ফাইল ছবি
চাষের কাজে বিদ্যুৎ, পরিবহণ, কীটনাশকের খরচ বেড়েছে। সরকারি খাদ্য নিগমের গুদামে এ বছর গম অনেক কম পরিমাণে মজুত হয়েছে। তাই চাল বেশি পরিমাণে মজুত করতে হবে। এই জোড়া সমস্যার সমাধানে বুধবার নরেন্দ্র মোদী সরকার ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য(এমএসপি) প্রতি কুইন্টালে ১০০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল। চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্যান্য খরিফ ফসলের এমএসপি-ও যথেষ্ট মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতে, কৃষক হিতে এই সিদ্ধান্ত। এমএসপি বৃদ্ধির ফলে বাজারে আবার মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়বে বলে আশঙ্কা।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বুধবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২২-২৩ খরিফ মরসুমে ধানের এমএসপি কুইন্টাল প্রতি ৩,৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪,৩০০ টাকা করা হবে। অড়হর, মুগ ডাল, সোয়াবিন, বাদাম, সূর্যমুখীর মতো তৈলবীজের এমএসপি-ও যথেষ্ট বেড়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে বিষয়টি নিয়ে নিয়ে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কৃষক স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে মোদীর টুইট, ‘দেশের সেবায় নিয়োজিত আমাদের কৃষক ভাই-বোনেদের স্বার্থে বুধবার সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খরিফ ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত দেশের কোটি কোটি কৃষকের উপকার করবে’। কৃষি মন্ত্রকের দাবি, চালের তুলনায় ডাল, তৈলবীজের এমএসপি বেশি বাড়ায় চাষিরা অন্যান্য ফসল বেশি চাষ করায় উৎসাহ পাবেন। যেখানে ভূগর্ভস্থ জল অনেক কম খরচ হয়।
বাস্তব হল, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহণের খরচ বেড়েছে, বেড়েছে বিদ্যুতের মাসুল, কীটনাশকের দামও— ফলে কৃষির খরচ ও মূল্য কমিশন চাষের খরচ হিসাব করে এমএসপি বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। খরিফ মরসুমে চাল বেশি পরিমাণে কিনে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। তাই চালের সরকারি মূল্য বাড়ানো হয়েছে।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সরকারি গুদামে গম মাত্র ৩০৯.৪ লক্ষ টন মজুত রয়েছে। ন্যূনতম মজুতের পরিমাণ ২৪৫.৮ লক্ষ টনের থেকে বেশি। কিন্তু সার্বিক ভাবে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ কমেছে। সরকারি গুদামে জুনের গোড়ায় মোট ৬৩৪.৭ লক্ষ টন খাদ্যশস্য মজুত ছিল। যেখানে এক বছর আগে এই সময় খাদ্যশস্য মজুত ছিল ৯০২.১ লক্ষ টন। এমনিতেই, তাপপ্রবাহের ফলে এ বছর গম উৎপাদন মার খেয়েছে। তার উপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে রফতানিকারীরা চাষিদের থেকে বেশি দামে গম কিনেছে। পরে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও সরকার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে গম কিনেছে। এই পরিস্থিতিতে মোট খাদ্যশস্যের পরিমাণ বাড়াতে আগামী ১ জুলাইতে খাদ্য নিগম চাল মজুতের পরিমাণ ২৩০ থেকে ৩০০ লক্ষ টনে নিয়ে যেতে চাইছে।
কিন্তু এমএসপি বাড়ানোর ফলে মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চাঁদ বলেছিলেন, এমএসপি এক সঙ্গে অনেকখানি বাড়ালে, তার ধাক্কা মূল্যবৃদ্ধিতে লাগতে পারে। এপ্রিলে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ১৫.০৮% ছিল। যা গত ১৭ বছরে সর্বোচ্চ। এপ্রিল ও মে— দুই মাসেই খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হারের থেকে বেশি ছিল। মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে বুধবার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ফের এক দফা সুদের হার বাড়িয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে, খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.৭ শতাংশে পৌঁছবে। সাধারণত এমএসপি এক মরসুম থেকে আরেক মরসুমে ১ থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়ে। এ বার ধান থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমএসপি বেড়েছে প্রায় ৫ থেকে ৯ শতাংশের মতো। এর ধাক্কায় মূল্যবৃদ্ধি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদবের অবশ্য যুক্তি, “বাস্তবে এমএসপি কমে গিয়েছে। কারণ, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক যখন বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.৭% পূর্বাভাস দিয়েছে, তখন ১৪টি খরিফ ফসলের মধ্যে ১১টিতেই এমএসপি বৃদ্ধির হার তার থেকে কম। যার অর্থ, বাস্তবে এমএসপি কমেছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy