বাংলার মেয়েদের বড় অংশ স্রেফ বাড়ির কাজকর্ম করেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। অথচ পড়াশোনা বন্ধ। তার বদলে কোনও হাতের কাজ শেখা বা অন্য কোনও প্রশিক্ষণ নেওয়া চলছে, এমন নয়। কোনও কাজকর্ম বা রোজগারও করছে না। পশ্চিমবঙ্গের কিশোরী-তরুণী-যুবতীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মেয়েই এই শ্রেণিভুক্ত। যারা স্রেফ বাড়ির কাজকর্ম করেই দিন কাটিয়ে দিচ্ছে।
নারী দিবসের প্রাক্কালে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এই পড়াশোনা-প্রশিক্ষণ-রোজগার, কোনও কিছুর মধ্যেই না থাকা ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি মেয়েদের হার অধিকাংশ রাজ্যের তুলনায় বেশি। যা দেখে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলায় কোভিডের ধাক্কা ও তার সঙ্গে কন্যাশ্রী প্রকল্পের উল্টো ফল কি এর জন্য দায়ী? উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, অসম, ওড়িশার মতো হাতে গোনা কিছু রাজ্যে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের চেয়েও খারাপ অবস্থা।
কোভিডের ধাক্কায় রোজগার কমে যাওয়া ও দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় ওই সময় অনেক ছেলেমেয়েই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। যার প্রতিফলন দেখা দিয়েছে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায়। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এর মধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পে মেয়েদের ১৮ বছর বয়সে থোক টাকা মেলায় অনেক মেয়েরই কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত বছর অন্য একটি সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, গোটা দেশের মধ্যে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের হার পশ্চিমবঙ্গে সব চেয়ে বেশি। রাজ্যের ১০০ জনের মধ্যে ৪৫ জনের বেশি মেয়ের একুশে পড়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। অথচ এই কন্যাশ্রী প্রকল্প গোড়ায় বাল্যবিবাহ কমানোর ক্ষেত্রেই কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিল।
এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রক ৭৮-তম জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। একাধিক মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সমীক্ষা হয়েছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সমীক্ষা চলার কথা ছিল। কোভিড পরিস্থিতির জন্য সমীক্ষার সময় ২০২১-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, গোটা দেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সি ছেলেমেয়ের ২৯.৩% কোনও রকম পড়াশোনা, কাজকর্ম বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা স্রেফ বেকার বসে রয়েছে। এর মধ্যে ছেলেদের হার ১৬.১%। মেয়েদের হার ৪৩.৮%। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের ছেলেদের হার ১৭.৭%। কিন্তু এই ধরনের মেয়েদের হার ৪৯.৯%। যার অর্থ, এই বয়সের কার্যত অর্ধেক মেয়েই কিছু কাজ না করে বসে রয়েছে। সংখ্যাটা গ্রামে আরও বেশি, ৫২.৩%। শহরে ৪২.৩%। সমীক্ষা বলছে, এই ধরনের মেয়েদের সিংহভাগই ঘরকন্নায় যুক্ত।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর আরবান ইকনমিক স্টাডিজ’-এর প্রধান মহালয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোভিডের সময় পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার হার হু হু করে বেড়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ কমেছে। ছেলেদের অনেকেই কাজ করতে চলে যাচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে কন্যাশ্রী প্রকল্পে থোক ২৫ হাজার টাকা পেয়ে গেলে সেটা বিয়ের পিছনে খরচ করা হচ্ছে কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।” রাজ্য সরকার সূত্রের বক্তব্য, তাঁরা সমীক্ষা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তবেই মন্তব্য করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy