করোনা-বিধি অমান্য করে রাজ্যসভার ওয়েলে স্লোগান। ছবি: পিটিআই।
অশান্তির আশঙ্কা ছিল। রবিবার রাজ্যসভার অধিবেশনে তা মিলেও গেল। বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদের উচ্চকক্ষে ধ্বনিভোটে পাশ করিয়ে নিল কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত দু’টি বিতর্কিত বিল।
করোনা আবহের মধ্যেও এদিন সামাজিক দূরত্ব-বিধি কার্যত শিকেয় তুলে ওয়েলে নেমে, চেয়ারম্যানের আসনের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদরা। ‘জবাবে’ জড়ো হয়ে বিলের পক্ষে স্লোগান দেন সরকারপক্ষের সদস্যেরাও। সে সময় সভা পরিচালনা করছিলেন ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ কয়েকজন বিরোধী সাংসদকে তাঁর আসনের সামনে গিয়ে কাগজপত্র ও মাইক টানাটানি করতে দেখা যায়। প্রসঙ্গত, বাদল অধিবেশন শুরুর আগেই সাংসদদের ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানোয় বিধিনিষেধ জারি হয়েছিল।
শুধু সংসদের অন্দরে নয়, রাজধানী দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এদিন কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত তিনটি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এ সংক্রান্ত তিনটি বিলে কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বড় ব্যবসায়ী এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে একতরফা ভাবে ফসলের দাম নির্ধারণ এবং মজুতদারির অধিকার দেওয়া হয়েছে।
যদিও এদিন সকালে বিরোধীদের তুমুল প্রতিবাদের মধ্যে রাজ্যসভায় বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় কৃষি উন্নয়ন, কৃষক কল্যাণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বলেন, ‘‘কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার পথে এই বিল কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।’’ বিল পাশ হওয়ার পরে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোজীজির নেতৃত্বে ভারতীয় কৃষকেরা ৭০ বছরের বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেলেন।’’
অন্যদিকে, কংগ্রেসের অভিযোগ, এই বিল আসলে ‘কৃষকদের মৃত্যু পরোয়ানা’। বিতর্কে অংশ নিয়ে রাজ্যসভার ডিএমকে সাংসদ টি কে এস ইলানগোভানের মন্তব্য, ‘‘ওই কৃষি বিল ফের চাষিদের ক্রীতদাসে পরিণত করবে।’’ এমনকী, বিজেপির সবচেয়ে পুরনো সহযোগী শিরোমণি অকালি দলের সাংসদ নরেশ গুজরাল কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘‘পঞ্জাবের কৃষতদের দুর্বল ভাবার ভুল করবেন না। তাঁরা এই কৃষক-বিরোধী বিল মেনে নেবেন না।’’
বস্তুত, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান-সহ বিভিন্ন রাজ্যে এদিন সকাল থেকেই কৃষি সংস্কার বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন চাষিরা। উত্তর ভারতের প্রভাবশালী কৃষক সংগঠন ‘ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন’ এদিন দুপুর ১২টা থেকে তিন ঘণ্টার পথ অবরোধ আন্দোলন শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: কৃষি সংস্কার নিয়ে মনকষাকষি, চাপের মুখে পদত্যাগ হরসিমরতের
‘অত্যাবশ্যক পণ্য আইন’ সংশোধন, ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ সংক্রান্ত বিল তিনটি ইতিমধ্যেই লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে। এ দিন ‘কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছে রাজ্যসভায়।
শুধু বিরোধী নয়, বৃহস্পতিবার লোকসভায় কৃষি বিলের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন অকালি দলের প্রধান প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্রবধূ হরসিমরত কউর। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফাও দেন তিনি। হরিয়ানায় বিজেপির সহযোগী জেজেপি’ও বিলের বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কৃষি বিল নিয়ে মিথ্যা প্রচার চলছে’, মোদীর নিশানায় বিরোধীরা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার কৃষি বিল প্রসঙ্গে বিরোধীদের নিশানা করে বলেন, “মিথ্যে প্রচার চালানো হচ্ছে যে, সরকারি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) মিলবে না।’’ এর পরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম শনিবার প্রশ্ন তোলেন— চাষিরা সরকারি মন্ডির বাইরে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে ফসল বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা তার চেয়ে বেশি দরে ফসল কিনতে বাধ্য থাকবেন, এমন কোনও শর্তের কথা বিলে নেই কেন? এদিন বিতর্কে সেই প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়েই রাজ্যসভায় শক্তি পরীক্ষায় উতরে গেল সরকার পক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy