এনকাউন্টারে খতম কানপুরের ডন বিকাশ দুবে। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ
পর পর এনকাউন্টার। শুরুটা হয়েছিল বিকাশ দুবের মামা প্রেমপ্রকাশ পাণ্ডেকে দিয়ে। তার পর একে একে অতুল দুবে, অমর দুবে, প্রভাত মিশ্র, প্রবীণ ওরফে বৌবা দুবে। পুলিশের সঙ্গে একের পর এক ‘এনকাউন্টার’-এ মৃত্যু হয় গ্যাংস্টার বিকাশের ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের। ফলে বিকাশকে নিয়েও আশঙ্কাটা ছিল। কিন্তু, গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই যে সেই আশঙ্কা বাস্তবের চেহারা নেবে, এমনটা বোধহয় বুঝতে পারেনি বিকাশ নিজেও। তবে সেই এনকাউন্টারেই বিকাশের মৃত্যু হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে। এনকাউন্টার নয়, ভুয়ো সংঘর্ষেই মেরে ফেলা হয়েছে বিকাশকে— উঠে আসছে এমন তত্ত্বও।
বৃহস্পতিবার সকালেই উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে ‘ধরা’ পড়ে বিকাশ দুবে। সেখানকার মহাকাল মন্দির চত্বরের এক ফুলওয়ালা তাকে দেখে চিনতে পেরে নিরাপত্তারক্ষীদের খবর দেয়। খবর পৌঁছায় পুলিশের কাছে। তার পর উজ্জয়িনী পুলিশ এসে গ্রেফতার করে বিকাশকে। কিন্তু সেই গ্রেফতারি পর্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে খোদ পুলিশ মহলে। কেরল পুলিশের প্রাক্তন ডিজি এনসি আস্থানা ওই দিনই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশ পুলিশের বলা মহাকাল মন্দিরের ওই ফুলওয়ালার গল্প আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।” তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘কানপুর থেকে এত দূরে মহাকাল মন্দিরের মতো এমন একটা জায়গায় কেন আত্মসমর্পণ করতে গেল বিকাশ? তবে কি এর পিছনে অন্য কোনও ডিল আছে? বিচারের সময় বিকাশ মুখ খুলবে না, বিনিময়ে তার প্রাণ বাঁচবে, এটাই কি সেই ডিল?” পুলিশের সঙ্গে বিকাশেরও এনকাউন্টার হতে পারে এবং বিকাশের মৃত্যুও হতে পারে সেই এনকাউন্টারে— টুইট করে এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন আস্থানা।
শুধু আস্থানাই নন, গত ৩ জুলাই কানপুরের চৌবেপুরে বিকাশের দলবলের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮ পুলিশকর্মীর মৃত্যুর পরের ঘটনাক্রম দেখে অনেকেই এমন আশঙ্কা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা (যিনি নিজেও আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা) হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘বিকাশের গ্রেফতারির পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া দেখুন। গোটা দেশের শহরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষেরই একটাই আশঙ্কা, এর পর কি আবারও এনকাউন্টার?”
পুলিশের কনভয়ের যে গাড়িতে বিকাশ ছিল, সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কানপুরের পথে। ছবি: এপি।
ওই পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সবাই আশঙ্কায় ছিলাম। আর বিকাশ নিজে জানত না? তা হলে ধরে নিতে হবে, কানপুর থেকে ফরিদাবাদে পালিয়ে যাওয়ার পর তার উজ্জয়িনী যাওয়ার পিছনে কারণ ছিল। কোনও জায়গা থেকে সে আশ্বাস পেয়েছিল যে, তার সঙ্গে এনকাউন্টার হবে না। তা না হলে এত দূরে সে যাবে কেন?”এর মধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে একটি ভিডিয়ো ফুটেজ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, উজ্জয়িনী পুলিশের দুই আধিকারিকের কথোপকথন। এক জন অন্য জনকে প্রশ্ন করছেন, ‘‘বিকাশ দুবে কি ভাল ভাবে কানপুরে পৌঁছবে?’’ সেই প্রশ্ন শুনে অন্য পুলিশ কর্তা হেসে উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘আমি আশা করি, পৌঁছাবে না।”
আরও পড়ুন: কানপুরের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনা, পালাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘সংঘর্ষে’ নিহত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে
তা হলে কি সবাই ধরেই নিচ্ছেন যে, বিকাশের এনকাউন্টার পর্বটা আসলে সাজানো? অর্থাৎ ভুয়ো সংঘর্ষ। বৃহস্পতিবার বিকাশের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী প্রভাত মিশ্রের এনকাউন্টারে মৃত্যুর পর আস্থানা মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘আজকাল পুলিশ মিথ্যেটাও গুছিয়ে বলতে পারে না।” আর বিকাশের মৃত্যুর পর তিনি বলছেন, ‘‘একটা গাড়ি উল্টে গেল। বিকাশ নিজেও আহত হল। সে দরজা খুলে পালাল। প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে দৌড়ল। কিন্তু তার পরেও বিকাশের মুখের মাস্ক একদম ঠিকঠাক রইল!”
শুধু আস্থানার মতো পুলিশকর্তারাই নন, বিকাশের এনকাউন্টার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন নেটাগরিকরাও। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার টুইট হয়েছে ফেক এনকাউন্টার হ্যাশট্যাগে। অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দেওয়া বয়ান আদৌ গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না তাঁরা। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব টুইট করেছেন, ‘‘আসলে গাড়ি উল্টে যায়নি। সব কিছু প্রকাশ্যে এলে সরকার উল্টে যেত। তা থেকে বাঁচানো হয়েছে।” তাঁর ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট। যোগী সরকার এবং উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতাসীন বিজেপির বিভিন্ন মাপের নেতার সঙ্গে যে বিকাশের মধুর সম্পর্ক ছিল তা, গত কয়েক দিনে প্রকাশ্যে এসেছে। একের পর এক ঘটনাক্রমে জানা গিয়েছে, পুলিশের অন্দরেও ছিল তার নিজের লোক। তাই বিরোধী রাজনীতিকদের অভিযোগ, বিকাশের মুখ খুললে অনেক আঁতাঁত প্রকাশ্যে চলে আসত। তাই ভুয়ো সংঘর্ষে বিকাশ এবং তার সঙ্গীদের মেরে দিয়েছে যোগী সরকারের পুলিশ।
বিকাশের সাগরেদ প্রভাতের মৃত্যু হয়েছে এনকাউন্টারে। ছবি: পিটিআই।
কিন্তু এতটা সরলীকরণে রাজি নন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক প্রাক্তন ডিজি। তিনি বলেন, ‘‘বিকাশ এক দিনে ডন হয়নি। বিকাশের স্ত্রী রিচা সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জেতা জেলাপরিষদ সদস্য। তার মানে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গেও বিকাশের ভাল সম্পর্ক ছিল। আসলে এই ধরনের অপরাধীরা যখন যে ক্ষমতায় থাকে তার লোক হয়।” উত্তরপ্রদেশের ওই প্রাক্তন পুলিশ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘রাজ্যে ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন, রাজনীতিতে বাহুবলীদের প্রভাব অগ্রাহ্য করতে পারে না।”
প্রাক্তন ওই ডিজি বলিউডের ‘বুলেট রাজা’ ছবির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে বাহুবলীরা সমান্তরাল রাজনীতির প্রতিনিধি। সেখানে কেউ ব্রাহ্মণদের প্রতিনিধি, কেউ জাঠ আবার কেউ যাদবদের। বুলেট রাজা সিনেমায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করা রাজ বব্বরকে যেমন হাতের বাইরে চলে যাওয়া গ্যাংস্টার রাজা মিশ্রকে খতম করতে অনেক বার ভাবতে হয়েছে। কারণ রাজা মিশ্র ছিল ব্রাহ্মণ। সরকারও ছিল ব্রাহ্মণদের সমর্থন পুষ্ট। তাই রাজা মিশ্রের রাজনৈতিক প্রভাবের কথা মাথায় রেখে তাকে সরিয়ে দিতে দ্বন্দ্বে ছিল প্রশাসন।” আর বিকাশ দুবের এনকাউন্টার কতটা আসল, কতটা ভুয়ো— তা নিয়ে বলতে গিয়ে ওই প্রাক্তন পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘গত বছরের ৬ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে করা টুইটটা দেখুন। ওই টুইটে লেখা, দু’বছরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে ১০৩ জন অপরাধীর মৃত্যু হয়েছে। ৫ হাজার ১৭৮টি এনকাউন্টারের ঘটনায় আরও ১ হাজার ৮৫৯ জন কুখ্যাত অপরাধী জখম হয়েছে। ১৭ হাজারের বেশি অপরাধী নিজেদের জামিন বাতিল করে জেলে চলে গিয়েছে।’’ এর পর হেসে বললেন, ‘‘কিছু বুঝতে পারছেন?’’
আরও পড়ুন: ‘গাড়ি না ওল্টালে গদি উল্টে যেত’, দুবে কাণ্ডেও নিশানা ‘এনকাউন্টার রাজ’
২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পর পর এনকাউন্টার হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। প্রশ্ন উঠেছে, সেই এনকাউন্টার আদৌ কতটা সঠিক। কিন্তু তাতে থেমে যায়নি সেই প্রক্রিয়া। রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্তের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের আগাপাশতলা রাজনীতিকরণের ফলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।” তিনি বলেন, ‘‘আইনের শাসন লাগু করার অর্থ ভুয়ো এনকাউন্টার নয়। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে তার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং তার অপরাধ অনুযায়ী সাজা নিশ্চিত করা।” আর উত্তরপ্রদেশ সরকারের ওই টুইট নিয়ে তিনি কী বলছেন? পঙ্কজবাবুর কথায়, ‘‘পুলিশের এই টুইট কোথাও যোগী সরকারের পেশী আস্ফালনের ঘোষণা।”
বৃহস্পতিবার উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির থেকে গ্রেফতার করা হয় বিকাশকে। ছবি: পিটিআই।
প্রাক্তন ওই পুলিশ কর্তার মতে, পুলিশ নিজে আইনের ঊর্ধ্বে যেতে পারে না। এ রাজ্যের সঙ্গে তুলনা টেনে পঙ্কজবাবু দাবি করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের তৈরি আইনি অনুশাসনের ভিত অনেক মজবুত হওয়ায় এখানকার পুলিশ ‘ট্রিগার হ্যাপি’ নয়।’’ কাশীপুর গণহত্যার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যেও ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ রাজ্যে মানবাধিকার আন্দোলন এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো জোরদার হওয়ায় পুলিশ এ রকম আচরণ করার সাহস পায় না। তারা জানে, এ রকম কিছু করলে বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি তাকে হতে হবে।”
তবে মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর পুলিশের অনুশাসনের চেয়ে এ রাজ্যে পঞ্চাশের দশক থেকে চলে আসা ধারাবাহিক গণ আন্দোলনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো বাহুবলীদের দাপট এ রাজ্যের মানুষ কখনও মেনে নেয়নি। তেমনই বাংলার মানুষ ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনাকেও মেনে নেয়নি কখনও। শক্তিশালী জনমত যে কোনও শাসককে বাধ্য করেছে ওই পথ থেকে দূরে থাকতে।”
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিকাশের মতো না হলেও, সাম্প্রতিক অতীতে হাতকাটা দিলীপ বা গোপাল তিওয়ারির মতো গ্যাংস্টারদের পাকড়াও করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে এসেছে শাসকদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা। অনেক ক্ষেত্রেই ওই গ্যাংস্টাররা সরকারের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু তার পরও যোগী রাজ্যের পুলিশি কানুনকে অনুসরণ করার সাহস পায়নি কোনও সরকার।” সে প্রসঙ্গেই তিনি দমদমের দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ তোলেন। ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দলের ছাতার তলায় থেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলেন দুলাল। অস্বস্তি থাকা সত্বেও তাঁকে এনকাউন্টার করা হয়নি। বরং আইনি পথে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে ডনের ডানা।”
আরও পড়ুন: জাতপাত আর রাজনীতির মিশেলেই উত্থান বিকাশের
একই পথ অনুসরণ করে বিহারে সফল হয়েছিলেন নীতিশ কুমার। ২০০৫ সালে ক্ষমতায় এসে ‘বিহারের জঙ্গলরাজ’ খতম করতে এনকাউন্টারের থেকে বেশি কার্যকর হয়েছিল দ্রুত বিচার। বাহুবলীদের একের পর এক জেলে ভরে সাজা নিশ্চিত করেছিল নীতিশ সরকার। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ হাঁটছে অন্য পথে। ভুয়ো সংঘর্ষেই বিকাশকে মেরে ফেলা হল কি না তা নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, এ রাজ্যের প্রাক্তন এক ডিজি বললেন, ‘‘বিকাশ যে হিসেব করে উজ্জয়িনী গিয়েছিল, তা মেলেনি। কিন্তু বিকাশ ধরা পড়ার পর সকলের মনে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেই হিসেব কাঁটায় কাঁটায় মিলিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।” আর লালবাজারের এক অ্যাসিস্টান্ট কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিকও বলছেন, ‘‘আপনি, আমি বা দেশের হাজার হাজার মানুষ যে এনকাউন্টার নিয়ে প্রশ্ন তুলবে তা কি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানত না? জানত। কিন্তু খুব প্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটিয়ে সেখানকার সরকার এবং পুলিশ নিজেদের পেশী শক্তির আস্ফালন করল।”
আরও পড়ুন: ঠিক আধ ঘণ্টা আগে কেন আটকানো হল মিডিয়ার গাড়ি? দুবে ‘সংঘর্ষে’ রহস্য এখানেও
কাজেই শুক্রবার সকালের যে ‘এনকাউন্টার’-এ বিকাশের মৃত্যু হল, তা পুলিশের অন্দরেই অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy