তৃতীয় বার শপথের পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নরেন্দ্র মোদীর প্রথম দিন। নয়াদিল্লিতে সোমবার। ছবি: পিটিআই।
তৃতীয় ইনিংস শুরুর প্রথম বলেই তিনি বুঝিয়ে দিলেন, একক গরিষ্ঠতার সরকারই হোক অথবা শরিক-নির্ভর এনডিএ, নরেন্দ্র মোদী আছেন নরেন্দ্র মোদীতেই। আছেন দৃশ্যের জন্ম দেওয়া রাজনীতিতে তাঁর নৈপুণ্য নিয়েই।
মোদী আজ তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম যে ফাইলটিতে সই করলেন ক্যামেরার সামনে, সেটি পিএম কিসান নিধি যোজনার। তৃতীয় বারের অভিষেকের দিনই বার্তা দিতে চাইলেন, কৃষকদের হতাশা দূর করাই তাঁর এ বারের অগ্রাধিকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে যখন ক্যামেরায় লং শট ফ্রেমে সই করতে দেখা গেল এবং তা ছড়িয়ে গেল বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে, তখন পঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানার খনৌরিতে, জুনের ঠাঠা রোদে অনশনরত কৃষকরা তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সামনে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেনদের তাঁরা বলছেন, অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী কিসান নিধির সপ্তদশ কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এ তাঁদের ন্যায্য বকেয়া। প্রধানমন্ত্রী ভোটের পর দরদ দেখাবেন বলে টাকা আটকে রেখে এখন ঢাকঢোল পেটাচ্ছেন।
কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের অন্যতম প্রকল্প হল প্রধানমন্ত্রী কিসান নিধি যোজনা। কৃষকদের সহায়তা প্রদানকারী এই প্রকল্পেরই একটি ফাইলে মোদী ফাইল আজ সই করার ফলে দেশের কিসান নিধি প্রকল্পের আওতাধীন ৯ কোটি ৩০ লক্ষ কৃষক ষোলোতম কিস্তির টাকা পেতে চলেছেন। মোট ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল প্রকল্পটির উপভোক্তাদের জন্য। ফাইলে স্বাক্ষর করার পর মোদী বলেন, “আমাদের সরকার কৃষকদের কল্যাণে দায়বদ্ধ। দায়িত্ব নিয়েই কৃষকদের কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইলে স্বাক্ষর করলাম। আগামী দিনে আমি কৃষক এবং দেশের কৃষিক্ষেত্রের জন্য আরও বেশি কাজ করে যেতে চাই।” পরে আজই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় গ্রাম ও শহরাঞ্চলে মোট ৩ কোটি বসতবাড়ি তৈরিতে সহায়তা করবে সরকার।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ আজ এক্স হ্যান্ডলে বিক্ষোভরত কৃষকদের সুরেই একের পর এক পোস্ট করে মোদীকে আক্রমণ করেছেন। জয়রামের কথায়, ‘‘তৃতীয় দফার প্রথম দিনই এক তৃতীয়াংশের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর জনসংযোগ প্রচার এবং সংবাদপত্রের শিরোনামবাজি শুরু করেছেন। অফিসে বসে তাঁর পিএম কিসান নিধি যোজনার সপ্তদশ ফাইলটি সই করা নিয়ে ঢক্কানিনাদ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যদি ঘটনাপঞ্জি দেখা যায়, তা হলে বোঝা যাবে ষোড়শ কিস্তিটি দেওয়ার কথা ছিল এই বছর জানুয়ারি মাসে। তা দিতে এক মাস বিলম্ব করা হয়। আর এই সপ্তদশ কিস্তিটি দেওয়ার কথা ছিল এপ্রিল-মে মাসে। কিন্তু নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হয়ে যাওয়ার জন্য তা দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এই ফাইলে সই করে কাউকে কৃতার্থ করছেন না। সরকারের নীতি অনুযায়ী এটা ইতিমধ্যেই কৃষকদের প্রাপ্য। রুটিন প্রশসনিক সিদ্ধান্তগুলিকে মহৎ দান হিসাবে দেখানোটা তাঁর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। যদিও তিনি নিজেকে নশ্বর মানুষ বলে মনে করেন না, মনে করেন তিনি দৈবশক্তির আধার।’’
এর পরই প্রধানমন্ত্রীর সামনে কৃষকদের দাবিগুলিকে পেশ করে জয়রাম লিখেছেন, ‘‘মোদী যদি কৃষক-কল্যাণে সত্যিই উদগ্রীব হন, তা হলে এই পাঁচটি কাজ তিনি করবেন। স্বামীনাথন সূত্র মেনে কৃষকদের শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি নিশ্চিত করবেন। কৃষি ঋণ মকুবের জন্য স্থায়ী কমিশন গঠন করবেন। ফসল বিমা সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষক সমাজের সঙ্গে কথা বলে, নতুন আমদানি-রফতানি নীতি গঠন করতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে জিএসটি রদ করতে হবে।’’
রাজনৈতিক শিবির বলছে, কৃষকদের তুষ্ট করা এবং তাকে প্রশাসনিক ভাষ্যের কেন্দ্রে নিয়ে আসাটা এ বার বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের বড় দায়। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ৮, হরিয়ানায় ৫, রাজস্থানে ১১, পঞ্জাবে ২, মহারাষ্ট্রে ১২—এই পাঁচ রাজ্যে মোট ৩৮টা জেতা আসন হারিয়েছে বিজেপি। মূলত কৃষকদের দাবি না মানা, কৃষক আন্দোলন দমনের চেষ্টা, মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষি-ডেয়ারি মালিক-পশুপালকদের সমস্যা এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, উনিশের তুলনায় বিজেপির কৃষক ভোট শতকরা ৩ শতাংশ কমেছে চব্বিশে। পাশাপাশি ইন্ডিয়া মঞ্চে সামগ্রিক বিচারে কৃষক ভোট ১৪ শতাংশ বেড়েছে। মোদীর দ্বিতীয় দফায় তিন বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ দেখেছিল দেশ। ন্যায্য সহায়ক মূল্য-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে ওই আন্দোলন থামাতে তিন আইন বাতিল করে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy