রাহুল গান্ধী। ফাইল চিত্র।
আমেরিকার পরে এ বার জার্মানির বিদেশ মন্ত্রক রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে মুখ খুলল। তা নিয়ে নতুন করে মোদী সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হল।
দু’দিন আগেই আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ওয়াশিংটনে জানিয়েছিলেন, তাঁরা রাহুলের মামলার উপরে নজর রাখছেন। মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্যের জন্য রাহুলের কারাদণ্ড ও সাংসদ পদ খারিজের বিষয়ে ‘গণতন্ত্রে বাগ্স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা’-র কথাও মনে করিয়েছিল আমেরিকা। আজ জার্মানির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা রাহুলের বিরুদ্ধে আদালতের রায় ও তাঁর সাংসদ পদ খারিজের বিষয়টিতে নজর রাখছেন। সাজা বহাল থাকবে কি না, সাংসদ পদ খারিজ অথবা বহাল থাকবে কি না, তার সবটাই উচ্চ আদালতে আর্জির উপরে নির্ভর করবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বজায় থাকবে, এই আশা তাঁরা করছেন বলেও জার্মানির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে জার্মানির এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কংগ্রেসের নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। রাহুলকে নিশানা করে গণতন্ত্রের সঙ্গে কী ভাবে আপস করা হচ্ছে, তা অনুধাবন করার জন্য জার্মানিকে ধন্যবাদ জানান দিগ্বিজয়। তার পরেই মোদী সরকারের মন্ত্রীরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েন। আগেই বিজেপি অভিযোগ তুলেছিল, রাহুল লন্ডনে গিয়ে ভারতের গণতন্ত্রের বিপদের কথা বলে বিদেশের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। আজ দিগ্বিজয়ের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘এখন স্পষ্ট যে, কংগ্রেস দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ চাইছিল।’’ আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু-সহ অন্য বিজেপি নেতারাও একই সুরে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন।
আজ উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় ফের রাহুলের নাম না করে তাঁকে নিশানা করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে ধনখড় বলেন, বিশ্বের মধ্যে আজ ভারতে সব থেকে সক্রিয় গণতন্ত্র রয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি স্বাধীন ও শক্তিশালী। বিচার বিভাগ নিয়ে গর্ব করা যায়। তাকে খাটো করার ক্ষমতা কারও নেই। এর পরেই তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘যন্ত্রণাদায়ক হল, আমাদের মধ্যেই অনেকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কালিমালিপ্ত করছেন। ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা অন্য দেশে গিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করছেন, এর উদাহরণ অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। এ নিয়ে সকলের ভাবা উচিত।’’
কংগ্রেস পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, মোদী সরকার আসলে আদানি-কাণ্ড থেকে নজর সরাতে চাইছে। কিন্তু প্রশ্নের মুখে কংগ্রেস দিগ্বিজয়ের মন্তব্য থেকে দূরত্বও তৈরি করেছে। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘কংগ্রেস বিশ্বাস করে, মোদী গণতন্ত্রের সামনে যে বিপদ তৈরি করেছেন, ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই তার মোকাবিলা করতে হবে। মোদী আমাদের প্রতিষ্ঠানের উপরে যে হামলা করছেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন, কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলি তার মোকাবিলা করবে।’’ কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, রাহুল নিজেও বলেছেন, তিনি মোটেই লন্ডনে গিয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ চাননি। বরং বলেছেন, ভারতের সমস্যার ভারতেই সমাধান হবে।
ঘটনাচক্রে ললিত মোদী আজ হুমকি দিয়েছেন, তিনি রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন। প্রতারণায় অভিযুক্ত আইপিএল-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ললিতকেও রাহুল নীরব মোদীর মতো চোর বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল। আজ আচমকা ললিত রাহুলকে নিশানা করেছেন। কংগ্রেস ললিতের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে অভিযোগ তুলেছে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় দেশ ছেড়ে পালানো ললিত মোদীর মতো ব্যক্তিরা এখন প্রধানমন্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে লজ্জাজনক যে, তাঁর পাশে এখন দুনিয়ার জালিয়াত, প্রতারকেরা এসে দাঁড়িয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy