ফাইল চিত্র।
সোমবার এক দফাতেই ভোট উপকূলের রাজ্য গোয়ায়। আসন মাত্র ৪০, রাজ্যের জনসংখ্যাও বেশি নয়। কিন্তু এই ছোট্ট রাজ্যটির দখল নেওয়ার জন্য গত কয়েক মাস বিজেপি, কংগ্রেস, আপ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতাদের অনবরত যাতায়াতের সাক্ষী থেকেছে গোয়া। স্থানীয় রাজনৈতিক শিবিরের মতে, লড়াইটা মূলত শাসক দল বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে হলেও, গত চার মাস প্রবল ভাবে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টির নেতাদের। কেজরীওয়াল তো এসেছেনই, দু’বার প্রচার করে গিয়েছেন মমতাও।
তবে স্থানীয় সূত্রের বক্তব্য, আঞ্চলিক দল এবং গোয়ার স্থানীয় ছোট দলগুলি এ বার ভোট প্রচারে এবং লড়াইয়ের অগ্রভাগে থাকলেও— লড়াইটা সেই গত বারের ভোটের মতো বিজেপি বনাম কংগ্রেসই থাকছে। তবে অন্য দলগুলি ভোট পরবর্তী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে হারানোর পরে গোয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়। বিরোধী রাজনীতিতেও গোয়া নিয়ে তখন আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের শিবির সে সময়ে জানিয়েছিল, গোয়ায় যদি তৃণমূল কংগ্রেস ভাল ফলাফল
করতে পারে, বিরোধী রাজনীতিতে দলের নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। রাজ্যে গিয়ে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসকেও সমান ভাবে আক্রমণ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। পরে অবশ্য, জোট গড়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে কংগ্রেসকে আহ্বান জানানো হয়, যা ফিরিয়ে দেয় সনিয়া গান্ধীর
দল। ভোটের চব্বিশ ঘণ্টা আগে তৃণমূলের গোয়া শিবির ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, নিজেরা এবং শরিক দল মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি মিলিয়ে মোট ৪টি আসন তারা পেতে পারে বলে আশা করছে।
সব মিলিয়ে গত বার অর্থাৎ ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটের তুলনায় গোয়ায় এ বারের চিত্রটি ভিন্ন। গত বারের নির্বাচনে রাজ্যে ৮২.৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। কংগ্রেস সেই সময়ে ১৭টি আসন জিতেছিল, বিজেপি জেতে ১৩টিতে৷ তবে গেরুয়া শিবির দ্রুত কিছু আঞ্চলিক দল এবং নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছিল। পরে কংগ্রেস থেকে শিবির বদলে বিধায়কের দল বিজেপিতে যোগ দেন।
কিন্তু গোয়ার সব চেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি (এমডিএম) এ বার বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, তার ফলে তৃণমূল যে এখানে বিরাট ভাবে লাভবান হবে এমনটা নয়। কিন্তু বিজেপির কাছে বিষয়টি আপাতত প্রতিকূল। একই ভাবে গোয়ার আরও একটি স্থানীয় দল গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টিও গত বিধানসভা ভোটের বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল। এ বারে তারা জোট করেছে কংগ্রেসের সঙ্গে।
রাজনৈতিক মহল বলছে, এখানকার নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলি যে হেতু ছোট, হাজার পাঁচেক ভোটই ত্রিকোণ লড়াইয়ে প্রার্থীকে জিতিয়ে দিতে সক্ষম। পাশাপাশি দলত্যাগ করা বা ‘দল বদলুর’ ঐতিহ্যও গোয়াতে বরাবরই। কংগ্রেসের দলত্যাগী ১০ জন বিধায়কদের (২০১৯) মন্ত্রিত্ব ‘উপহার’ দিতে গিয়ে বিজেপি তার শরিক দলের (গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টি) তিন জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়েছিল। আর সে কারণেই ক্ষুব্ধ গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টি বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে।
মাত্র ১৪.৮৫ লাখ জনসংখ্যার এই গোয়া দখলের জন্য কেন কংগ্রেস এবং বিজেপির মরিয়া চেষ্টা? গোয়ার রাজনৈতিক শিবির বলছে, এই রাজ্য এমনই একটি ‘শো পিস’ যা বিভিন্ন কারণে ধরে রাখতে চায় বিজেপি এবং কংগ্রেস। প্রথমত, তার ভৌগোলিক অবস্থান। গোয়ার সীমান্তে মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটক— এই দুই রাজ্যের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। যা বিজেপি এবং কংগ্রেস দু’দলের
কাছেই আকর্ষণীয়। গোয়ার আবাসন ক্ষেত্র, খনি শিল্প এবং সর্বোপরি পর্যটনের রয়েছে কর্পোরেট বিনিয়োগ টানার ক্ষমতা।
এ বারের ভোটে যাঁদের দিকে চোখ থাকবে, সেই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সবন্ত (বিজেপি), বিরোধী দলনেতা দিগম্বর কামাথ (কংগ্রেস), প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চার্চিল আলেমাও (টিএমসি), রবি নায়েক (বিজেপি), প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় সরদেশাই (জিএফপি) এবং সুদিন ধাভালিকর (এমজিপি), প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রিকরের ছেলে উৎপল পর্রিকর, আপ-এর মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী অমিত পালেকর প্রমুখ।
আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের মুখ্য বিষয়ই হল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পর্রিকরের উন্নয়নমুখী কাজকর্মের উত্তরাধিকার। অথচ, তাঁর নিজের ছেলে উৎপলই বিজেপির সঙ্গে আজ নেই। তাঁর বাবা যে পানাজি বিধানসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন, সেখান থেকেই নির্দল প্রার্থী হয়েছেন উৎপল। পানাজি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy