ভোট চলাকালীন বিহারে বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠল। অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। বজায় রাখা হয়নি শারীরিক দূরত্বও। ছবি এএফপি।
দেশে করোনা আবহে প্রথম ভোট বিহারে। কিন্তু প্রথম বারই অভিযোগ উঠল স্বাস্থ্যবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখানোর। রাজ্যের ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বুধবার প্রথম দফায় ৭১টি আসনে এ দিন ভোটগ্রহণ হয়। ভোটাররা যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেন সে জন্য প্রতিটি বুথের সামনে ‘গোল দাগ’ কাটা হয়েছিল।ইভিএম-এর বোতাম টেপার আগে ভোটারদের দেওয়া হয় হ্যান্ড গ্লাভসও। কিন্তু কিছু বুথে ভোটাররা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিপত্তি ছাড়া, এ দিনের ভোটগ্রহণ মোটামুটি নির্বিঘ্নেই বলে কমিশন সূত্রে খবর। সামগ্রিক ভাবে ভোটদানের হার ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ।
করোনা অতিমারির মধ্যে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। ভোটের প্রচারপর্ব এবং ভোটকেন্দ্র থেকে যাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে, সেই উদ্দেশ্যে নির্বাচনী নিয়মাবলির কিছু বদল ঘটানো হয়েছিল। ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৭টা থেকে সন্ধে ৬টা করা হয়। যদিও এ দিন মাওবাদী উপদ্রুত এলাকাগুলিতে এই নিয়ম কার্যকর ছিল না।
ভিড় এড়াতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এবার প্রতিটি পোলিং বুথে ভোটারের সংখ্যা ১,০০০ জনে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল। এর ফলে পোলিং বুথের সংখ্যা এক লক্ষে পৌঁছে যায়। ২০১৫ সালে যা ছিল ৬৫ হাজারের সামান্য বেশি।
আরও পড়ুন: বিসর্জন নয়, লকডাউনের দলিল হিসেবে বড়িশার ‘পরিযায়ী উমা’কে সংরক্ষণ রাজ্যের
এই বিপুল সংখ্যক বুথে নিরাপত্তার পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, মগধভূমে তিন দফার ভোটপর্বের জন্য ৭ লক্ষ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, প্রায় ৪৬ লক্ষ মাস্ক, ৬ লক্ষ পিপিই কিট, সাড়ে ৬ লক্ষেরও বেশি ফেস শিল্ড, ২৩ লক্ষ জোড়া হ্যান্ড গ্লাভসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন প্রথম পর্যায়ে ৩১,৩৭১টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটগ্রহণের আগে এবং শেষে ইভিএম-গুলিকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। বুথে উপস্থিত সমস্ত ভোটকর্মী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মাস্ক ছিল বাধ্যতামূলক। থার্মাল স্ক্রিনিং, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান এবং জলের ব্যবস্থা রাখা হয় বুথে। কোয়রান্টিনে থাকা ভোটারেরা এ দিন ভোটগ্রহণ পর্বের শেষদিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
করোনা আক্রান্ত এবং প্রবীণদের জন্য ছিল পোস্টাল ভোটের সুবিধাও। এ দিন সকালে ঔরঙ্গাবাদের ঢিবরায় একটি বুথের কাছ থেকে দু’টি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণের আগেই আইইডি দু’টি নিষ্ক্রিয় করে দেয় সিআরপিএফ-এর বম্ব স্কোয়াড। সাময়িক ভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। পরে পুলিশ ও আধা সেনার কড়া পাহারায় ওই বুথে ভোট হয়।
এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে মুখোমুখি নীতীশ কুমার এবং লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদব। বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে চতুর্থ বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নীতীশ। নির্বাচনী প্রচারে দুর্নীতিমুক্ত বিহার গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়লেও এই প্রথম একা হাতে নির্বাচনের যাবতীয় দায় দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তেজস্বী। নীতীশকে পরাজিত করতে অর্থনীতি এবং বেকারত্বকেই হাতিয়ার করেছেন তিনি। ক্ষমতায় এলে ১০ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ দিন ভোটদান শুরু হওয়ার আগে বিহারবাসীর উদ্দেশে টুইটারে তেজস্বী লেখেন, ‘আজ প্রথম দফায় ভোটদান। বিহারবাসীর কাছে অনুরোধ, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে নতুন বিহার গঠনের পক্ষে ভোট দিন। মহাজোটের সঙ্গে পরিবর্তনে শামিল হোন।' জেডি(ইউ) প্রধান নীতীশ লেখেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে ভোটদান শুধুমাত্র অধিকার নয় এক গুরুদায়িত্বও বটে। আজ ৭১টি আসনে ভোটদান। সময় করে অবশ্যই ভোট দিতে যান। আপনাদের ভোট বিহারের উন্নয়নে গতি আনবে।'
আরও পড়ুন: চিনের মানচিত্রে লাদাখ! টুইটারের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় যৌথ সংসদীয় কমিটি
বিজেপিকে সমর্থন জানালেও নীতীশের দলের বিরুদ্ধে প্রতিটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি। এ দিন রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে অভিযোগ তোলেন, ভোট মিটে গেলেই বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে ফের আরজেডি-র হাত ধরবেন নীতীশ। তার প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন তিনি। চিরাগ বলেন, ‘‘নীতীশকে ভোট দেওয়ার অর্থ বিহারের সর্বনাশ ডেকে আনা। ওঁকে ভোট দিলে মহাজোটের হাতই আরও শক্ত হবে। তিনি প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। ভোটদান মিটে গেলেই বিজেপি ছেড়ে আরজেডি-র সঙ্গে হাত মেলাবেন। আগেও আরজেডি-র সঙ্গে সরকার গড়েছিলেন উনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy