ছেলে মনজিৎকে জড়িয়ে ধরে চুমু বাবার। পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্করসিংহ ধামী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিংহ। ছবি: পিটিআই।
মঙ্গলবার রাত প্রায় ৮টা। উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে একে একে বেরিয়ে আসছেন শ্রমিকেরা। বাইরে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজন। মনজিৎ চৌধুরীকে সুড়ঙ্গ থেকে বার হতে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি তাঁর বাবা। ছেলেকে জড়িয়ে কপালে চুমু খান তিনি। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমে। ছবিতে দেখা গিয়েছে, বাবা-ছেলেকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে দেখে চলেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্করসিংহ ধামী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিংহ। ছেলেকে এক বার দেখবেন বলে স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে ছুটে এসেছেন চৌধুরী।
১২ নভেম্বর সকালে প্রথম খবরটা পেয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির চৌধুরী পরিবার। উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছেন ৪১ জন শ্রমিক। সে দিন ছিল দীপাবলি। গোটা গ্রাম আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠেছিল। কিন্তু চৌধুরীদের বাড়ির সব আলো নিভে গিয়েছিল। বড় ছেলেকে মুম্বইয়ে একটি নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় হারিয়েছিলেন। এ বার কি তবে ছোট ছেলেও...! ভেঙে পড়েছিলেন চৌধুরী দম্পতি। এ দিকে উত্তরকাশীর ঘটনাস্থলে যে যাবেন, সেই টাকা ছিল না। অগত্যা স্ত্রীর গয়না বন্ধক রাখেন ৫০ বছরের চৌধুরী। ৯০০০ টাকা মেলে। সেই টাকা পকেটে নিয়ে ট্রেনে চেপে বসেন। ৬০০ কিলোমিটার দূরত্ব পার করে উত্তরকাশীতে এসে পৌঁছন। সেই থেকে সুড়ঙ্গের বাইরে কেটেছে দিন-রাত।
১৭ দিনে দু’চোখের পাতা নিশ্চিন্তে এক করতে পারেননি চৌধুরী। পাছে ছেলে সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসেন। বা যদি কোনও খারাপ খবর আসে। এ ভাবেই কেটেছে দিনের পর দিন। খরচ হয়েছে গয়না বন্ধক রেখে আনা টাকা। শেষ পর্যন্ত পকেটে পড়েছিল ২৯০ টাকা। ভেবেছিলেন না খেয়ে কাটিয়ে দেবেন বাকি দিনগুলো। তবু ছেলেটা তো ফিরুক, এই ছিল প্রার্থনা। ঈশ্বর হেসেছেন। মঙ্গলবার রাতে সুস্থ ভাবে সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসেন মনজিৎ। তাঁকে দেখেই ভেঙে পড়েন চৌধুরী। বলেন, ‘‘আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’’ সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে বাবার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন মনজিৎ। কী আশীর্বাদ দিলেন তিনি? সংবাদমাধ্যমকে বাবা জানান, ছেলেকে দীর্ঘায়ু হওয়ার আশীর্বাদ করেছেন। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, আর কোনও দিন সুড়ঙ্গে কাজ করতে যেতে হবে না। আর ছেলে কী বলেছেন? চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমি বলেছি, আর যেতে হবে না। ও বোধ হয় শুনবে না। আবার যেতে চাইবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy