Feroz Shah Kotla of Delhi is One of The Most Famous Haunted Palace in India dgtl
Feroz Shah Kotla
জলকষ্ট দূর করতে মধ্যযুগে দিল্লিতে তৈরি এই কেল্লায় নাকি অশরীরীরা সমাধান করে মানুষের সমস্যার
মুঘল আমলে ধীরে ধীরে গরিমা হারাতে থাকে এই কেল্লা। কিন্তু তখনও এটি ছিল ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবেই। বরং, মধ্যযুগীয় এই কেল্লা ‘ভৌতিক’ পরিচয় পায় আধুনিক ভারতে!
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৯:০০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১২
মনের মতো করে সাজাতে চেয়েছিলেন তাঁর রাজধানী ফিরোজাবাদকে। ৩৭ বছরের শাসনকালে তৈরি করিয়েছিলেন বহু প্রাসাদ। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ফিরোজ শাহ কোটলা। রাজধানী থেকে কেল্লা, সব কিছুর মধ্যে নিজের নাম রেখে যেতে চেয়েছিলেন তুর্কি শাসক ফিরোজ শাহ তুঘলক।
০২১২
পরবর্তীকালে তুর্কি সাম্রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণু অবশিষ্টের উপর নতুন কীর্তি স্থাপন করেছে মুঘল বংশ। ফিরোজাবাদ তখন পরিচয় পাল্টে হয়েছে দিল্লি। সময়ের সঙ্গে গরিমা হারায় ফিরোজ শাহের কেল্লাও।
০৩১২
আজও সে দাঁড়িয়ে আছে পুরনো আর নতুন দিল্লির সংযোগস্থলে। ইতিহাসপিপাসুদের কাছে এর পরিচয় মধ্যযুগীয় কোটলা বা ছোট কেল্লা বলে। অতীন্দ্রিয়বাদে বিশ্বাসীদের কাছে ভৌতিক কাণ্ডকারখানার ঠেক হিসেবে।
০৪১২
এই কেল্লা তৈরি হয়েছিল ১৩৫৪ সালে। সে সময় তুঘলকাবাদ থেকে ফিরোজাবাদে রাজধানী সরিয়ে আনছিলেন তৎকলীন তুর্কি শাসকেরা। গরমে তীব্র জলকষ্ট দূর করতে যমুনার তীরে তৈরি হয়েছিল এই কেল্লা। এর ভিতরে ছিল বাওলি বা ধাপকুয়োও।
০৫১২
তবে মধ্যযুগের আগেও এই স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল। খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় অব্দে সম্রাট অশোকের সময়ে এই স্থান ছিল মৌর্য বংশের সাম্রাজ্যের অংশ। পরবর্তীকালে নিজের কেল্লার ভিতরে ফিরোজ শাহ স্থাপন করিয়েছিলেন অশোকের নির্দেশে নির্মিত একটি স্তম্ভ।
০৬১২
মৌর্য যুগে এই স্তম্ভ ছিল আজকের হরিয়ানার যমুনানগর জেলায়। সে সময় এটি ছিল মৌর্য সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধ জনপদ। সেখান থেকে স্তম্ভ স্থানান্তরিত করান ফিরোজ শাহ তুঘলক। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্তম্ভের গায়ে ব্রাহ্মী লিপিতে প্রাকৃত ভাষায় লেখার পাঠোদ্ধার করে প্রাচ্যবিদ জেমস প্রিন্সেপ।
০৭১২
অশোক তাঁর এই শিলালিপিতে বলে গিয়েছেন, প্রজাহিতকর জনসেবামূলক কাজের কথা। আরও বলেছেন, তাঁর মূল লক্ষ্য সাম্রাজ্যের সর্বত্র ধর্মের সুপ্রতিষ্ঠা। ফিরোজ শাহ কোটলায় স্থানান্তরের পাঁচশো বছর পরে এই লিপির অর্থ জানা যায় জেমস প্রিন্সেপের কল্যাণেই।
০৮১২
জামা মসজিদ ছাড়াও কেল্লা চত্বরে আছে ধাপ কুয়ো। একটি খালের মাধ্যমে যমুনার জল পৌঁছত কুয়োয়। ভূগর্ভস্থ জল এবং নদীর জল, দু’টি উৎসকে সজীব রাখা হয়েছিল। যাতে প্রখর গ্রীষ্মেও জলকষ্ট না হয়।
০৯১২
তবে এই বাওলি বা ধাপকুয়ো এখন বন্ধ করা থাকে। ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (এএসআই) থেকে অনুমতিসাপেক্ষে ভিতরে প্রবেশ করা যায় শুধুমাত্র গবেষণার কাজে।
১০১২
মুঘল আমলে ধীরে ধীরে গরিমা হারাতে থাকে এই কেল্লা। কিন্তু তখনও এটি ছিল ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবেই। বরং, মধ্যযুগীয় এই কেল্লা ‘ভৌতিক’ পরিচয় পায় আধুনিক ভারতে!
১১১২
১৯৭৭ সাল নাগাদ হঠাৎই রটে যায়, এই কেল্লা নাকি অশরীরীদের আস্তানা। রটনা থেকে ক্রমে সেটা একাংশের বিশ্বাসে পরিণত হয়। আজও, এই কেল্লায় সব ধর্মের মানুষ আসেন তাঁদের সমস্যার সামাধান পেতে। অনেকেই চিরকুটে লিখে রেখে যান সমস্যা। তাঁদের বিশ্বাস, এ ভাবেই জেনে নিয়ে অশরীরীরা তাঁদের সমস্যা দূর করবেন।
১২১২
তবে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বাইরে ইতিহাসের আকর হিসেবেও ফিরোজ শাহ কোটলার গুরুত্ব গভীর। ভারতের প্রাচীন ও মধ্য, দুই যুগের দুই সম্রাটের কীর্তিকে ধারণ করে থাকা এই স্মারকে সময় যেন থমকে গিয়েছে।