গাজ়িপুর সীমানার দিকে চলেছে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিল। বৃহস্পতিবার গৌতমবুদ্ধ নগরে। পিটিআই
তিন ‘বিতর্কিত’ কৃষি আইন জারি করা বা না-করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রাজ্য সরকারের উপরে ছেড়ে দিতে পারে মোদী সরকার। কোনও রাজ্যের সরকার চাইলে সেই রাজ্যে তিন কৃষি আইন রূপায়ণ না-ও করতে পারে। শুক্রবার কৃষক নেতাদের সঙ্গে অষ্টম রাউন্ডের বৈঠকে বসার ২৪ ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার কেন্দ্র এই নতুন প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তবে খাতায়-কলমে সরকারি ভাবে নয়। মৌখিক ভাবে, বেসরকারি দূতের মাধ্যমে।
আজ কৃষক সংগঠনগুলি দিল্লিকে ঘিরে বিশাল ট্র্যাক্টর মিছিল করে ‘শক্তি প্রদর্শন’ করেছে। কৃষক নেতাদের বক্তব্য, আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ট্র্যাক্টর প্যারেড হবে। এ দিন শুধু তার মহড়াটুকু হল। মহড়ার জেরে দিল্লির সীমানায় ইস্টার্ন ও ওয়েস্টার্ন পেরিফেরাল এক্সপ্রেসওয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার ট্রাক্টরের দখলে চলে গিয়েছে।
বিকেলে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর শিখ ধর্মগুরু বাবা লাখি সিংহর সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, তাঁর মাধ্যমেই কৃষক সংগঠনগুলির কাছে বেসরকারি ভাবে সরকারের নতুন প্রস্তাব পাঠিয়ে দেন তোমর। এই নতুন প্রস্তাব শুনে কৃষক নেতাদের বক্তব্য, ৪৩ দিন ধরে আন্দোলনের পরেও সরকার গোটা বিষয়টা নিয়ে ছেলেখেলা করছে। কৃষক নেতা রুলডু সিংহ বলেন, “তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করা ছাড়া অন্য কোনও প্রস্তাব মানা হবে না। কৃষি এমনিতেই রাজ্যের বিষয়। কেন্দ্র রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে আইন তৈরি করেছে। এখন আবার রাজ্যের অধিকারের এলাকাতেই রাজ্যকে ক্ষমতা দিতে চাইছে। এতো সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে নিয়ে প্রহসন।”
আর এক কৃষক নেতা হরমিত সিংহ কাড়িয়া বলেন, “রাজ্যের এমনিতেই কৃষি আইন তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। একাধিক অ-বিজেপি রাজ্য ইতিমধ্যেই এই আইন রূপায়ণ না-করার বিষয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করেছে। এখন কেন্দ্র রাজ্যের হাতে বিষয়টা ছেড়ে দিচ্ছে। পাঁচ থেকে ছ’মাস পরে আবার কেন্দ্র বলবে, কৃষি সংস্কার না-মানলে অর্থ মিলবে না। পাঁচ-ছয় মাস পরে তো ফের আন্দোলন করতে পারব না!”
আচমকা শিখ ধর্মগুরু বাবা লাখি সিংহকে দিয়ে এই বার্তা পাঠানো নিয়েও কৃষক নেতারা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, এই ধর্মগুরুর সঙ্গে আন্দোলনের সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া শিখদের মধ্যে অধিকাংশই তাঁকে ‘শিখ ধর্ম-বিরোধী’ বলে মনে করেন। কারণ, তিনি নিজেকে গুরু নানকের অবতার বলে দাবি করেন।
কেন্দ্রের নয়া প্রস্তাবে কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে বিভাজনের চেষ্টাও রয়েছে বলে কৃষক নেতাদের মত। তাঁদের যুক্তি, কেন্দ্র দেখাতে চায়, সব রাজ্যের কৃষকের এতে সমস্যা নেই। যে সব রাজ্যে সমস্যা, সেখানকার সরকার মনে করলে আইন রূপায়ণ করবে না। স্বরাজ ইন্ডিয়া-র প্রধান যোগেন্দ্র যাদব বলেন, “আমরা গোটা বিষয়টাকে একটা রাজ্যের সমস্যা হিসেবে দেখিয়ে রাজ্যের মধ্যে বিভাজনেরও বিরুদ্ধে।”
শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে কৃষক নেতাদের বৈঠকের আগে আজ পঞ্জাবের বিজেপি নেতারা সকালে রাজনাথ সিংহ, সন্ধ্যায় অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর আগে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। পঞ্জাবে বিজেপি নেতাদের প্রায় রোজই কৃষকদের অবরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে। কেন্দ্র তাঁদের মধ্যস্থ হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু তাঁরা কার্যত কৃষকদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা সুরজিৎ সিংহ জিয়ানির অভিযোগ, কৃষক নেতারা ‘রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ থেকে আন্দোলন চালাচ্ছেন। পঞ্জাবের ৩২টি সংগঠনের নেতারা কেউ কারও কথা শুনছে না বলেও তাঁর অভিযোগ। সেই যুক্তিতে আন্দোলনের রাশ কারও হাতে নেই বলে দাবি জিয়ানির। আর এক বিজেপি নেতা হরজিত গ্রেওয়ালের প্রশ্ন— নকশালপন্থী একটি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী গোষ্ঠীর নেতা যোগেন্দ্র সিংহ উগ্রহণ, সিপিএমের হান্নান মোল্লাদের কেন কৃষক নেতাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে?
জবাবে কৃষক নেতা জগমোহন সিংহ বলেন, “এই অপ্রপ্রচারে লাভ হবে না।” কৃষক নেতাদের চ্যালেঞ্জ, বিজেপি নেতারা পঞ্জাবে গিয়ে সভা করে চাষিদের কৃষি আইনের উপকারিতা বুঝিয়ে আসুন।
এ দিকে, সরকারের তিন অফিসারকে সিংঘু পাঠিয়ে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ কৃষকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। পঞ্জাব সরকারের বক্তব্য, রাজ্যে কৃষকদের অবরোধ ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে চলছে। এতে কৃষকদের হেনস্থা নয়, রাজ্যেরও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। অবশ্য আপের অভিযোগ, অমরেন্দ্রর পুত্রর বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত করছে, তাই তিনি অমিত শাহের কথায় আন্দোলন তুলতে নেমেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy