গুজরাত ভোট বিজেপির কাছে ছিল ২০২৪-এর সেমিফাইনাল। আর সেই খেলায় জিতে নিজভূমে মোদীই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। ছবি: পিটিআই।
দেশের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির আদিভূমি গুজরাত। এখন ঠিকানা দিল্লি হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আদিভূমি গুজরাত। সেই রাজ্যে বিপুল জয় তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে মোদীকে এগিয়ে রাখল বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির।
হাতে ৯৯ নিয়ে খেলা শুরু হয়েছিল। বিপক্ষ কংগ্রেসের হাতে ছিল ৮০। কিন্তু খেলা শেষের স্কোরবোর্ড বলছে বিজেপির পাশে লেখা ১৫৬। আর কংগ্রেস, আপ, অন্যান্য মিলিয়ে ২৬ (সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত)।
এই স্কোরবোর্ড কি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির কাছে বড় ভিত তৈরি করে দিল? এমনটাই প্রশ্ন উঠেছে বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার শুরু থেকে। হিমাচল প্রদেশে সরকার ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। রেওয়াজ মেনে শাসক বদলে নিয়েছে আপেলের রাজ্য। কিন্তু গুজরাতের জয়ে যে আলো, তাতে হিমাচলে হারের আঁধার ঢেকে গিয়েছে। বরং, বিজেপির ধারণা, তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ অনেকটাই কুসুমাস্তীর্ণ করে দিয়েছে গুজরাত। আগামী বছরেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। তার জন্যও গুজরাতের ফল অনেকটা অক্সিজেন দিল মোদী তথা বিজেপিকে।
২০০১ সালে এই গুজরাত থেকেই প্রশাসক মোদীর উত্থান। ১২ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্বের পরে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি। ২০২১ সালেই প্রশাসক মোদীর ২০ বছর পালন করেছে বিজেপি। ঠিক তার পরে পরেই কোনও কালে যে ফল গুজরাতে হয়নি সেটাই করে দেখালেন মোদী। দলের নেতারাও মনে করছেন, বিজেপি নয়, আসলে এই জয় মোদীরই। তাঁকে সামনে রেখেই যাবতীয় প্রচার হয়েছে। বার বার বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ফের ভূমিপুত্র নরেন্দ্রভাইকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে হলে গুজরাতকে নজির গড়তে হবে। কর্মীদের চাঙ্গা করা থেকে ভোটারদের আর্জি জানানো— সবেতেই এটাই ছিল বিজেপির মূল স্লোগান।
আর মোদী নিজেও সেটা করেছেন। ১৮২ আসনের গুজরাতে ৩১টি বড় সমাবেশ করেছেন তিনি। যোগ দিয়েছেন তিনটি বড় রোড শো’য়। প্রচারে সময় দেওয়া দেখে স্পষ্টই বোঝা গিয়েছিল, গুজরাতের ভোটকে নিজের লড়াই হিসাবেই দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একা নন। সেনাপতি হিসাবে আরও বেশি সময় দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁরও নিজের রাজ্য গুজরাত। সেখানে দিনের পর দিন ঘাঁটি গেড়ে ছিলেন শাহ। বুথ স্তরের বৈঠকেও তাঁকে থাকতে দেখা গিয়েছে। আবার প্রচারের খুঁটিনাটিও নিজে দেখেছেন। প্রচার পুস্তিকায় কী লেখা হবে থেকে কোথায় কেন বড় সভা করা দরকার তাঁর হিসাবও তিনিই রেখেছেন।
গুজরাতে ভাল ফল করতে না পারলে যে বাকি দেশে সংগঠন বাড়ানোয় গলার জোর কমে যাবে, সেটা বুঝেই শাহ প্রথম থেকে কড়া হাতে নিয়েছিলেন নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব। সময় থাকতে পাটিদার ক্ষোভ সামলাতে বিজয় রূপাণীকে সরিয়ে ভূপেন্দ্র পটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করার পাশাপাশি রাজ্য সভাপতি হিসাবে জিতু ভাঘানিকে সরিয়ে সিআর পটেলকে আনেন শাহ। বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)। বিধানসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজানোর প্রথম পর্বেই ২০২১-এ ওই পদে ১৩ বছর থাকা ভিখুভাই দালসানিয়াকে সরিয়ে আনা হয় রত্নাকরকে। তিনিই এ বারের ভোট পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন।
টানা ক্ষমতায় থাকায় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা যে ছিল না তা নয়, তার মোকাবিলা করতে প্রার্থী বাছাইয়ে অনমনীয় ছিল বিজেপি। ৪১ জন বিধায়ককে টিকিট দেয়নি। আর প্রচারে মোদী-শাহ তো ছিলেনই, সেই সঙ্গে বার বার রাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। মোদী মন্ত্রিসভার সব সদস্যেরা তো বটেই অন্যান্য রাজ্য থেকে মন্ত্রী, নেতাদের নিয়ে যাওয়া হয় মোদী-ভূমে। সেই তালিকায় অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা থেকে বাংলার সুকান্ত মজুমদারও রয়েছেন।
সবার প্রচারেই মোদীকে জায়গা বুঝে কোথাও ‘উন্নয়নের কারিগর’, ‘গুজরাতের হীরা’, ‘দেশের গর্ব’, আবার কোথাও ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আসলে সব মিলিয়ে একা মোদীর নামেই গুজরাতকে বাজি ধরেছিল বিজেপি। ‘মোদী-ম্যাজিক’ কাজ করবে ধরে নিলেও ‘শাহ-স্ট্র্যাটেজি’ যাতে একটুও এ দিক, ও দিক না হয় সে দিকেও ছিল কড়া নজর। কেন্দ্রের তরফে গুজরাতের জন্য উন্নয়ন উপহারও কম ছিল না। ভোটমুখী গুজরাত বছরখানেক সময়ে ২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ পেয়েছে। সব মিলিয়ে গুজরাত ভোট বিজেপির কাছে ছিল ২০২৪-এর সেমিফাইনাল। আর সেই খেলায় জিতে নিজভূমে মোদীই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy