০ আসন কমে জয় মেলে ১১৭ আসনে। এরও ৫ বছর পরে আরও দু’টি আসন কমে। বিজেপি ২০১২ সালে পায় ১১৫টি আসন। আর গত বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটা কমে আসন সংখ্যা হয়ে যায় ৯৯।
তত দিনে মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। নরেন্দ্রভাইয়ের ছেড়ে যাওয়া আসনে ২০১৪ সালে বসেন আনন্দীবেন পটেল। কিন্তু দু’বছর ৭৭ দিনের জন্য। ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগে আগে নিয়ে আসা হয় বিজয় রূপানিকে। ২০১৭ সালে বিজেপি জিতলে রূপানিকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল ঠিক, কিন্তু পুরো সময় পাননি। ৪ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিজয়ভাইকে সরিয়ে আনা হয় ভূপেন্দ্রভাইকে। রূপানি বদলে পটেল। তবে এ বারের নির্বাচনের প্রচারে তাঁকে মুখ করে লড়েনি বিজেপি। একমাত্র মুখ ছিলেন ভূমিপুত্র প্রধানমন্ত্রী মোদীই।
বিজেপি গত বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের জন্য পাতিদার ভোট না মেলাকে কারণ হিসাবে দেখেছিল। সেই কারণেই এ বার ভূপেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী রেখে ভোটে লড়াই। তাতে বড় সাফল্যও মিলেছে। কিন্তু তার পরে তিনিই যে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এমনটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। আপাতত হলেও ৫ বছর টিকবেন এমনটাও হলফ করে বলা যায় না। কারণ, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আসন যে মোদী ছাড়া কারও জন্যই বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তিনিই একমাত্র বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পর পর চার বার শপথ নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী থেকেছেন ১২ বছর ২২৭ দিন।
বিজেপি | ১৫৬ |
কংগ্রেস | ১৭ |
আপ | ৫ |
অন্যান্য | ৪ |
তবে এ বার তেমন কোনও প্রতিদ্বন্দীও নেই ভূপেন্দ্রর। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন এখন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল। ভোটেই দাঁড়াননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রূপানি, প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেল। রাজ্যে বড় নেতা হিসাবে পরিচিত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ভূপেন্দ্রসিং চুদাসামাও টিকিট পাননি এ বার। তাই ভূপেন্দ্রর রাস্তা কণ্টকাকীর্ণ নয়। কিন্তু স্থায়ী কি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy