ফাইল চিত্র।
লকডাউনের বর্ষপূর্তিতে চোখ রাঙাচ্ছে ফি দিন রকেট গতিতে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি। এতটাই যে, এ বছরের জন্য দোল, হোলিতে জমায়েত হয়ে রং খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। স্বাস্থ্যকর্তারা মানছেন, যে ভাবে মাস্ক পরা কিংবা পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো করোনা-বিধি শিকেয় তুলে বেপরোয়া ঘোরাফেরা বেড়েছে, তাতে ভয়ঙ্কর ভাবে আছড়ে পড়তে পারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। সে ক্ষেত্রে দেশ জোড়া লকডাউন না-হলেও, স্থানীয় ভাবে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। বক্তব্য স্পষ্ট, ফের লকডাউন না-চাইলে, করোনা-বিধি মেনে চলুন দেশবাসী। যদিও ভোটমুখী পাঁচ রাজ্যে সমস্ত দলের প্রচারে যে বিপুল জমায়েত হচ্ছে, তাতে প্রশ্নের মুখে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও।
গত বছর মার্চে এই সময় নাগাদ যখন লকডাউন শুরু হয়েছিল, তখন
দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল কয়েকশো। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় তা ৪৬,৯৫১। ৭ নভেম্বরের পরে সর্বাধিক। প্রতিদিন যে ভাবে ওই সংখ্যা বাড়ছে, লকডাউনের গুজব জোরালো ভাবে ছড়িয়েছে সমাজ-মাধ্যমে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। তার আগে এ বিষয়ে মুখে কুলুপ সরকারি কর্তাদের। তবে সূত্রের খবর, সবে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ফের দেশ জোড়া লকডাউন হলে, তাকে আর টেনে তোলা কার্যত অসম্ভব হবে। তাই সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে মাত্রাছাড়া সংক্রমণের এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৮৪.৯% আক্রান্তই ৬ রাজ্যের (মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, কেরল, কর্নাটক , গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশ)। সব থেকে বেশি মহারাষ্ট্রে। সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩০,৩৫৩। মোটের ৬৫%। মৃত্যু হয়েছে ৯৯ জনের। পুণে পুরসভার হাসপাতাল ফের চালু করা হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে শয্যা। সংক্রমণে দ্বিতীয় ও তৃতীয় যথাক্রমে পঞ্জাব (২,৬৪৪) ও কেরল (১,৮৭৫)। কর্নাটকেও গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন কোভিড আক্রান্ত প্রাণ হারিয়েছেন।
৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকেই দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। এর জন্য মূলত সাধারণ মানুষের গা-ছাড়া মনোভাব, কোভিড-বিধি না-মানাকেই দায়ী করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলের কথায়, ‘‘মাস্ক না-পরার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। করোনা যে রয়েছে, তা ভুললে চলবে না। রাস্তা-ঘাটে, অনুষ্ঠানে মাস্ক না-পরা নিশ্চিত ভাবেই বিপদ বাড়াচ্ছে।’’
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটও চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। যে ভাবে সেখানে নির্বাচনী জনসভায় ভিড় হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে ওই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণের ঢেউ প্রবল ভাবে ধাক্কা দিতে চলেছে বলে কার্যত নিশ্চিত স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রার্থী থেকে ভোটার— মাস্ক পরা সমেত করোনা-বিধিকে থোড়াই কেয়ার করার প্রবণতা এই সমস্ত রাজ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁদের কাছে। মন্ত্রকের হুঁশিয়ারি, করোনা-বিধি না-মানলে, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এই রাজ্যগুলিতে বিধি মানার প্রশ্নে প্রশাসন, রাজনৈতিক দলগুলির গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে একাধিক বার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কিন্তু শুনছেন কে!
লকডাউনের গুজব হাওয়ায় ভাসলেও, এখনই তা জারির সম্ভাবনা কম। প্রথমত, তা ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে ‘কোমায়’ নিয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা লকডাউন সত্ত্বেও সংক্রমণ বেড়েছিল। সেপ্টেম্বরে এক সময়ে তা পৌঁছেছিল ৯০ হাজারের কাছাকাছি। আবার পরে লকডাউন প্রত্যাহার করে নেওয়া সত্ত্বেও দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা কমতে শুরু করে। তিন মাসের বেশি সেই প্রবণতা জারি ছিল। এক সময়ে তা নেমেছিল ১০ হাজারের নীচে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের বাড়ছে সংক্রমণ।
আমজনতার হার্ড ইমিউনিটি, জিনগত কারণ নাকি কোভিড-বিধি মেনে চলা— সংক্রমণ কমা এবং এখন ফের তা বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, সংক্রমণ রুখতে দ্রুত বাড়াতে হবে প্রতিষেধক দেওয়ার পরিধি। যত বেশি সংখ্যক মানুষ তার আওতায় আসবেন, তত বেশি জন সুরক্ষিত হবেন। ভাঙবে সংক্রমণ-শৃঙ্খল। কিন্তু অন্তত তত দিন কোভিড-বিধিতে ঢিল না-দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy