দূরের পথ ঢেকেছে ধোঁয়াশায়। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি রয়টার্স।
জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিআর)-এর দূষণের পিছনে দিল্লির তুলনায় অনেক বেশি দায়ী উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থানের মতো প্রতিবেশী রাজ্যগুলি। সেই কারণে দূষণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লি ও সংলগ্ন রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি সার্বিক পরিকল্পনা রচনার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে অনুরোধ করলেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই।
শীতের শুরুতেই ফি বছর দিল্লি-সহ জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিআর) দূষণের চাদরে ঢাকা পড়ে যায়। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। আজও দিল্লির বায়ু মানের সূচক ছিল ৩৭৫। অর্থাৎ গত কয়েক দিনের মতোই আজও রাজধানীর বায়ুর মান ছিল ‘খুব খারাপ’। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী দিল্লির মতো ‘খুব খারাপ’ বায়ুর মান লক্ষ্য করা গিয়েছে রাজধানী সংলগ্ন ফরিদাবাদ (৩৫৪), নয়ডা (৩৩৩), গ্রেটার নয়ডা (৩২৪), গাজিয়াবাদ (৩৬৪)-এর মতো এলাকাগুলিতে। বায়ুতে দূষণের মাত্রা ক্ষতিকর পর্যায়ে আগামী রবিবার পর্যন্ত থাকবে বলেই জানিয়েছে সিপিসিবি। ২১ নভেম্বর বায়ুপ্রবাহের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করেছেন মৌসম ভবনের বিজ্ঞানী ভি কে সোনি। তা হলে বায়ুপ্রবাহের ধাক্কায় এনসিআর অঞ্চলে যে ধোঁয়াশার চাদর ঝুলে রয়েছে তা সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আপাতত ২১ নভম্বর পর্যন্ত দিল্লি সংলগ্ন এলাকার স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দিল্লি দূষণের জন্য দায়ী কে, তা নিয়ে ফি বছরের মতো এ বারও আদালতে চাপানউতোর লক্ষ্য করা গিয়েছে কেন্দ্র ও দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারের মধ্যে। দিল্লি সরকারের দাবি, রাজধানীর দূষণের পিছনে অন্যতম কারণ সংলগ্ন রাজ্যগুলির কৃষি জমিতে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন বিষাক্ত ধোঁয়া। কেন্দ্রের পাল্টা দাবি, সেই ধোঁয়ার জন্য দিল্লির বাতাসে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম ভাসমান কণার পরিমাণ কেবল ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যাকে নগণ্যই বলা চলে। সেই তথ্যকে খারিজ করতে আজ ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল ম্যানেজমেন্ট (আইআইটিএম) নামে কেন্দ্রীয় একটি সংস্থার রিপোর্টকে হাতিয়ার করে দিল্লি সরকার। পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাই আইআইটিএম-এর রিপোর্টটি উল্লেখ করে বলেন, “২৪ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এনসিআর এলাকায় যে বায়ুদূষণ হয়েছে, তার ৩১ শতাংশের জন্য দায়ী দিল্লি। বাকি ৬৯ শতাংশ দূষণের পিছনে রয়েছে সংলগ্ন রাজ্যগুলি। যার মধ্যে রয়েছে ফসলের গোড়া পোড়ানো ধোঁয়া।” রাইয়ের দাবি, ২০১৬ সালে ‘দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিট’ (টেরি) এই ধরনের একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছিল এনসিআর এলাকায় ৬৪ শতাংশ দূষণের জন্য দায়ী সংলগ্ন রাজ্যগুলি। রাইয়ের কথায়, “দিল্লিবাসীর একার পক্ষে ৭০ শতাংশ দূষণ কম করা সম্ভব নয়। তাই আমরা চাই সংলগ্ন রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নিয়ে একটি সার্বিক অ্যাকশন প্ল্যান রচনা করে তাতে প্রত্যেক রাজ্যের দায়িত্ব বেঁধে দেওয়া হোক।”
আজ থেকে রাজধানীতে ১৩টি সর্ব্বোচ্চ দূষিত এলাকায় দমকল থেকে জল ছিটনোর কাজ শুরু হয়েছে। ডিজেল জেনারেটরের ব্যবহার রুখতে দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দূষণ কমাতে দিল্লিতে জরুরি নয় এমন সব নির্মাণ কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে নির্মাণের কাজ ও ডিজেল জেনারেটর চালু থাকায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন গোপাল রাই। এ দিকে হরিয়ানা সরকার আজ জানিয়েছে, যানবাহন জনিত দূষণ কমাতে দিল্লির ধাঁচে জোড়-বিজোড় নীতি হাতে নিয়েছে তারা। হরিয়ানার গ্রামগুলিতে কৃষকেরা যাতে ফসলের গোড়া না পোড়ান, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া দূষণ কমাতে আপাতত বেশ কিছু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হরিয়ানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy