বৈঠকে ‘ইয়েস/নো’ প্ল্যাকার্ড হাতে কৃষক নেতারা। পিটিআই
বৈঠক চলছে। তার মধ্যেই কৃষক সংগঠনের নেতারা ‘মৌনব্রত’ নিলেন। দর কষাকষি অনেক হয়েছে। এ বার মোদী সরকার স্পষ্ট জবাব দিক, তিন কৃষি আইন কি প্রত্যাহার করা হবে? হ্যাঁ, কি না?
কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর, খাদ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বারবার কৃষক নেতাদের সঙ্গে কথা চালানোর চেষ্টা করছেন। কাকুতি-মিনতি করছেন। বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিন-তিনটি আইন সংসদে পাশ হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সই হয়ে আইন জারি হয়েছে। এখন সে সব প্রত্যাহার করে নিলে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। কিন্তু কৃষক নেতারা মুখ খুলতেই নারাজ। তাঁদের হাতে প্ল্যাকার্ড, ‘ইয়েস অর নো? নো চর্চা’।
টানা বিশ মিনিট এ ভাবেই কাটল। ডিসেম্বরের শীতেও কৃষি মন্ত্রকের আমলাদের কপালে তখন ঘাম জমতে শুরু করেছে। পীযূষ বারবার উঠে গিয়ে অমিত শাহকে ফোন করছেন। তোমর কৃষি মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বসেছেন। কারণ, কৃষক নেতারা মৌনী হওয়ার আগে বলে দিয়েছেন, আইন প্রত্যাহার করতে না-চাইলে, সরকার বলে দিক। শুধু ‘অর্থহীন’ আলোচনায় সময় নষ্ট হচ্ছে। তাঁরা আর বৈঠকে বসতে চান না।
হাল ছেড়ে মন্ত্রীরা অনুরোধ জানালেন, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে। আগামী সপ্তাহে ফের বৈঠক হোক। সেখানে সরকার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জানাবে।
শুধু এই বিশ মিনিট নয়। শনিবার দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোদী সরকারকে কার্যত নাকানি-চোবানি খাওয়ালেন কৃষক নেতারা। যার পরে সরকারি আমলারা বলছেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে এক পক্ষ মৌনব্রত নিয়ে বসে রয়েছেন, ‘হ্যাঁ’ না ‘না’-এর বাইরে কিছু শুনতে চাইছেন না, এমন অভিজ্ঞতা বিরল।
কৃষি আইন নিয়ে বিক্ষুব্ধ কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে পঞ্চম বৈঠকের আগে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, তোমর এবং গয়ালের বৈঠক হয়। বৈঠকে সমাধানসূত্র মিলবে বলে মন্ত্রীরা আশাবাদীও ছিলেন। কিন্তু কৃষক নেতারা আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন, অম্বানী-আদানিদের মতো শিল্পপতিদের চাপেই মোদী কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে চাইছেন না।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকেও সমাধানসূত্র বার করতে না-পেরে কেন্দ্র প্রস্তাব দেয়, আবার ৭ তারিখ বৈঠক হোক। কিন্তু কৃষক নেতারা সায় দেননি। ৯ ডিসেম্বর বৈঠক হবে বলে ঠিক হয়। কৃষক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই ৮ ডিসেম্বর ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে। কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, সে দিন সমস্ত জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হবে। পাশাপাশি, দিল্লি ঘেরাও করে কৃষকদের আন্দোলন যেমন চলছে, তেমনই চলবে। চাষিরা দরকারে এক বছর বসে থাকবেন। সঙ্গে এক বছরের রেশন রয়েছে। সরকার গোয়েন্দা লাগিয়ে খোঁজ নিতে পারে।
কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারে মোদী সরকার তিনটি আইন এনেছিল। আজ সরকার জানায়, তাঁরা তিনটি সংশোধন করতে তৈরি। এক, কর্পোরেট সংস্থার বিরুদ্ধে চাষিদের নালিশ জানানোর জন্য বিচারবিভাগীয় ট্রাইবুনাল তৈরি হবে। দুই, কৃষিপণ্য বাজার কমিটি (এপিএমসি)-র আওতায় থাকা মান্ডির মতো বেসরকারি মান্ডিতেও একই রকম কর বসানো হবে। তিন, এপিএমসি-র বাইরে ফসল কিনতে হলে ব্যবসায়ী, কর্পোরেট সংস্থাকে নামধাম নথিভুক্ত করতে হবে।
মন্ত্রীরা জানান, সরকার ফসলের ন্যূনতম দাম বা এমএসপি ও সরকার কর্তৃক ফসল কেনার বিষয়ে লিখিত গ্যারান্টি দিতে তাঁরা তৈরি। দিল্লিতে দূষণ রুখতে আশপাশের রাজ্যে নাড়া পোড়ানোর জন্য কৃষকদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, তাতে সংশোধন করা হবে। বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিলে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তাতেও সংশোধন করা হবে। কিন্তু চিঁড়ে ভেজেনি।
এর আগে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে কৃষক নেতারা বিজ্ঞান ভবনের বৈঠকে সরকারের দেওয়া চা-জলখাবার ছোঁননি। আজ তাঁরা সঙ্গে করে জলও নিয়ে এসেছিলেন। নেতারা জানিয়ে দেন, তাঁরা মোদী সরকারের জল স্পর্শও করবেন না। বৈঠকের মধ্যে বিরতিতে কৃষক নেতাদের জন্য শিখ গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি থেকে চা-খাবার পাঠানো হয়।
এ দিন পঞ্জাবের বিজেপি নেতা সুরজিৎ জয়ানি, হরজিৎ গ্রেওয়াল বৈঠকে হাজির ছিলেন। কৃষক নেতা রুলদু সিংহ মানসা কটাক্ষ করে বলেন, জয়ানিরা মন্ত্রীদের কথা চিনির প্রলেপ লাগিয়ে হাজির করছেন। উত্তেজনা চরমে ওঠে। কৃষকদের শান্ত করতে মন্ত্রীরা জানান, নাড়া পোড়ানোর জন্য চাষিদের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছে, সেগুলি প্রত্যাহার করা হবে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও তুলে নেওয়া হবে। এক কৃষক নেতা বলেন, ‘‘মন্ত্রীরা কার্যত কাকুতি-মিনতি করে জানিয়েছেন, আইন প্রত্যাহার ছাড়া সবেতে রাজি। সংসদে বিরোধীদের আপত্তিতে কান না-দিয়ে সরকার এই সব বিল পাশ করিয়েছে। তার আগে অধ্যাদেশ জারি করেছে। এর পরে আইন প্রত্যাহার করলে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু আমরা বলেয়েছি, আইন প্রত্যাহারের লিখিত প্রতিশ্রুতি চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy