কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সনিয়া ও রাহুলা গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
ঘুরেফিরে সেই গাঁধীই! রাহুল গাঁধীর জায়গায় কংগ্রেসের সভাপতি হলেন সনিয়া গাঁধী। ‘আপাতত’। দলের ওয়ার্কিং কমিটির বিবৃতি জানাচ্ছে, এআইসিসি নতুন সভাপতি নির্বাচন না-করা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সভাপতি হিসেবে কাজ চালাবেন সনিয়া।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে ২৫ মে কংগ্রেস সভাপতি পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন রাহুল। তার পর আড়াই মাস ধরে দলের বড়-মেজ-সেজ-ছোট নেতারা তাঁর মত বদলের চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। রাহুল রাজি হননি। শুধু তা-ই নয়, জানিয়ে দিয়েছেন সভাপতি হবেন না প্রিয়ঙ্কাও। তখন সনিয়াকে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনিও সাড়া দেননি।
এহেন ‘মাথাহীন’ অবস্থায় ক্রমেই দিশা হারাচ্ছিল কংগ্রেস। সংসদের সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে সেই ছন্নছাড়া দশা আরও প্রকট হয়। রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকা সত্ত্বেও বিরোধীদের দুরমুশ করে তিন তালাক বিল এবং ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ ও জম্মু-কাশ্মীর বিভাজন বিল পাশ করিয়ে নেয় সরকার। ফলে নতুন সভাপতি বাছাইয়ের জন্য দাবি জোরদার হতে থাকে কংগ্রেসে।
কিন্তু গাঁধী পরিবারের বাইরের কোনও নামে ঐকমত্য তৈরি করা সহজ কাজ নয়। তবু একে একে উঠতে থাকে মুকুল ওয়াসনিক, মল্লিকার্জুন খড়্গে, কুমারী শৈলজা, সুশীল শিন্ডে, পি এল পুনিয়ার মতো প্রবীণ নেতাদের নাম। কেউ কেউ আবার নবীন প্রজন্মের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও সচিন পাইলটের পক্ষে সওয়াল করেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, মুকুল ওয়াসনিককে সভাপতি করার বিষয়টি মোটের উপরে ঠিকই করে ফেলেছিলেন আহমেদ পটেল, এ কে অ্যান্টনিরা। ঠিক করে ফেলেছিলেন, আজ সকালে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তাঁর নামে সিলমোহর দেওয়া হবে।
কিন্তু গত কাল সন্ধ্যায় খেলা ঘুরিয়ে দেন রাহুল নিজেই। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, মুকুল ওয়াসনিকের হাত ধরে দলের নিয়ন্ত্রণ আহমেদ পটেলদের হাতে যাক, এটা রাহুলের না-পসন্দ। তাই দলের অন্য নেতাদের মতামত নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এই অবস্থায় আজ সকালে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সকলে রাহুলকেই সভাপতি থেকে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু রাহুল বলেন, ‘‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।’’ তখন ওয়ার্কিং কমিটির বাইরে থাকা নেতাদের মত নিতে পাঁচটি কমিটি গড়া হয়। সেই আলোচনার প্রক্রিয়া শুরুর আগেই এআইসিসির দফতর থেকে বেরিয়ে যান সনিয়া ও রাহুল। সনিয়া বলেন, ‘‘প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে আমার ও রাহুলের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা ঠিক হবে না।’’
আলোচনা শুরু হতেই কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে বলতে থাকেন, রাহুলকেই সভাপতি পদে থাকতে হবে। যেমন পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর বিকল্প নেই। তিনিই দলকে মজবুত করতে পারেন। একমাত্র গাঁধী পরিবারই নেতৃত্ব দিতে পারে।’’
রাহুল যে হেতু আজই নতুন সভাপতি বাছার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাই অঞ্চলভিত্তিক পাঁচটি কমিটির রিপোর্ট নিয়ে রাতে ফের বৈঠকে বসে ওয়ার্কিং কমিটি। দেখা যায়, রাহুলকে সভাপতি রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন অধিকাংশ নেতা। অনেকে আবার প্রিয়ঙ্কাকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন দাদাকে বোঝান সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য।
রাহুল কিছুতেই রাজি হননি। সভাপতি বাছাই নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখন তিনি বৈঠকে ছিলেনও না। মাঝে এক ঘণ্টার জন্য আসেন কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে। এই অবস্থায় সনিয়ার দ্বারস্থ হন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা বলেন, গাঁধী পরিবারের বাইরে কেউ সভাপতি হলে দল ভেঙে যাবে। ফলে সনিয়া বিনা গতি নেই। দীর্ঘ অনুরোধ-উপরোধের পরে নরম হন সনিয়া। তবে জানিয়ে দেন, এই ব্যবস্থা নেহাতই অস্থায়ী। যত শীঘ্র সম্ভব নয়া সভাপতি বাছতে হবে।
যদিও এই ব্যবস্থা কতটা অস্থায়ী হবে, তা নিয়ে দলের অন্দরেই সংশয় রয়েছে। তাঁদের মতে, গাঁধী পরিবারের বাইরে অন্য কোনও নাম নিয়ে যে দলে ঐকমত্য নেই, তা আজ ফের স্পষ্ট হয়েছে। এক জন নেতাকে সভাপতি করলে অন্যদের দল ছেড়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে ভবিষ্যতেও গাঁধী পরিবারের বাইরে কাউকে সভাপতি করা কঠিন হবে।
তবে রাহুলের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার সুরও শোনা যাচ্ছে কংগ্রেসের অন্দরে। এই শ্রেণির নেতাদের বক্তব্য, দলের সর্বস্তরের নেতাদের মতামত নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাহুল প্রমাণ করলেন, দলে তাঁর বিকল্প নেই। তা হলে তিনিই সভাপতি থেকে গেলেন না কেন! নতুন সভাপতি নির্বাচনে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন না, এ কথা বারবার জোর দিয়ে বলা সত্ত্বেও কেন রাহুল নেপথ্যে সক্রিয় হলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। ওই নেতাদের মতে, গাঁধী পরিবারের কেউ সভাপতি হবেন না বলার পরে আজ যা হল, তাতে তো বিজেপি আরও জোর গলায় বলার সুযোগ পাবে যে, গাঁধী পরিবারের বাইরে কিছু ভাবার ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই।
বিজেপির পক্ষ থেকে এ দিন সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু দলের নেতারা একান্তে বলতে শুরু করেছেন: ছেলের রাজনৈতিক কেরিয়ার ডুবে যাচ্ছে দেখে মাকে আসরে নামতে হল। পরিবারতন্ত্রেই কংগ্রেস আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা।
কংগ্রেসের গাঁধীপন্থী নেতাদের দাবি, এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। সামনেই তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোট। গাঁধী পরিবারের বাইরে কাউকে সামনে রাখলে সেখানে সামান্যতম প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
কিন্তু এর পরে কী হবে? সনিয়ার বয়স এখন ৭২। তার উপরে তিনি বেশ অসুস্থ বলেই দলীয় সূত্রে খবর। ফলে তাঁর পক্ষে কত দিন হাল ধরে থাকা সম্ভব? কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, আজ হোক বা কাল, সেই রাহুলকেই নেতৃত্বে ফিরতে হবে। তা না হলে দল থাকবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy